দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ঢেলে সাজাতে হলে এখানে সাঁড়াশি অভিযানের কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, দুদকে বৈষম্য এবং দুর্নীতি একটি স্বাভাবিকবিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি বিব্রত হয়েই বলছি, এই চিত্র এখনও আমাদের সামনে আছে। তাই প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজাতে সাঁড়াশি অভিযান ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তরুণদের স্বপ্নকে যদি আমাদের বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে এছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। গতকাল রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ মিলনায়তনের আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান তিনি এ কথা বলেন। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজরা রাষ্ট্র কাঠামো দখল করে রেখেছে, যাতে সব অন্যায় ও দুর্নীতি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত কর্তৃত্ববাদী সরকারের জন্ম হয়েছে। সংস্কার কাজ করতে গিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিসহ দুদক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র ধরা পড়েছে। এখন সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা ছাড়া উপায় নেই।
তিনি বলেন, আমরা এমন একটা সময় কথা বলছি যখন আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন বলতে কিছুই নেই। কারণ, তিনজন কমিশনার এরইমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। তাদের পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল, কারণ তারা অকার্য করছিল। আমরাও চেয়েছি এই কমিশন দিয়ে আর কাজ চলবে না। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকে একটি উভয় সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। দুদক এখন কাজ করছে না। ফলে এখনও ভয়াবহ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির খবর আমরা পাচ্ছি। এটি আমাদের বন্ধ করতে হবে। সংস্কার কমিশন প্রধান আরো বলেন, দুদক এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে কোনো সিদ্ধান্ত হয় না কমিশনার ছাড়া। কর্তৃত্ববাদী সরকারের যাদের বিরুদ্ধে দুদকের ব্যবস্থা নেয়ার কথা, আমাদের দুদক ছুটি নিতে পারছে না। দুর্নীতির যে বিষয়গুলো চলমান ছিল এখনো চলছে। কাজে আমাদের দ্রুততম সময়ে কমিশন গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন একা দুর্নীতি দমন করতে পারে না। এই কমিশন হতে হবে গ্লোবাল একটি কমিশন। তবে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন না হলে গ্লোবাল কমিশন করেও কোনো লাভ হবে না। এক্ষেত্রে আমাদের তরুণ প্রজন্ম যে চেতনা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই চেতনা যদি রাজনীতি আর আমলাতন্ত্রে প্রতিফলিত হয়, তাহলেই দেশ থেকে পরিপূর্ণরূপে দুর্নীতি বিতাড়িত করা সম্ভব।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তরুণরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু করেছিল, বৈষম্যের অন্তর্নিহিত একটি কারণ হলো দুর্নীতি। তারা সেটি উপলব্ধি করেই আন্দোলন শুরু করেছিল। এমনকি শেষ পর্যন্ত আমাদের ওপর যে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা চেপে বসেছিল, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে সেই কর্তৃত্ববাদীতার অবসান হয়েছে।
এই তরুণ প্রজন্ম আমাদের জন্য যে সম্ভাবনার দার উন্মুক্ত করেছে, সে আলোকে রাষ্ট্র সংস্কার এবং রাজনৈতিক সমঝোতার পথ আমাদের তৈরি করতে হবে। আমরা তরুণদের দেখানো পথেই দেশবাসীর প্রত্যাশা সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছি। এ সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, দেশের উন্নয়নে বড় বাধা দুর্নীতি, যা নিয়ন্ত্রণে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে। জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।