বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করছে ভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়া। এতে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশনগুলো টার্গেট করে হামলা করছে উগ্রবাদী হিন্দু সম্প্রদায়। গত সোমবার ত্রিপুরার আগরতলায় কিছু উগ্রবাদী লোক বাংলাদেশ মিশনের ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা দূতাবাসে হামলা চালায়। বাংলাদেশ-ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করছেন সাবেক কূটনীতিকরা।
কূটনীতিকরা মনে করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর ভারতে পালিয়ে গেছেন। ভারতে থেকেই বাংলাদেশে শান্তি বিনষ্ঠের উসকানিমূলক বক্তব্যের পাশাপাশি নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতীয় প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের বিষয়টি কোন গোপনীয় নয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দুই দেশের সম্পর্কের রসায়ন ভিন্ন হয়ে গেছে। ভারতের সরকার, মিডিয়া, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশবিরোধী নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ভারত শেখ হাসিনার সরকারকে সর্বত্র সহায়তা দেওয়ার পরও ক্ষমতায় রাখা সম্ভব হয়নি, এটি হয়তো তাদের মনঃকষ্টের কারণ হতে পারে। আরেকটি বিষয়, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। সেখানে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালানো হলে ভারতীয় রাজনীতিতে কিছু সুবিধা পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে একটি পিটিশন দাখিলের জন্য গত সোমবার ত্রিপুরায় বাংলাদেশ মিশনে যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু উগ্রবাদী লোক। উত্তেজিত এই লোকেরা ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং মিশনের ক্ষতি করে। পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই তারা ক্ষতি করে বসে।
গত সোমবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের জাফরপাড়ার বাবনপুর গ্রামে গিয়ে সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত এবং তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচারের বিপরীতে সত্য তুল ধরার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়নি। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মিডিয়া আমাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপক অপপ্রচার ও মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনৈতিকদের ব্রিফিংয়ের পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। গণমাধ্যমের একটি অংশ, বিশেষ করে ভারতের গণমাধ্যম, এই প্রচারণায় জড়িত। আমরা বলেছি, আমাদের সমাজ বরাবরই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে এসেছে। আমরা বলছি না যে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। কিন্তু, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং সব সরকারের আমলেই কমবেশি ঘটে থাকে।
এ বিষয়ে দিল্লি থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণ ভাঙার ঘটনাটি গভীরভাবে দুঃখজনক। কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার সম্পত্তি কোনও অবস্থাতেই লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং সে দেশে বাংলাদেশের অন্যান্য ডেপুটি বা সহকারী হাইকমিশনের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার জন্য ভারত সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ছাড়াও ত্রিপুরা, আসাম, মুম্বাই ও চেন্নাইতে বাংলাদেশের উপ ও সহকারী হাইকমিশন রয়েছে। পাঁচটি মিশনের মধ্যে তিনটি এরই মধ্যে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের বর্তমান নীতি তাদের জাতীয় স্বার্থ কতটুকু রক্ষা করছে এটি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।