আগামী বছরের ২ মার্চের পর থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২০২৬ সালে হালনাগাদকৃত এসব ভোটার নতুন ভোটার হিসেবে যুক্ত হবেন। এদিকে ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবেই নির্বাচন কমিশনের সংগ্রহে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে আগামী জানুয়ারির ২ তারিখ থেকে মার্চের ২ তারিখের মধ্যে ভোটার তালিকার খসড়া ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রথম কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের তথ্য জানান।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এম এম নাসির উদ্দীনের সভাপতিত্বে নতুন ইসির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবদুর রহমানেল মাসুদ, তহমিদা আহমদ ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠক শেষে কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সামরিকদের বলেন, নতুন ভোটার হিসেবে যুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের কাছে ১৭ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহে রয়েছে। এসব নাগরিক আগামী ১ জানুয়ারি ভোটার তালিকায় যুক্ত হবে। এই ১৭ লাখ নাগরিকের মধ্যে ১৩ লাখের তথ্য নির্বাচন কমিশন ২২ সালে সংগ্রহ করেছিল। বাকি নাগরিকরা নিজেরা নিবন্ধিত হয়েছেন। তবে পরিসংখ্যান বলে ৪৫ লাখের মতো নাগরিকের নতুন ভোটার হিসেবে যুক্ত হওয়ার কথা। সেই হিসাবে ২৭-২৮ লাখ নাগরিক নিবন্ধিত হননি। কিন্তু তারা ভোটার হওয়ার যোগ্য। এ কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- নতুন বছরের হালনাগাদ ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এরপর আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবো। তিনি বলেন, বাদ পড়া এসব নাগরিকসহ ২০২৬ সালে ভোটার হওয়ার উপযুক্ত হবেন এমন নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। একইসঙ্গে যেসব ভোটার মৃত্যুবরণ করেছে— তাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য তথ্য নেয়া হবে। এছাড়া দ্বৈত ভোটার বা অন্য কোনও জটিলতা আছে কি না, সে বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এর মাধ্যমে আমরা শুদ্ধ এবং পূর্ণাঙ্গ তথ্যের ভিত্তিতে শতভাগ সঠিকতা নিশ্চিত করতে পারব। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ৬ মাসের মতো সময় লাগবে বলে এই কমিশনার জানান। এদিন নির্বাচন কমিশনের চার কমিশনারকে প্রধান করে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা, নির্বাচন ব্যস্থাপনা তথ্য প্রযুক্তি প্রয়োগ কমিটির প্রধান করা হয়েছে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহকে। আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটির দায়িত্ব আবদুর রহমান মাসুদকে দেওয়া হয়।
সীমানা পুনর্নির্ধারণ, জাতীয়-স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রস্তুতি ভোট কেন্দ্র স্থাপন, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও তদারকি কমিটির প্রধান হয়েছেন আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। আর নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশাসনিক সংস্কার এবং পুনর্বিন্যাস ও দক্ষতা উন্নয়ন সংক্রান্ত কমিটির প্রধান বেগম তহমিদা আহমদকে করা হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গঠিত কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে। এরপর নতুন কমিশন গঠনে আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। সার্চ কমিটি প্রস্তাবিত তালিকা থেকে পাঁচজনকে বেছে নিয়ে গত ২১ নভেম্বর নতুন এই কমিশন গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ২৪ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্ট জাজেজ লাউঞ্জে নাসির উদ্দীন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে শপথ পড়ান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।