ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়ন (২৪) ছিলেন একজন নির্ভীক ও দক্ষ কর্মী। নির্ভীক ও দক্ষ কর্মীর সুবাদে তাকে সম্প্রতি সিলেট থেকে নিয়ে আসা হয় ঢাকার তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে। কর্ম দক্ষতার কারণে দুই বছর চাকরি জীবনে স্থান করে নিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ‘স্পেশাল টিমে’। সর্বশেষ গত বুধবার দিনগত রাতে দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত হন নয়ন। তার এই অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবার থেকে শুরু করে সহকর্মীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার নিহত ফায়ার ফাইটার নয়নের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তর প্রাঙ্গণে।
এসময় ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তর প্রাঙ্গণে ছিল শোকের ছায়া। দেশের পতাকায় মোড়ানো ফায়ার ফাইটার নয়নের লাশ যখন ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর প্রাঙ্গণে রাখা হয় তখন নেমে আসে শোকের ছায়া।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের চোখ তখন অশ্রুশিক্ত। জানাজার আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ফায়ার সার্ভিসে সদর দপ্তরে উপস্থিত হয়ে ফায়ার ফাইটার নয়নকে শ্রদ্ধা ও শেষ বিদায় জানান।
ফায়ার ফাইটার নিহতের ঘটনায় মামলা : দেশের প্রশাসনিক কাজের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত হন ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়ন। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় বাহিনীর পক্ষ থেকে সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরের কর্মরত রুহুল আমিন মোল্লা। মামলায় আসামি করা হয়েছে ট্রাকচালক মো. বেল্লাল হোসেন ওরফে সুমন (৩৬) ও তার সহকারী ফরহাদ হোসেনকে (২০)। গতকাল বৃহস্পতিবার শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রশান্ত কুমার সাহা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
একমাত্র ছেলে ছিলেন ফায়ার ফাইটার নয়ন, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা : সচিবালয়ের আগুন নেভাতে গিয়ে নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোয়ানুর জামান নয়নের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের মধ্যে নয়ন ছিল ছোট। সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ জানার পর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা নার্গিস বেগম। সন্তানবিয়োগের ব্যথা সইতে না পেরে নিজের বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন মা। নিহত সোয়ানুর জামান নয়ন (২৪) রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের ছড়ান আটপড়িয়া গ্রামের কৃষক আখতারুজ্জামানের ছেলে। তিনি দুই বছর ধরে ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত ছিলেন। একমাত্র ছেলে সন্তানকে হারিয়ে শোকের মাতম বইছে পরিবারে। আত্মীয়-স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশীরাও কাঁদছেন নয়নের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে।
ব্যর্থতা স্বীকার করলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা : প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে রাস্তায় ট্রাকচাপায় ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়নের নিহতের ঘটনায় নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এই ঘটনার বিচার অবশ্যই হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরে সোয়ানুর জামান নয়নের জানাজা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এই কথা বলেন।
সাধারণত কোথাও আগুন লাগলে তা নেভাতে যায় ফায়ার সার্ভিস। তখন পুলিশ আশপাশের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সচিবালয়ের সামনের রাস্তা পুলিশ বন্ধ করল না কেন? এই দায় কি উপদেষ্টা এড়াতে পারেন? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার একজন কর্মী মারা গেল, এর ব্যর্থতা আমার। এই ঘটনার বিচার অবশ্যই হবে।’ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি শোকাহত। অল্প বয়সে এই ছেলেটা চলে গেল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তো তার মা-বাবার। অন্য সবাই কিন্তু আস্তে আস্তে ভুলে যাবে কিন্তু তার মা-বাবা এই মৃত্যু ভুলতে পারবে না।’ এর আগে দুপুর ২টা ৫ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতর প্রাঙ্গণে নিহত ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়নের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকসহ বাহিনীটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।