ঢাকা ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘মার্চ ফর ইউনিটিতে’ জনস্রোত

শেখ হাসিনার ফাঁসি দাবি
‘মার্চ ফর ইউনিটিতে’ জনস্রোত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ ফর ইউনিটিতে’ অংশ নিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জনস্রোতের ঢল নামে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ছাত্র-জনতা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা যেন জনসমুদ্রের ঢল নামে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা বিপ্লবীরা সকাল থেকে শহীদ মিনারে ও আশপাশে অবস্থান করতে দেখা যায়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশের মঞ্চে, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম-সংগ্রাম’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন ভারতে’, ‘একটা একটা খুনি ধর, ধইরা ধইরা বিচার কর’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এছাড়া কর্মসূচিতে অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া আহতরাও আসেন।

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। শিক্ষার্থী ও জনতা সেখানে শেখ হাসিনাসহ জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানান। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে শহীদ মিনার এলাকায় সরেজমিন এসব চিত্র দেখা গেছে। এর আগে সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা।

এসময় ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন নিপাত যাক’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি-আজাদি’, ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’-প্রভৃতি স্লোগান দিতে শোনা যায় বিক্ষোভকারীদের। বক্তারা বলেন, শহীদদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি, এর মধ্যে স্বৈরাচারকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন কেউ কেউ। যখনই আমরা চিরতরে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে চাই, তখনই সুশীল বেশে কিছু ব্যক্তি ও দল বিরোধিতায় নেমে যায়। আমরা প্রয়োজনে তাদেরও প্রতিহত করব।

সরেজমিন দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারের আশপাশে অবস্থান নিচ্ছেন। চেয়ার বিছিয়ে শহীদ মিনারের সামনেও অনেক বিপ্লবীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। অনেকের মাথায় দেশের পতাকা বাঁধা রয়েছে।

চট্টগ্রাম, নাটোর, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ছাত্র-জনতাও সকাল থেকে শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান নেন এবং পর্যায়ক্রমে তারা মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে জড়ো হন।

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আজ শহীদ মিনারে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করার কথা ছিল। পরে অন্তর্বর্তী সরকার এ ঘোষণাপত্র পাঠ করবে জানালে আজ ঘোষণাপত্র পাঠ হবে কি না তা নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হয়। গতকাল সোমবার রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে নিজেদের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে বলা হয়, গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি পালন করা হবে।

‘মার্চ ফর ইউনিটিতে’ গণহত্যার বিচার চাইলেন সারজিস : জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম অংশ নিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ সমাবেশে। জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার বিচার ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ ফর ইউনিটিতে’ সমাবেশে সারজিস বলেন, আমরা সরকারের কাছে এই গণহত্যার বিচার চাই। আমরা পাচার অর্থ ফেরত চাই, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ চাই এবং আহত যোদ্ধাদের সুচিকিৎসা চাই। সরকারকে আহ্বান জানাতে চাই, আমাদের দেশ সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে যাবে। কিন্তু সেই সুযোগে যদি কেউ আমাদের মাথায় উঠে বসতে চায় তাদের মাথা থেকে ফেলে দিতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশে যোগ দিতে আসা গাড়িবহরে হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে কীভাবে আমাদের সহযোদ্ধাদের ওপরে হামলা হয়? প্রশাসন কি করে? যদি কেউ সচিবালয়ে বসে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করে সেই ষড়যন্ত্রকে সমূলে উৎখাত করতে হবে।

১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে -হাসনাত : আগামী ১৫ জানুযারির মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘ফার্চ ফর ইউনিটি’ সমাবেশে একথা বলেন তিনি। সমাবেশে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র জারি হওয়ার আগপর্যন্ত আপনারা পাড়া-মহল্লায় মানুষের কাছে যাবেন। তারা কী বলতে চায় সেসব কথা নিয়ে আসবেন। তিনি বলেন, আমরা ৩ আগস্ট এই শহীদ মিনার থেকে এক-দফা ঘোষণা দিয়েছিলাম। এই অভ্যুত্থান অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। এজন্যই পুলিশ, সচিবালয়ে অনেকেই আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আপনাদের বলি আপনারা রিয়েলিটি মেনে নেন। খুনি হাসিনার এই দেশে পুনর্বাসন হবে না। আমরা তাকে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়েছি। তিনি আরো বলেন, আমরা যারা অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছি, সারা দেশের মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ হয়নি। সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে।

কোনো বিপ্লবীর গায়ে যদি হাত পড়ে, সরকারকে এর দায় নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে পারিনি। গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ যে নির্যাতন, নিপীড়ন, গুম, খুন করেছে; সেগুলোর বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হতে থাকবো।

বক্তব্য শেষে হাসনাত ‘এই মুহূর্তে দরকার, বিচার আর সংস্কার’ স্লোগান দিতে থাকেন। বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, আপনাদের সাথে আবারো দেখা হবে ১৫ জানুয়ারিতে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র নিয়ে।

এর আগে গত সোমবার দিবাগত রাতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, জুলাই-আগস্টে সংগঠিত গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আবির্ভূত জন-আকাঙ্ক্ষা তথা ফ্যাসিবাদিব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কায়েমের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ এক ঐতিহাসিক পটভূমিতে আবির্ভূত হয়েছে। হাজারো শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি ও জন-আকাঙ্ক্ষার দলিলস্বরূপ ‘জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র’ অত্যাবশ্যক ছিল। এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের ঐতিহাসিক দায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপর বর্তায়। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার পক্ষে এই ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্রের প্রণয়ন ও ঘোষণার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম। তিনি বলেন, আমাদের উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের আপামর ছাত্র-জনতার মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত ও ইতিবাচক সাড়া সঞ্চারিত হয়েছে। এমতাবস্থায় ছাত্র-জনতার আহ্বানে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতা এই সময়পোযোগী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত