আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদোন্নতিবঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা ও যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপর উদ্যোগ নেয়া হয়। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আবেদন নেয়া হয়, করা হয় উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। সেই কমিটি আজ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, পদোন্নতি বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা কমিটি গতকাল মঙ্গলবার তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করেছেন। কমিটির প্রধান জাকির আহমেদ খান অন্য সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদনটি পেশ করেন। নির্ধারিত ৯০ দিনের আগেই প্রতিবেদন পেশ করায় কমিটির সদস্যদের প্রধান উপদেষ্টা ধন্যবাদ জানান। প্রতিবেদনটি পেশ করার সময় প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া উপস্থিত ছিলেন। কমিটি সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার ৭৫৪ জনকে পদায়নের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তার মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের ১১৯ জনকে সচিব, ৪১ জনকে সচিব পদমর্যাদায় গ্রেড-১ পদ ও ৫২৮ জনকে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে চাকরিতে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার এবং উল্লিখিত সময়কালের মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনাপূর্বক যথাবিহিত সুপারিশ প্রণয়নের জন্য সরকার গত ১৬ সেপ্টেম্বর সাবেক অর্থসচিব এবং বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক জাকির আহমেদ খানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটিতে অর্থ বিভাগ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব সদস্য হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া কমিটিতে আইন মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিব সদস্য হিসেবে ছিলেন। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, গত তিন মাসে প্রায় ১৯টি সভা করে এই কমিটি। আবেদনকারী ১৬ বছরে পারিবারিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে বঞ্চিত হয়েছেন এবং কোনো পদোন্নতি পাননি- এমন তথ্য নিশ্চিত হতে কমিটি সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে রিপোর্ট নেয়। সেই রিপোর্ট নেতিবাচক না হওয়ায় বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। যাদের চাকরির মেয়াদ বেশি আছে, তাদের পর্যায়ক্রমে সচিব করা যেতে পারে এমন সুপারিশ করা হয়েছে। যাদের সময় কম আছে, তাদের সরকারের এক্সটেনশন অনেক পদ আছে, সেখানে দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়াদের সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থায় গ্রেড-১ পদমর্যাদা দিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা হতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।