ঢাকা ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

র‌্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ বিএনপির

র‌্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ বিএনপির

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে বিএনপি। একইসঙ্গে জনবান্ধব, গ্রহণযোগ্য আচরণ ও বাহিনীর সদস্যদের সুরক্ষায় পুলিশ কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করার কথা জানিয়েছে দলটি। বিএনপি গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিটি এই সুপারিশ করেছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি।

বিএনপি গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, র‌্যাব অসংখ্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাই আমরা অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশনের কাছে র‌্যাব বিলুপ্তির করার সুপারিশ করেছি।

হাফিজ উদ্দিন বলেন, পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে থাকা র‌্যাব এরইমধ্যে দেশে এবং বিদেশে ব্যাপকভাবে নিন্দিত ও সমালোচিত হয়েছে। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন, জাতিসংঘ, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং সুধীজন র‌্যাবকে দেশে সংঘটিত অধিকাংশ গুম, খুন, নির্যাতন ও নিপীড়নের জন্য দায়ী করেছে। বাহিনীটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। এই প্রেক্ষাপটে র‌্যাবকে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করা হলো। র‌্যাবের দায়িত্ব আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং থানা পুলিশ যেন পালন করতে পারে সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিএনপির এই নেতা বলেন, পুলিশ সংস্কার কমিশন থেকে বিএনপির কাছে সুপারিশ চাওয়া হয়নি, তবুও আমরা একটা সুপারিশ তৈরি করেছি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, মো. আশরাফুল হুদা, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব এসএম জহরুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি মো. আব্দুল কাইয়ুম, সাবেক এসপি আনসার উদ্দিন খান পাঠান। যা আছে বিএনপির সুপারিশমালায়-

১. পুলিশ বাহিনীকে সঠিক দিকনির্দেশনা, পরামর্শ এবং সহায়তা প্রদানের জন্য একটি পুলিশ কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। কমিশনের কার্যপরিধির মধ্যে থাকবে- পুলিশের জনবান্ধব ও গ্রহণযোগ্য আচরণ নিশ্চিত করা। বাহিনীর কল্যাণ ও উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ। বাহিনী পরিচালনায় প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি প্রণয়ন। বাহিনীর সম্প্রসারণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সংগ্রহ। সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে উন্নত বিশ্বের অনুকরণে আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদান। সর্বোচ্চ বিভাগীয় কমান্ড কর্তৃক প্রচলিত আইন ও বিধির ব্যত্যয় ঘটার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পুলিশকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান। দায়িত্ব পালনকালে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি রোধকল্পে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান। সরকার কর্তৃক নির্দেশিত বিশেষ দায়িত্ব পালন। কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান। সদস্য হবেন ৮ (আট) জন। এর মধ্যে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য (২), বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য (১), বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক (১), উচ্চ আদালতের আইনজীবী (১), সমাজের বিশিষ্ট নাগরিক (২), স্বরাষ্ট্র সচিব মনোনীত অতিরিক্ত সচিব (১)। আইজিপি মনোনীত একজন অ্যাডিশনাল আইজি হবেন সদস্যসচিব। জাতীয় সংসদ বলবৎ না থাকলে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সুপ্রিমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারক। সরকার বিধি-বিধান দ্বারা এই কমিশনের সদস্য নির্বাচন পদ্ধতি, কাজের পরিধি ও কর্মকাল নির্ধারণ করবেন। স্থানীয় পর্যায়ে পুলিশকে অপরাধ দমনে সহায়তা প্রদান, জনসাধারণ পুলিশ সম্পর্ক উন্নয়নে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পরামর্শ প্রদানের জন্য প্রত্যেক উপজেলা/থানায় একটি নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে। স্থানীয় গণ্যমান্য, সুশিক্ষিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির সমন্বয়ে এ কমিটি গঠিত হবে। কমিটির সভাপতি হবেন একজন স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি। সদস্যসচিব হবেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এছাড়াও ২ জন ইউপি সদস্য, একজন শিক্ষক, একজন ব্যবসায়ী, একজন পেশ ইমাম এবং সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের স্থানীয় প্রতিনিধি কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার সংসদ সদস্য স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে ২ বছর সময়ের জন্য এই নাগরিক কমিটি গঠন করবেন। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে থাকা র‌্যাব এরই মধ্যে দেশে এবং বিদেশে ব্যাপকভাবে নিন্দিত ও সমালোচিত হয়েছে। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন, জাতিসংঘ, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং সুধীজন র‌্যাবকে দেশে সংঘটিত অধিকাংশ গুম, খুন, নির্যাতন ও নিপীড়নের জন্য দায়ী করেছে। বাহিনীটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। এই প্রেক্ষাপটে র‌্যাবকে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করা হলো। র‌্যাবের দায়িত্ব আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং থানা পুলিশ যেন পালন করতে পারে সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কমিউনিটি কর্তৃক পরিচালিত পুলিশি ব্যবস্থাকেই বলা হয় কমিউনিটি পুলিশিং। এর উদ্দেশ্য হলো জনগণের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে অপরাধ দমন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সামাজিক সমস্যাদি সমাধানে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সমাজে বিবিধ অপরাধ প্রবণতা এবং সামাজিক অস্থিরতা কমবে, পুলিশ-জনসাধারণের মধ্যে দূরত্ব হ্রাস পাবে, জনসচেতনতা বৃদ্ধি করবে এবং আইনের শাসন জোরালো হবে। এই উদ্দেশ্যে গ্রামাঞ্চলে প্রতিটি ইউনিয়নে এবং শহরাঞ্চলে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমপক্ষে ১ জন অবসরপ্রাপ্ত কমিউনিটি পুলিশ অফিসার (সাব-ইন্সপেক্টর পদের নিম্নে নয়) নিয়োজিত হবেন। সংশ্লিষ্ট এলাকায় তার একটি অস্থায়ী দপ্তর থাকবে। উক্ত অফিসার নিয়মিতভাবে এলাকার গণপ্রতিনিধি, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, ইমাম, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, নারী সমাজ, কৃষক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করবেন। সবার অংশগ্রহণে প্রাপ্ত সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে কমিউনিটি পুলিশ অফিসার সংশ্লিষ্ট এলাকায় অপরাধ দমন ও নিবারণে দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এছাড়াও এলাকায় জমি সীমানা, সম্পদ মালিকানা, মানহানি বা অন্য কারণে অধিবাসীদের মধ্যে মতবিরোধ, গৃহবিবাদ, শিশু ও নারী নির্যাতন, মাদক গ্রহণ, জুয়াখেলা, সুদব্যবসা, গ্যাং কালচার, সাম্প্রদায়িক উসকানি ইত্যাদি আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা চালাবেন। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আইনি পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করবেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পুলিশ ও জনগণ মিলে নিরাপত্তা পেট্রোলিংয়ের ব্যবস্থা নেবেন। নিয়োজিত কমিউনিটি পুলিশ অফিসারের বেতন-ভাতা সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ বহন করবেন।

কমিউনিটি পুলিশ অফিসার প্রতি মাসে তার গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে উপজেলা/থানা নাগরিক কমিটি এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্ত প্রতিবেদনে তার নিজের গৃহীত ব্যবস্থার বিবরণ লিপিবদ্ধ করে তা সার্কেল এএসপি/জোনাল এসির মাধ্যমে এসপি/ক্রাইম ডিসির নিকট প্রেরণ করবেন। এসপি/ক্রাইম ডিসি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন পুলিশ সদরদপ্তরে প্রেরণ করবেন। পুলিশ সদরদপ্তরে কমপক্ষে একজন অ্যাডিশনাল আইজি সারা দেশের এই কমিউনিটি পুলিশংয়ের কার্যক্রম মনিটর করবেন এবং কর্তৃপক্ষের আদেশ নির্দেশ ও দিকনির্দেশনা মাঠপর্যায়ে প্রতিপালনের জন্য প্রেরণ করবেন। প্রতি মাসে প্রতি থানায় ‘শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি পুলিশ অফিসার’ নির্ধারণ করা হবে এবং তাকে যথাযথ পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। বাংলাদেশ পুলিশে বর্তমান জনবল প্রায় সোয়া ২ লাখ। এদের সঙ্গে পরিবারের সদস্য সংখ্যা যুক্ত হলে তা দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৮ লাখ। এদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করার দায়িত্ব প্রতিটি বিভাগ বা জেলায় স্থাপিত পুলিশ হাসপাতালের। বর্তমানে এই সেবা বেশ অপ্রতুল বিধায় প্রতিটি জেলা শহরে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও জনবলসহ পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল স্থাপন/সম্প্রসারণ করতে হবে। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, রাজারবাগ, ঢাকা ছাড়া অন্য কোনো বিভাগীয়/জেলা হাসপাতালের কোথাও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান বা সরঞ্জামাদি নেই। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের সন্তান-সন্ততিদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের অনুরূপ প্রতিটি বিভাগীয়/মেট্রোপলিটন শহরে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল পরিচালনা করা যেতে পারে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ডাক্তার, টেকনিশিয়ান এবং যন্ত্রপাতি সন্নিবেশনের প্রয়োজন হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত