দেশের প্রশাসনিক কেন্দ্র সচিবালয়ের আগুনের ঘটনায় তদন্ত হলে পেছনের কারণটা জানা যাবে বলে জানিয়েছে সেনাসদর। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান।
দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা দিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এর আগে গত ১৩ ও ২৮ নভেম্বর দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করেছে সেনাসদর। গত ২৯ নভেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়েছে, এই চার সপ্তাহে সেনাবাহিনী ২৮টি অবৈধ অস্ত্র এবং ৪২৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এই সময়ে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় ৬৭টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা রেখেছে সেনাবাহিনী। শিল্পাঞ্চল ছাড়াও গত এক মাসে ৪৫টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। এক মাসে ২০০ মাদক কারবারীসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ১৪০৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনীর সদস্যরা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গত ২০ জুলাই থেকে মাঠে থেকে কাজ করছে সেনাবাহিনী। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব পদবির কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়েছে সরকার। এই সময়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর ১২৩ জন সদস্য হতাহত হয়েছে। মারা গেছেন একজন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হলে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, পরিসংখ্যানগতভাবে অবনতি হয়নি। তবে অনেক ঘটনা ঘটছে। যা আমাদের নজরদারিতেও আছে। পুলিশ কাজ করছে। আমরাও কাজ করছি। এলাকাভেদে আমাদের সমন্বয় সেল আছে। যেখানে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিতভাবে সমন্বয় করে। সেনাসদর পর্যায়ে এবং উপদেষ্টামণ্ডলী পর্যায়ে এই সমন্বয় হয়।
সেনাবাহিনী দুই ধরনের অপারেশন চালাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, যেসব হুমকি উঠে আসে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী কী হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয় এবং কার্যক্রম গ্রহণ হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ কাজ করছে। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে যারা আছেন তারাও কাজ করছে। সাধারণত দুই ধরনের অপারেশন করা হয়। কিছু টার্গেটেড, যেখানে আমরা তথ্য পাই। সেসব তথ্য নিয়ে কিছু অ্যারেস্ট করা হয়েছে। এর বাইরে অনেক সময় ঘটনার রিপোর্ট আমরা পাই, সেখানেও তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি এ ধরনের অপারেশনে ঢাকা থেকে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে পারবো কি না, তা আমরা বলি না। কিন্তু একটা সহনশীল পর্যায়ে রাখতে আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে। সেনাবাহিনী আরো কতদিন মোতায়েন থাকবে জানতে চাইলে ইন্তেখাব হায়দার বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছে সরকারের সিদ্ধান্তে। সরকারের সিদ্ধান্তেই প্রত্যাহার করা হবে। কতদিন থাকা দরকার সেটার বিচার সরকার করবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী কোনো চাপ অনুভব করছে কি না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজটা সহজ না। বিভিন্ন ধরনের হুমকি আছে। রুটিন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাপ নেয়ার জন্য সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষিত করা হয়। সেই ধরনের চাপ আমাদের নেই। তবে হ্যাঁ, অনেক ধরনের আনসার্টেনিটি আছে। বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতি বিভিন্ন সময় ডেভেলপ হচ্ছে। আমরা সেগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে মিলে কাজ করে যাচ্ছি। যাতে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহনশীল পর্যায়ে থাকে।
প্রশাসন ক্যাডারের মধ্যে যে অস্থিরতা চলছে, এর জেরে আগুন দেয়া হয়েছে কি না? অনেকে এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলছে। সেনাবাহিনী এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পেয়েছে কি না? জবাবে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, আগুনের ঘটনায় তদন্ত হলে পেছনের কারণটা জানা যাবে। তখন বলা যাবে, অ্যাক্সিডেন্ট নাকি কেউ ঘটিয়েছে। সচিবালয়ের পাশে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প আছে। তারা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থেকে বাহ্যিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আগুন লাগার পর সেনা সদস্যরা ফায়ার সার্ভিসকে সর্বাত্মক সহায়তা করেছে। বান্দরবানের লামায় আগুনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমিজমা সংক্রান্ত পুরোনো বিরোধ অথবা সমস্যা ছিল। যেটা ফলশ্রুতিতে ঘটনাটি ঘটেছে। কারা ঘটিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করা হবে। সম্প্রতি চাঁদাবাজিতে হাতবদল হয়েছে বলে অভিযোগ আসছে। চাঁদাবাজদের তালিকা ধরে সেনাবাহিনী কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আলাদা কোনো তালিকা করে কাজ করছি না। তালিকা একটাই। সরকারের পক্ষ থেকে সমন্বিতভাবে কাজ করা হচ্ছে।