ঢাকা ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেশজুড়ে আনন্দোৎসবে বড়দিন উদযাপন

দেশজুড়ে আনন্দোৎসবে বড়দিন উদযাপন

খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ গতকাল দেশজুড়ে আনন্দোৎসবে উদযাপিত হয়েছে। এ ধর্মের প্রবর্তক যীশু খ্রিষ্ট ২৫ ডিসেম্বর বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বড়দিন উদযাপন করছেন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষরা।

সম্প্রদায়টির সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন হলো- পুনর্জন্ম, নতুন যাত্রা, ক্ষমা ও শান্তি এবং ঈশ্বর ও মানুষের সম্পর্ক নবায়নের উৎসব। ক্রিসমাস ট্রি রঙিন বাতিতে সজ্জিত করা, বিশেষ প্রার্থনা, শিশুদের মধ্যে উপহার বিতরণ এবং কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে বড়দিন উদযাপন করা হয়। গির্জায় প্রার্থনা অধিবেশনের আগে এবং পরে ক্রিসমাস ক্যারল এবং প্রার্থনামূলক গান গাওয়া হয়।

বড়দিনের সবচেয়ে জমকালো উদযাপন রাজধানী ঢাকায় হয়েছে। চার্চ, শপিংমল, পাঁচ তারকা হোটেলগুলো সাজে বর্ণিল সাজে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। রমনার কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রাল চার্চের গির্জা বাহারি রঙে সাজে। ঝলমলে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয় হোটেলগুলোতে। শিশুদের জন্য বড় দিনের দিনটিকে উপভোগ্য করে তুলতে প্রায় সব ধরনের আয়োজনের পরিকল্পিত ছিল। হোটেলগুলোতে শোভা পায় গিফট বক্স, ঝলমলে আলোকসজ্জা, ক্রিস্টমাস ট্রিসহ বড়দিনের নানা অনুষঙ্গ। প্রতিবারের মতো এবারো ওয়েস্টিন, শেরাটন, সোনারগাঁও হোটেলে শিশুদের জন্যে বিশেষ আয়োজন ছিল। গতকাল সাড়ে ছয়টায় রাজধানীর তেজগাঁও হলি রোজারি চার্চে প্রধান যাজক, ফাদার জয়ন্ত এস গমেজ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে এ উৎসব শুরু করেন। শুরুতে প্রার্থনায় যিশুর মহিমাকীর্তন এবং ইউক্রেন-রাশিয়া, ইসরাইল-ফিলিস্তিন, সিরিয়াসহ সারা বিশ্বের সব যুদ্ধ বন্ধ ও বিশ্বশান্তি কামনা করা হয়। পাশাপাশি পরিবর্তিত বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নতি কামনায় প্রার্থনা করা হয়। শান্তি ও ন্যায়ের কথা বলা হয়।

কুমিল্লা : কুমিল্লায় উপাসনা, পুঁথিপাঠ, সংগীত পরিবেশন ও কেক কাটার মধ্যদিয়ে বড়দিন উদযাপিত হয়। গতকাল সকাল থেকে ব্যাপটিস্ট ও ক্যাথলিক চার্চগুলোতে উপাসনার জন্য ভিড় করে খ্রিষ্টান ধর্মের মানুষ। সকালে আওয়ারলেলি অব ফাতিমা ক্যাথলিক চার্চ বড়দিনের কেক কেটে দিনব্যাপী উৎসবের সূচনা করেন সিস্টার মেরি লিওবা। আলপনা আঁকা, যীশুর জন্ম দৃশ্য, ক্রিসমাস ট্রি সাজিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে বড়দিন উদযাপন করা হয়। সান্তা ক্লজ শিশুদের মধ্যে উপহার বিতরণ করে। বড়দিন উপলক্ষে ব্যাপটিস্ট ও ক্যাথলিক চার্চগুলো বর্ণিল সাজে সাজানো ছিল। নগরীর বাদুরতলা রিভাইভ্যাল ব্যাপটিস্ট চার্চে পাস্টর ডা. লরেন্স তীমু বৈরাগীর নেতৃত্বে উপাসনা পাঠ ও সংগীত পরিবেশন করা হয়। বড়দিনকে ঘিরে নগরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল।

নওগাঁ : নওগাঁয় খ্রিষ্ট ধর্মের শ্লোক, যীশু খ্রিষ্টের বানী পাঠ, গান, নাচ, কেক কেটে, আনন্দ ও উৎসবের মধ্যে দিয়ে বড় দিন উদযাপন করা হয়। নওগাঁ সেন্ট মার্ক চার্চের ফাদার রেভারেন্ট সর্বানন্দে উপস্থিত ছিলেন।

খুলনা : খুলনায় চার্চে বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বড়দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। ছোট শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সি মানুষের উপস্থিতিতে এসময় চার্জগুলোতে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রার্থনা শেষে আগতরা আনন্দে মেতে ওঠেন। বগুড়ায় ৯টি গির্জা ও চার্চে বড়দিন উদযাপিত হয়।

বান্দরবান : নানা আয়োজনে বান্দরবানে উদযাপিত খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন। বড়দিনকে ঘিরে সকাল থেকে জেলা শহরের ফাতেমা রানী ক্যাথলিক গির্জায় আয়োজন করা হয় সমবেত প্রার্থনা। প্রার্থনায় আত্মশুদ্ধি মধ্য দিয়ে নতুন বছরের সুখ শান্তির প্রত্যাশা করেন সবাই। এসময় সমবেত প্রার্থনা পরিচালনা করেন ফাতেমা রানী ক্যাথলিক গির্জার পাল-পুরোহিত ফাদার সুধীর দাশ সিএসসি।

রাজশাহী : রাজশাহী মহানগরীর বাগানপাড়া উত্তম মেষপালক ক্যাথিড্রালে খ্রিষ্টযোগ ও বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা। এসময় খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারীরা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে যীশুকে স্মরণ করেন। পরে যীশু খ্রিষ্টের মহিমা ও তার ক্ষমার গুণ তুলে ধরেন রাজশাহী ধর্মোপদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে বড়দিন উদযাপন করেছেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা। চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ঐতিহ্যবাহী পর্তুগীজদের নির্মিত জপমালার রানী’ গির্জায় সকালে সমবেত প্রার্থনা ও সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা। নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ এতে যোগ দেন। গির্জার প্রধান পুরোহিত রিগ্যান ক্লেম্যান ডি কস্তার পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত প্রার্থনায় যীশু খ্রিষ্টের জীবন থেকে শিক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি দেশ-জাতির সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করা হয়।

বরিশাল : বরিশালে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বড়দিনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান শুরু হয়। সবমিলিয়ে জেলার ১১০টি গির্জায় বড়দিনের উৎসব করা হয়।

রংপুর : রংপুর নগরীর বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন উদযাপিত হয়। গির্জার চারপাশে বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয়। ভেতরে ক্রিসমাস ট্রিতেও আলোর ঝলকানি। মায়ের হাতের কেক, পার্কস্ট্রিট থেকে সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল চার্চ।

ময়মনসিংহ : বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ময়মনসিংহে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন উদযাপিত হয়। সাধু পেট্রিকের ক্যাথিড্রাল গির্জার পাল পুরোহিত ফাদার বিজন কুবি, ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপগণেন পল কুবিসহ খ্রিষ্টান ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সিলেট : সিলেটে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উদযাপিত হয়। উৎসব উপলক্ষে রঙিন কাগজ, ফুল আর আলোকসজ্জা দিয়ে সাজানো হয়েছে সিলেটের নয়াসড়কে অবস্থিত প্রেসবিটরিয়ান গির্জা। গির্জার সামনে বসানো ছিল ক্রিসমাস ট্রি। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে একদল গায়ক ক্রিসমাস ক্যারল পরিবেশন করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হয়। বড়দিন উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এসময় তিনি সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুর পরিচয় উপেক্ষা করে দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। বড়দিন ও নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানাতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত মঙ্গলবার কাকরাইলে আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজের বাসভবনে যান। সফরকালে সেনাবাহিনী প্রধান খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে বড়দিনের উষ্ণ শুভেচ্ছা জানান। এদিকে বড়দিন উদযাপন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের আতশবাজি, পটকাবাজি ও আকাশে ফানুস উড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত