ঢাকা ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জুলাই বিপ্লবের ইশতেহার ঘোষণা কাল

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জমায়েত : * ঘোষণাপত্রটি লিখিত দলিল হবে : সারজিস * আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক দল ঘোষণা করা হবে : হাসনাত
জুলাই বিপ্লবের ইশতেহার ঘোষণা কাল

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ৩১ ডিসেম্বর ‘প্রক্লেমেশন অব জুলাই রেভুলেশন’ ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। কাল বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ ঘোষণা দেবেন তারা। ঘোষণাপত্রে কী কী বিষয় থাকবে তা জানাতে গতকাল রোববার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বিস্তারিত তুলে ধরেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক দল হিসেবে ঘোষণা করা হবে। বিচার নিশ্চিতের ঘোষণা দেয়া হবে। গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি। হাসনাত বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে সাধারণ মানুষ যেভাবে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে ৩১ ডিসেম্বর আবারও মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। দীর্ঘদিন দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। আমরা চাচ্ছি সাধারণ মানুষ যেন ভোট দিতে পারে। সাধারণ মানুষ যেটা চেয়েছে, আমরা সেটাই এই প্রক্লেমেশন রাখার চেষ্টা করেছি।

তিনি বলেন, বিপ্লবের ঘোষণাপত্র ৫ আগস্ট হওয়া উচিত ছিল। এটি না হওয়ার কারণে স্বৈরাচারের দোষররা সক্রিয় রয়েছে। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মানুষ ৭২ এর মুজিববাদের সংবিধানের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। ৭২-এর সংবিধানের বিরুদ্ধে যেভাবে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, সেটাকে স্বীকৃতি দিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে। হাসনাত বলেন, এটা নির্দিষ্ট কোনো দলের প্রক্লেমেশন না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারিত জাতি। আর যেন প্রতারিত না হই এজন্য এই ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। আমরা চাই যেখান থেকে এক-দফা ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, সেখান থেকেই মুজিববাদের কবর রচনা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক, জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আমরা মনে করি আমাদের ঘোষণাপত্র আরো আগে প্রকাশ করা দরকার ছিল। এই ঘোষণাটি সামগ্রিকভাবে সারা বাংলাদেশে লিখিত অবস্থায় থাকবে। পুরাতন সিস্টেমগুলোকে রিজেক্ট করবে, নতুন সিস্টেম তৈরি করবে। আগামীতে মানুষ যখন ভোট দেবে, তখন তারা বুঝতে পারবে কোন প্রেক্ষাপটে অভ্যুত্থান হয়েছিল। আমরা বিশ্বাস করি মানুষের মনকে যেভাবে ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় করেছিল, তেমনিভাবে এই ঘোষণাপত্র মানুষের মনে ধারণ করবে।

তিনি আরো বলেন, ২৪ এর বিপ্লবে কী হয়েছে, এই বিপ্লব পরবর্তী কেমন হওয়া উচিত সেই প্রেক্ষাপটে একটি আকাঙ্ক্ষার যাত্রা হবে। তার আলোকেই হবে আগামীর বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র। তিনি বলেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান হওয়ার পেছনে যে কারণ ছিল, প্রেক্ষাপট ছিল সেটা ১৬ বছরে তৈরি হয়নি। এটা ৫৩-৫৪ বছরের প্রেক্ষাপট, আড়াইশ’ বছরের প্রেক্ষাপট। বিগত ১৬ বছরে এই প্রেক্ষাপট তার সব মাত্রা অতিক্রম করে। সে সময় নির্যাতন, নিপীড়ন, অন্যায়, জুলুম, ক্ষমতার অপব্যবহার, চাঁদাবাজি, মানুষকে জিম্মি করা, হত্যাসহ সবকিছু নিয়ে মানুষের ধৈর্যের বাধ ভেঙে দেয়া হয়। সারজিস আলম বলেন, ‘১৬ বছরের নিপীড়ন শেষে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে একটি যৌক্তিক আন্দোলন শুরু হলো। এটি ৫ আগস্টে গিয়ে শেষ হয়। এটি বিপ্লবই। বিপ্লবের প্রথম যেই ধাপ, তার একটি অতিক্রম করেছি আমরা।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতারা বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের যে ঘোষণাপত্র, সেটি অবশ্যই আরও আগে ঘোষণা করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু পুরো দেশের রাষ্ট্রীয় যে সিস্টেম, এই দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেমকে একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে এসে, সেখান থেকে কিছু করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি সিস্টেমকে সুন্দরভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য যে সহযোগিতা প্রয়োজন, রাষ্ট্র এই মুহূর্তে সিস্টেমের সবার কাছ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী তা পাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে যে বিষয়গুলো মানুষ নিজের জায়গা থেকে গ্রহণ করেনি এবং আগামীতে মানুষ যে সিস্টেম চায়, তার মধ্যে একটি পার্থক্য তৈরি করবে ঘোষণাপত্র। আগামীতে মানুষের দায়িত্ব যারা ভোটের মাধ্যমে গ্রহণ করবে, তাদের ক্ষেত্রেও এটি একটি নির্দেশিকা হিসেবে থাকবে। সেই বিষয়গুলো আমরা প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভুলেশনে লিপিবদ্ধ করবো। আমরা ইতোমধ্যে এটির একটি খসড়া তৈরি করেছি। এই বিপ্লবের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, দল-মত নির্বিশেষে সবার মতামত নেওয়া হচ্ছে, সংশোধন, পরিমার্জন করা হচ্ছে। এই বিপ্লব যেমন ফ্যাসিস্টবিরোধী সবাইকে ধারণ করতে পেরেছিল, আমাদের ঘোষণাপত্রও সবার আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারবে বলে আশা করি। এটি আগামীর বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেছেন, স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের দিন যারা ঢাকায় থাকতে পারেননি, আগামী ৩১ তারিখ সারাদেশ থেকে সেই মানুষ ঢাকায় আসবেন। গতকাল দুপুরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংবাদ সম্মেলনে তিনি কথা বলেন। হান্নান মাসুদ বলেন, ৩১ তারিখ শহীদ পরিবার থাকবেন, যারা হাত হারিয়েছে, পা হারিয়েছেন, চোখ হারিয়েছেন, অঙ্গ হারিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন তারা থাকবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত