কাজাখস্তানে উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে নিহত অন্তত ৪০

জীবিত উদ্ধার ২৭

প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে ৬৭ জন আরোহী নিয়ে রাশিয়ায় যাওয়ার পথে মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তানে আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের অন্তত ৪০ যাত্রীর মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২৭ আরোহীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আহত অবস্থায় উদ্ধারের পর তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার কাজাখস্তানের আকতাউ শহরের কাছে উড়োজাহাটি বিধ্বস্ত হয় বলে কাজাখ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, উড়োজাহাজটি মাটিতে পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এতে আগুন ধরে যায়। এ সময় আকাশে ঘন কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে দেখা যায়। রক্তাক্ত এবং ক্ষতবিক্ষত যাত্রীদের অক্ষত থাকা উড়োজাহাজের একটি টুকরোতে ধাক্কা খেতে দেখা যায়। তবে এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

কাজাখস্তানের জরুরি পরিষেবাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা উড়োজাহাজটির আগুন নিভিয়ে ফেলেছেন। তিন শিশুসহ জীবিত উদ্ধার করা ২৭ জনকে পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

আজারবাইজান এয়ারলাইন্স বলেছে, এমব্রেয়ার ১৯০ উড়োজাহাজের জে২-৮২৪৩ ফ্লাইটটি আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে রাশিয়ার চেচনিয়ার গ্রোজনি শহরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু কাজাখস্তানের আকতাউ থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে উড়োজাহাজটি জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়।

রাশিয়ার একাধিক বার্তা সংস্থা বলেছে, চেচনিয়ার গ্রোজনি শহরে ঘন কুয়াশার কারণে উড়োজাহাজটি ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছিল। রুশ বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স বলেছে, উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের এই ঘটনায় কারিগরি ত্রুটিসহ অন্য কোনো কারণ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে কাজাখস্তান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

এক বিবৃতিতে রাশিয়ার বেসামরিক বিমান পর্যবেক্ষক সংস্থা বলেছে, উড়োজাহাজে পাখির আঘাতের পর পাইলট জরুরি অবতরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে।

উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পরপর রাশিয়া সফররত আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ দেশে ফিরেছেন। গতকাল বুধবার রাশিয়ায় শীর্ষ এক সম্মেলনে যোগ দেয়ার কথা ছিল তার।

এদিকে কাজাখস্তান সরকার জানিয়েছে, কাসপিয়ান সাগরের পূর্ব উপকূলে বিমান ভেঙে পড়ার পর যে আগুন লেগেছিল, দমকলকর্মীরা তা নিয়ন্ত্রণে আনেন। তার পর বিমানের মধ্যে থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়। তিনজন শিশুও উদ্ধারের তালিকায় রয়েছে। তবে যে ২৭ জনকে বিমান দুর্ঘটনার পর উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের সবার অবস্থাই ‘অত্যন্ত সঙ্কটজনক’।

ঘন কুয়াশার কারণেই জরুরি অবতরণের চেষ্টা কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। রাশিয়ার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে অন্য কিছু কারণও উঠে এসেছে। কেউ কেউ দাবি করছেন, বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি হয়েছিল। সেই কারণে পাইলট জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। অনেকে আবার দাবি করছেন, মাঝ আকাশে একঝাঁক পাখির সঙ্গে ধাক্কার ফলে বিমানটি জরুরি অবতরণ করাতে বাধ্য হন পাইলট।

কাজাখস্তানের বিমান দুর্ঘটনার ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, মাটিতে আছড়ে পড়ার আগে বেশ কয়েক মিনিট আকাশে ‘বিভ্রান্ত’ হয়ে ঘুরপাক খেয়েছে বিমানটি। বিমানবন্দর থেকে কিছুটা দূরে আকাশে ক্রমাগত চক্কর কাটতেও দেখা যায়। অন্তত তিন মিনিট ‘বিভ্রান্ত’ হয়ে ঘোরার পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গোত্তা খেয়ে তা একটি খোলা জায়গায় আছড়ে পড়ে। মুহূর্তে তাতে আগুন ধরে যায়। অন্য একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, বিমানের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে একটি অংশ অবিকৃত রয়েছে। তার মধ্য থেকে এক এক করে যাত্রীদের বার করে আনা হচ্ছে।