বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীমউদ্দিন এবং ভারতের পক্ষে বিক্রম মিসরি। ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে বিভিন্ন ইস্যুতে যখন টানাপড়েন চলছে, ঠিক সেই মুহূর্তে দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠকটি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। সব ঠিক থাকলে এটিই হবে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতীয় কোনো সিনিয়র কর্মকর্তার প্রথম ঢাকা সফর।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের এই সফরের দুই দেশের সম্পর্কের বরফ গলতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা এমনটি ধারণা করছেন।
গত বছর ২৪ নভেম্বর দিল্লিতে দুই দেশের মধ্যে এফওসি বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা। তবে এক বছরের ব্যবধানে দুই দেশেরই পররাষ্ট্র সচিব পরিবর্তন হয়েছে। এবার ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য হচ্ছে এফওসি বৈঠক।
ঢাকা-দিল্লির এফওসিতে বেশ কয়েকটি বিষয় আলোচনায় উঠতে পারে। বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যম এখন বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে। ঢাকার পক্ষ থেকে বিষয়টি উত্থাপন করা হতে পারে। এছাড়া ভারতে বাংলাদেশ মিশনে নিরাপত্তা, সীমান্ত হত্যা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নিত্যপণ্য আমদানি, ভিসা ইস্যু ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, এফওসিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে যত উপাদান আছে সব রাখার চেষ্টা করা হয়। আলোচ্যসূচি ঠিক করার ক্ষেত্রে দু’পক্ষের সম্মতিও লাগে। তবে সাধারণভাবে যেটা বলা যায়, বাণিজ্য আছে, কানেক্টিভিটি আছে, সীমান্ত আছে, পানি আছে। এসব আলোচনায় থাকবে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত চার মাসে দুদেশের তিনটি টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক হয়েছে। তবে এমন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়নি। এই বৈঠকের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েন অনেকটা প্রশমিত হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি, আমরা (ঢাকা-দিল্লি) স্বাভাবিক সম্পর্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। আর এফওসি হবে সেদিকে এগোনোর প্রথম পদক্ষেপ। এফওসির মধ্যে দিয়ে ঢাকা ও নয়াদিল্লি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে বাস্তবসম্মতভাবেই এগিয়ে যেতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সফর নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, এফওসির আলোচনার এজেন্ডায় যা-ই থাকুক, সব ধরনের উসকানি নিরসন করে উত্তেজনা কমিয়ে এনে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য এবারের এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।