ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের ফলে মারাত্মক শব্দ দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে। রাত ১১ থেকে শুরু করে ১টা পর্যন্ত আতশবাজি ও পটকার তীব্র শব্দ শোনা যায়। ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আতশবাজি ফুটানো ও ফানুস উড়ানোর কারণে ঢাকায় শব্দদূষণ বেড়েছে ৭৪ শতাংশ। বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) গত ৭ বছর ধরে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনে শব্দ দূষণের তীব্রতা পর্যবেক্ষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে। বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) জানিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে দিনগত রাত ১টার মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গড়ে (খবয়) শব্দের মান ৪৮ থেকে শুরু করে ৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত পাওয়া যায়।
কিন্তু এই শব্দের মাত্রা রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে গড়ে সর্বনিম্ন ৮৫ ডেসিবল থেকে শুরু করে গড়ে সর্বোচ্চ ১১০ ডেসিবল পর্যন্ত বা আরো বেশি অতিক্রম করে। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, ২০১৭-১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ১টা শব্দের মাত্রা ছিল ৬৫ ডেসিবল কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ১টায় আতশবাজি ও ফানুশ উড়ানোর কারণে শব্দের মাত্রা দাঁড়ায় ১১০ ডেসিবল। গত ৭ বছরের মধ্যে এটা ছিল সর্বোচ্চ।
২০১৮-১৯ সালে উদযাপনে আগে শব্দের মাত্রা ছিল ৬৩ ডেসিবল, উদযাপন সময় সেটা হয়েছে ১০৩ ডেসিবল। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ সালে উদযাপনের আগে শব্দের মাত্রা ছিল ৬০ ডেসিবল, উদযাপন সময় শব্দের মাত্রা হয়েছে ৮৫ ডেসিবিল। কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ক্যাপসের গবেষণা দলের মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এ বছরগুলোতে ঢাকা শহরে রাত ১১টা ৩০ মিনিট থেকে শুরু করে ভোর ৫টা পর্যন্ত আতশবাজি ও পটকা ফুটানো হয়। তবে সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ হয়েছে রাত ১২টা থেকে ১২ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। ২০২৪ সালের প্রথম ঘণ্টায় শব্দদূষণ হার আগের দিনের (৩০ ডিসেম্বর) তুলনায় প্রায় ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং বেশিরভাগ সময় শব্দের মাত্রা ৮০ থেকে ৯০ ডেসিবলের মধ্যে ছিল। যদি ঢাকা শহরকে একটি মিশ্র এলাকার সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী মিশ্র এলাকার জন্য রাতের বেলা শব্দের মাত্রা ৫০ ডেসিবল এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর রাতে এই মানমাত্রা কখনোই ৫০ ডেসিবল এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, শব্দের মাত্রা এত তীব্র যে শিল্প এলাকার জন্য নির্ধারিত শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবল অতিক্রম করে। হিসাব করে দেখা যায় যে, গত ৭ বছরে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ১টা (১ জানুয়ারি) পর্যন্ত গড়ে ৯০ শতাংশ সময়ে শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবল অতিক্রম করেছে যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
এ সময় তিনি শব্দদূষণ রোধে সুপারিশ জানিয়ে বলেন, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ এবং অন্যান্য পরিবেশ সুরক্ষা আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নববর্ষ উদযাপনের সময় পশু-পাখি এবং বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তার জন্য সুরক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। দূষণ নির্ধারণ এবং তার প্রভাব কমানোর জন্য গবেষণায় আরো বেশি তহবিল বরাদ্দ করতে হবে। এ সময় বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, অরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রকিবুল হাসান মুকুল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানারস-এর সাধারণ সম্পাদক প্ল্যানার শেখ মুহাম্মাদ মেহেদী আহসান, বন্যপ্রাণী পরিবেশবিদ, গবেষক ও লেখক আশিকুর রহমান সমী এবং সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাশেদুজ্জামান মজুমদার।