প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডে পাঁচ মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে যাওয়াসহ বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এটি কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি নাশকতা? অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষের মনে এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আগুনের কারণ অনুসন্ধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে প্রধান করে বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল সরকার। তদন্ত কমিটি আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে কী পাওয়া যেতে পারে এ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। এ নিয়ে প্রশ্ন ছিল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ সম্মেলনে। গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার তদন্ত কমিটির বরাত দিয়ে বলেন, তদন্ত কাজের অংশ হিসেবে তদন্ত কমিটির সদস্যরা যাবতীয় আলামত সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে কিছু আলামত দেশে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি প্রয়োজন মনে করলে কিছু আলামত দেশের বাইরে পাঠিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। তার এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রশ্ন আবারও জোরালো হয়েছে, সচিবালয়ে আগুন নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা? সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্ন ছিল- তদন্ত কমিটির সদস্যরা তদন্তকালে এমন কোনো তথ্য বা আলামত পেয়েছেন যা দেশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব নয় কিংবা বিদেশে পাঠানো হবে? জবাবে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, উপযুক্ত সময় এলে তদন্ত কমিটির সদস্যরা এ ব্যাপারে আপনাদের বিস্তারিত জানাবেন। তদন্ত কমিটির সদস্যরা আমাদের জানিয়েছেন- কিছু কিছু আলামতের একেবারে সঠিক ফলাফল পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের বাইরে থেকে পরীক্ষা করা হলে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন। সব প্রক্রিয়া শেষ হতে কতদিন লাগতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্ত কমিটিকে তিন দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তারা আগামীকাল প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টা ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত সম্পন্ন করতে কতদিন লাগবে সেটা নির্ধারণ করবেন। গত বুধবার দিনগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুন লাগে। ৬ ঘণ্টা পর গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। তবে এর পরও ভবনের কিছু জায়গায় আগুনের অস্তিত্ব ছিল। আরো প্রায় ৪ ঘণ্টার চেষ্টায়, বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে ভবনটির সম্পূর্ণ আগুন নির্বাপণ করা হয়। ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, ৭ নম্বর ভবনের ৬ তলা থেকে ৯তলা পর্যন্ত ফ্লোরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ফ্লোরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অফিস রয়েছে।