অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ
ভারতকে উড়িয়ে শিরোপা অক্ষুণ্ণ বাংলাদেশের
প্রধান উপদেষ্টা ও ক্রীড়া উপদেষ্টার অভিনন্দন
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রীড়া প্রতিবেদক
দুবাই যেন দু’হাত ভরে দিচ্ছে বাংলাদেশের যুবাদের। গত বছর এই দুবাই থেকেই অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা নিয়ে দেশে ফিরেছিল টাইগার জুনিয়ররা। মঞ্চ এক হলেও এবার প্রতিপক্ষ ভিন্ন। আগেরবার সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে প্রথমবার এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল তারা। এবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। সে কারণে একটু সংশয় ছিল। তাছাড়া জুলাইয়ে ছাত্র জনতার বিপ্লবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে খানিকটা উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে সেসব পাত্তা না দিয়ে আরো একবার মরুর বুকে লাল-সবুজের বিজয় পতাকা উড়াল আজিজুল হাকিম তামিমরা। গতকাল রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ভারতকে ৫৯ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার এশিয়া সেরা হলো বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.১ ওভারে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ১৯৮ রান সংগ্রহ করে যুব টাইগাররা। জবাবে ১৯৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩৫.১ ওভারে ১৩৯ রান তুলতে সক্ষম হয় ভারত। শুরু থেকেই দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন যুব টাইগাররা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আসে সাফল্য। আইয়ুস মার্থেকে (১) বোল্ড করে ওপেনিং জুটি ভাঙেন আল ফাহাদ। তাতে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় ভারত। পঞ্চম ওভারে মারুফ মৃধাকে দুটি বাউন্ডারি মেরে পাল্টা আঘাত হানতে চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার ভাইভাব সুরিয়াবানশি (৯)। তবে আরো একটি মারতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন। গ্যালিতে শিহাব জেমসের হাতে ক্যাচ দিয়ে সেই ওভারেই ফিরে আসেন তিনি। তিন নম্বরে নামা আন্দ্রে সিদ্ধার্থ সেট হয়ে গিয়েছিলেন। ৩৫ বলে ২০ রানও করেন। তবে বড় ক্ষতি করার আগে তাকে বোল্ড করে দিয়ে সাজঘরের পথ দেখান রিজান হোসেন। টপ অর্ডারের তিন উইকেট তুলে তখন ভারতীয়দের চেপে ধরে বাংলাদেশ।
এরপর কেপি কার্থিকেয়াকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন ভারতীয় অধিনায়ক মোহামেদ আমান। ২৯ রানের জুটিও গড়েন তারা। তবে ১৩তম ওভারের এই জুটি ভাঙার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। দুই প্রান্তেই রানআউট করার সুযোগ নষ্ট করেন বোলার ইকবাল হোসেন ইমন ও উইকেটরক্ষক ফরিদ হাসান। পরের ওভারে ভারতীয় ব্যাটারদের সঙ্গে তর্কেও জড়িয়ে পড়েন টাইগাররা। তাতে উত্তেজনা বাড়ে ম্যাচে। কার্থিকেয়া দুটি বাউন্ডারি মেরে মোমেন্টাম ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালান। তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। ২১তম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে এনে দেন ইমন। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা কার্থিকেয়াকে উইকেটরক্ষক ফরিদের ক্যাচে পরিণত করে ভাঙেন জুটি। ২১ রান আসে কার্থিকেয়ার ব্যাট থেকে। এক বল নিখিল কুমারকেও (০) একইভাবে ফেরান ইমন। তাতে বিপদেই পড়ে যায় ভারত। পরের ওভারে ফিরে সেই বিপদ আরো বাড়ান ইমন। এবার ফেরান হারভানশ পাঙ্গালিয়াকে (৬)। তাকেও উইকেটরক্ষকের ক্যাচে পরিণত করেন এই পেসার। অবশ্য এক বল আগেই ফিরতে পারতেন। থার্ডম্যানে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন হারভানশ। তবে সে সুযোগ লুফে নিতে পারেননি রিজান। এরপর আল ফাহাদকে আক্রমণে ফিরিয়ে আনেন অধিনায়ক আজিজুল হাকিম। দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য পান তিনি। কিরান চোরমালেকে (১) উইকেটরক্ষকের ক্যাচে পরিণত করে লেজ বের করে আনেন ভারতের। তবে গলার কাঁটা হয়ে আটকে ছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক আমান। এক প্রান্ত আগলে রেখে আশা বাঁচিয়ে রাখেন তাদের। ৩২তম ওভারে বল হাতে নিয়েই তাকে ফেরান বাংলাদেশ অধিনায়ক আজিজুল। ব্যক্তিগত ২৬ রানে বোল্ড করে দেন আমানকে। তাতে জয় দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। নয় নম্বরে নামা হার্দিক রাজ উইকেটে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিং পাল্টা আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করেন। ২১ বলে ২৪ রানও করেন। বড় ক্ষতি করার আগে তাকেও ফেরান আজিজুল। এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তাকে। এরপর চেতন শর্মাকে (১০) ফিরিয়ে ভারতীয় ইনিংসের ইতি টানেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। লেগস্পিনার দেবাশিস দেবা ছাড়া বাংলাদেশের হয়ে সব বোলারই উইকেট পেয়েছেন। তবে উইকেট না পেলেও দারুণ বোলিং করেন দেবা। ২৪ রানের খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার ইমন। আজিজুলও নেন ৩টি করে উইকেট। এছাড়া দুটি শিকার আল ফাহাদের।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ১৭ রানে কালাম সিদ্দিকিকে হারায় বাংলাদেশ। একাদশ ওভারে ফেরেন থিতু হওয়া আরেক ওপেনার জাওয়াদ আবরার (২০)। অধিনায়ক আজিজুল হাকিম তামিম আগের ম্যাচগুলোতে দারুণ খেললেও এদিন ব্যর্থ। ২৮ বলে ১৬ রান করে তিনি ক্যাচ দিয়ে ফিরলে চাপে পড়ে দল। এরপর শিহাব-রিজান মিলে গড়েন প্রতিরোধ। চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ৬২ রান। দুজনেই ফেরেন অসময়ে। আয়ুশ হাটরের বলে ক্যাচ দিয়ে থামেন শিহাব। হার্দিক রাজের বলে বোল্ড হয়ে যান রিজান। দেবাশীষ দেবা, সাইমুন বাসির ব্যর্থ হলে দলকে এরপর টানেন ফরিদ। নবম উইকেটে মারুফ মৃধাকে নিয়ে যোগ করেন ৩১ রান। দলের হয়ে ৬৫ বলে ৩টি চারের সাহায্যে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেছেন রিজান। ৬৭ বলে ৩টি চারে ৪০ আসে শিহাবের ব্যাট থেকে। ১৬৭ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর টেল এন্ডারদের নিয়ে দলকে দুইশোর কাছে নিতে ৪৯ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন ফরিদ। তিনিও চার মারেন ৩টি।
যুব এশিয়া কাপের মোট দশ আসরে এতদিন একাধিকবার শিরোপা জয়ের রেকর্ড ছিল শুধু ভারতের। সর্বোচ্চ ৮বার শিরোপা জেতে তারা। পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথভাবে একবার ছিল। এছাড়া আফগানিস্তান জিতেছে একবার। সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারিয়ে শিরোপা অক্ষুণ্ণ রাখলো বাংলাদেশ।
প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন : দুবাইয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। গত বছর ফাইনালে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ১৯৫ রানে হারিয়ে প্রথমবার যুব এশিয়া কাপ জেতা বাংলাদেশ ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে টানা দ্বিতীয়বার এশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় তুলল। আজিজুল হাকিমরা গতকাল রোববার জিতেছে ৫৯ রানে। দ্বিতীয়বার যুব এশিয়া কাপ জয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এক অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেন, ‘বিজয়ের মাসে আন্তর্জাতিক বিজয়ের জন্য গর্বিত জাতির পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’ এদিন টসে হেরে ব্যাটিং পাওয়া বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ৪৯.১ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে করতে পেরেছিল ১৯৮ রান। এই রানটাই ভারতের জন্য পাহাড়সম হয়ে যায় বাংলাদেশের পেসারদের দাপটে। ভারত ৩৫.২ ওভারে অলআউট হয় ১৩৯ রানে। যুব এশিয়া কাপে ৯ বার ফাইনাল খেলে এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়নের ট্রফি হাতে নিতে পারল না ভারতীয়রা।
ক্রীড়া উপদেষ্টার অভিনন্দন : দুবাই অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। এ সাফল্যে লাল সবুজের যুবাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। অভিনন্দন বার্তায় যুবারা সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে এবং বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে বলে আসা ব্যক্ত করেন তিনি। উল্লেখ্য, দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠায় ভারত। বাংলাদেশ ৪৯.১ ওভারে ১৯৮ রান করে অলআউট হয়। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মুখে কোণঠাসা হয়ে ভারত নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ৩৫.২ ওভারে ১৩৯ রানে অলআউট হলো ভারতীয় যুব ক্রিকেট দল। ভারতকে ৫৯ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশের যুবারা। ২০২৩ সালে এই স্টেডিয়ামেই স্বাগতিক আরব আমিরাতকে হারিয়ে যুব এশিয়া কাপ ক্রিকেটে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ।