ঢাকা ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্থানীয় সরকার নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের পক্ষে বদিউল আলম মজুমদার

স্থানীয় সরকার নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের পক্ষে বদিউল আলম মজুমদার

নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মুজমদার আশা করছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আবার সংবিধানে ফিরবে এবং জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনও এই সরকারই আয়োজন করবে। সেজন্য এই সরকারের মেয়াদ আগের মতো ৯০ দিনের চেয়ে বেশি সময় করার পক্ষে তিনি। গতকাল রোববার সকালে সংসদ সচিবালয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে স্থানীয় সরকারের সাবেক প্রতিনিধিদের মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। সভায় সিটি কর্পোরেশন পৌর সভার সাবেক মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে মত জানান। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে করা দুটি রিট আবেদনের ওপর আগামী ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট যে রায় দেবে, সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরবে বলে আশা করছেন বদিউল। তিনি বলেন, ‘আজকে মতবিনিময় সভায় অনেকেই বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা যেন বর্তমান যে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে করা হয়। অনেকেই প্রথমে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন তার পরে জাতীয় সরকারের নির্বাচন করার কথা বলেছেন।’ তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদটা একটু বাড়াতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকাকালীন যেন স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় এবং জাতীয় নির্বাচন হয়। যাতে সত্যিকারে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।’ ১৭ ডিসেম্বর রায়ের পরে আবার বসবেন বলেও জানান নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের মধ্যে ১৯৯৬ সালে সংবিধানে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংযোজন হয়, তার মেয়াদ ছিল ৯০ দিন। এই সরকার কোনো নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত না নিয়ে রুটিন কাজ করত এবং জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনেই হয়েছে।

সংস্কার শেষে নির্বাচন নাকি আগেই নির্বাচন- এমন প্রশ্নে বদিউল বলেন, ‘অধিকাংশই বলছে আমাদের স্থানীয় নির্বাচন শেষ করে তার পরে জাতীয় নির্বাচন। আমাদের কাজটা আমরা সততার সাথে নিষ্ঠার সাথে করে আসছি এবং আমরা এটা সময়মতই শেষ করতে চাই।’ আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রিপোর্ট রেডি।’ প্রতিবেদন জমা দেয়ার আগে আরো পরামর্শ করবেন কি না- জানতে চাইলে জবাব আসে, ‘আমরা এর মধ্যেও পরামর্শ নেব, আমরা আগের দিন (৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ আছে) পর্যন্ত নেব। ফেইসবুক, ই-মেইল, ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে অনেক তথ্য পাচ্ছি এবং সরকারিভাবে অনেককে মেসেজ পাঠানো হয়েছে আমরা অনেক সাড়া পাচ্ছি।’

স্থানীয় সরকার ‘নিয়ন্ত্রণমুক্ত’ রাখার সুপারিশ : মতবিনিময়ে স্থানীয় সরকারকে সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের ‘নিয়ন্ত্রণমুক্ত’ রাখার ওপর জোর দেয়া হয়েছে জানিয়ে বদিউল বলেন, ‘আমরা যাদের পরামর্শ পাচ্ছি, তারা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার কথা বলেছেন, কেউ কেউ বলেছেন আমাদের যে ‘কর্তৃত্ববাদী’ সরকার সৃষ্টি হয়েছিল, আমাদের এককেন্দ্রিক যে শাসনব্যবস্থা, ওখানে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা যদি শক্তিশালী হতো, তাহলে হয়তোবা কিছুটা ‘নিয়ন্ত্রণে’ রাখা যেত।’ স্থানীয় সরকারব্যবস্থা শক্তিশালী করার জোর দাবি এসেছে জানিয়ে সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘তারা স্থানীয় সরকারকে সংসদ সদস্য ও বিশেষত কর্মকর্তাদের ‘কর্তৃত্বমুক্ত’ করার কথা বলেছেন।

স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা স্থানীয় নেতা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি; তারা যেন মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বদিউল বলেন, তারা সুস্পষ্টভাবে আমাদের বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা নির্দলীয় হওয়া উচিত। সংসদীয় পদ্ধতির কথা অনেকে বলেছেন, এটার বিরোধিতা অনেকেই করেছেন। নারীদের বিষয়টা অনেকেই বলেছেন, কেউ কেউ বলেছেন নারীর প্রতিনিধিত্বটা অর্থবহ করতে হবে এবং সেটা যেন ভারতের পঞ্চায়েত যে রকম পদ্ধতি সেই রকম পদ্ধতিতে করার জন্য বলেছেন।

উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান না রাখার পরামর্শ এসেছে জানিয়ে বদিউল বলেন, কেউ কেউ বলেছেন অন্যভাবে নারীর প্রতিনিধিত্ব ও পুরুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য। সংসদের সুন্দর ভবনে যেন ‘অসুন্দর’ লোকজন প্রবেশ করতে না পারে এমন মতামতও এসেছে জানালেও এর কোনো ব্যাখ্যা দেননি নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান। প্রবাসীদের ভোটাধিকারে নিশ্চিতের দাবি ওঠার কথা জানিয়ে বদিউল বলেন, ‘সেটা নিয়ে আমাদের কথাবার্তা হচ্ছে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত