ঢাকা ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অস্বস্তিতে শুরু বছর শেষে চাঙ্গা জামায়াত

অস্বস্তিতে শুরু বছর শেষে চাঙ্গা জামায়াত

অস্বস্তির মধ্য দিয়ে বছর শুরু হলেও স্বস্তিতে বছর পার করছে জামায়াতে ইসলামী। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে আওয়ামী সরকার। তখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে মিছিল-মিটিং করেছে জামায়াত। বছরের প্রথমদিকে দলটির একাধিক শীর্ষনেতা কারাবরণ করেন। তবে নির্বাচনের শেষে আবার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দেয় দলটির নেতাকর্মীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন তৎকালীন সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোর মতো সমর্থন জানায় জামায়াত। এতে গতি পায় আন্দোলন। ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় এবং ওইদিনই শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের দিন ৫ আগস্টেই দৃশ্যপটে আসে জামায়াত। সেদিন দুপুরে আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বৈঠকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানও অংশ নেন। ওই দিন সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিভিন্ন দলের বৈঠকেও অংশ নেন জামায়াতের আমির। রাজধানীর মগবাজারে ১৪ বছর ধরে বন্ধ থাকা দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ৫ আগস্ট রাতেই খোলেন শফিকুর রহমানসহ শীর্ষ নেতারা। পরে তারা পুরানা পল্টনে মহানগর কার্যালয়েও যান। এসময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

পরদিন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের অবস্থান তুলে ধরা হয়। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে সারা দেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সতর্কবার্তাও দেন জামায়াতের আমির। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী নিরাপত্তার বলয় করেও প্রশংসা কুড়িয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। ৮ আগস্ট বঙ্গভবনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেয় জামায়াত। ১২ আগস্ট রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে জামায়াতের আমিরসহ প্রতিনিধিদল। পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে দলটির শীর্ষ নেতাদের। ২৮ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে সরকার। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গেও দলটির তৎপরতা লক্ষ্যণীয়। বিভিন্ন সময়ে ঢাকাস্থ দূতাবাসগুলোয় কিংবা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কূটনীতিকদের বৈঠকও হয়। বিদেশিদের আমন্ত্রণে বেশ কয়েকটি দেশও ভ্রমণ করেন জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব। জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের সঙ্গেও বৈঠক করেন তারা। এদিকে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সভা-সমাবেশ ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তৎপর জামায়াত নেতারা। দেশের বিভিন্ন জেলায় বড় সমাবেশও করতে দেখে গেছে। বিজয় দিবসে রাজধানীতে সমাবেশ ও বর্ণাঢ্য বিজয় র‌্যালি করে দলটির নেতাকর্মীরা। এতে জামায়াতের আমিরও অংশ নেন। বিগত ১৫ বছরে শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি, নেতাকর্মীদের নিপীড়ন-নির্যাতন-মামলায় চাপে থাকা দলটি হয়তো ভাবেনি এভাবে প্রকাশ্যে রাজনীতিতে ফিরতে পারবে। বছরের পর বছর নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখা হলেও অভ্যুত্থানের পর বাধাহীন ও রাজনৈতিক প্রাণ ফিরে পেয়েছে জামায়াত- এমন মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা এটাকে জামায়াতের পুনরুত্থান বলব না। বেআইনিভাবে আমাদের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম, সাংগঠনিক তৎপরতা, দলীয় কাজ, ছোটখাটো সভা-সমাবেশ, বাড়িঘর, অফিস, সবই পতিত স্বৈরাচার নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। আমাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল বারবার। কিন্তু আমরা ছিলাম সব সময়ই। যতটা অত্যাচার, নির্যাতন উপেক্ষা করে আমরা পেরেছি মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম, সংগঠন সম্প্রসারণ, আমাদের কর্মীবাহিনী, জনশক্তি নেতাকর্মীদের চরিত্র গঠন, দাওয়াতি কাজ, বিগত ১৫ বছর বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছি। এখন ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তিত অবস্থায় এখনো তো সেই স্বৈরশাসক নেই। সব দলই অবাধে সভা-সমাবেশ, রাজনৈতিক কর্মসূচি, জনগণের কাছে তার মেসেজ পৌঁছে দেওয়ার স্বাভাবিক একটা পরিবেশ পেয়েছি। জনগণের কাছে আমরা অবাধে যেতে পারছি, মানুষ আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছে। আমাদের এতদিনের তৈরি করা জনশক্তি, কর্মী মাঠে ময়দানে কার্যক্রম করছে। কাজ আমাদের সবসময়ই ছিল, এখন হয়তো পরিবেশ বাধাহীন হওয়ার কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রমটা সবার কাছে দৃশ্যমান হয়েছে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত