ঢাকা ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শীতে কাঁপছে সারা দেশ

শীতে কাঁপছে সারা দেশ

জানুয়ারির শুরুতেই শীতে জবুথবু সারা দেশ। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ঢাকায় তাপমাত্রা ১৫ থেকে ১৩-তে নামতেই শীতে কাঁপছে ঢাকা। গত দুই দিনের দিন-রাতের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত দিনের ১৫ ডিগ্রি থেকে তাপমাত্রা আজ নেমে এসেছে ১৩ ডিগ্রিতে। অন্যদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, এই তাপমাত্রা আরো এক থেকে দুই ডিগ্রি পর্যন্ত কমতে পারে। এমনটি হলে শীতের তীব্রতা আরো বাড়বে। আজ রাজধানীর রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ। শীতে সব চাইতে কষ্টে আছে শ্রমজীবী মানুষ। এদিকে চলতি মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে।

রাজধানীতে শীত : দুই দিন ধরে রাজধানীর আকাশে সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি, কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে আছে। গতকালের তুলনায় ২ ডিগ্রি কমে গেছে তাপমাত্রা। হিমেল বাতাসের সঙ্গে তাপমাত্রা কমায় শীতের প্রকোপ বেড়ে গেছে। তাপমাত্রা আরো সামান্য কমতে পারে। পুরো ডিসেম্বর মাসজুড়ে রাজধানীতে শীত আসা নিয়ে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করেছে অনেকে। সেই মশকরার জবাবই দিলো এবার শীত। গত মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে হঠাৎ করেই কমতে শুরু করেছে রাজধানীর তাপমাত্রা। একই সঙ্গে হিমেল বাতাসে জবুথবু হয়ে যায় সব। পরদিন বুধবার কনকনে বাতাস বেড়ে যাওয়ায় শীতের অনুভূতি বাড়তে শুরু করে। এরমধ্যে সূর্যের দেখা নেই আজ দুদিন হলো। ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের তাপ মাটিতে না আসায় শীত যেন জাঁকিয়ে বসেছে। ডিসেম্বর মাসের হালকা ঠান্ডা শ্রমজীবী মানুষেরা উপভোগ করে এখন। শারীরিক পরিশ্রমে ঘাম হয় না। গরমের সেই কষ্টও হয় না। কিন্তু গত দুদিনের শীতে কাবু হয়ে পড়েছে তারাও। কাজে বের হয়ে কনকনে বাতাসে রিকশা চালাতে পারছেন না রিকশা চালকরা।

ঢাকার বাইরে শীতের প্রকোপ : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। যা গত বুধবার ছিল ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি। চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, জেলায় গত ১৫ দিন ধরে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকলেও, নতুন বছরের দ্বিতীয় দিন থেকেই শীতের প্রকোপ বেড়েছে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষজনের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, দুই দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না উত্তরের জেলা দিনাজপুরে। সেই সঙ্গে হিমেল বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধিতে নাজেহাল হয়ে পড়েছেন এই এলাকার মানুষ। অবস্থানগত কারণেই যেসব জেলায় শীতের প্রকোপ বেশি তার মধ্যে অন্যতম দিনাজপুর। দুই দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রিরও বেশি কমেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে হিমেল বাতাসেরও গতি। ফলে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। পাশাপাশি কৃষকরাও রয়েছেন বেশ সমস্যার মধ্যে।

পঞ্চগড় : শীতের দাপট অব্যাহত রয়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। কনকনে বাতাসে বাড়ছে শীতের অনুভূতি। গত মঙ্গলবার রাত থেকে ঘন কুয়াশায় ছেয়ে যায় জেলার পথঘাট। রাতভর বৃষ্টির মতো ঝরতে থাকে কুয়াশা। গত কয়েকদিন ধরে জেলায় তাপমাত্রা ১২ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ওঠানামা করছে। কয়েকদিন ধরে ভোর থেকে পঞ্চগড়ে ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। হিমালয় থেকে আসা কনকনে হিমেল হাওয়া শীতের তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। শীত থেকে রক্ষা পেতে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছেন মানুষ।

আবহাওয়া অধিদফতর যা জানালো : উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও আশপাশের এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উল্টরপূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ কী বলছেন : আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ বলেন, রাজধানীর তাপমাত্রা অন্য এলাকার তুলনায় বেশি হলেও হিমেল বাতাসের কারণে শীতের অনুভূতি বেশি হচ্ছে। এই তাপমাত্রা আরো সামান্য পরিমাণ কমতে পারে। এদিকে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের তাপমাত্রা আরো কিছুটা কমে যেতে পারে বলে তিনি জানান। এদিকে আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, আগামীকাল শুক্রবার তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তবে তাতে শীতের অনুভূতি কমবে না। একই থাকার সম্ভাবনা আছে। এরপর শনিবার কনকনে এ বাতাস কমে আসলে শীতের অনুভূতি কিছুটা কমতে পারে। তিনি বলেন, এই মাসের দশ তারিখের দিকে বছরের প্রথম শৈত্যপ্রবাহের মুখোমুখি হতে পারে দেশ।

আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাস : অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্য রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে সারা দেশের কোথাও কোথাও দিবাভাগে শীতের অনুভূতি বিরাজমান থাকতে পারে।

তাপমাত্রা : গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় আজ ১৩ দশমিক ৮, যা গতকাল ছিল ১৫; রাজশাহীতে ছিল ১২, আজ ২ ডিগ্রি কমে ১০ দশমিক ৫; রংপুরে কালকেও ১২ দশমিক ৫, আজকেও তাই আছে; ময়মনসিংহে আজ দুই ডিগ্রি কমে ১৩ দশমিক ৫, ছিল ১৫; সিলেটেও ছিল ১৬ দশমিক ২ আজকেও ১৬ দশমিক ২, চট্টগ্রামে আজ ১৬ দশমিক ৫, ছিল ১৫ দশমিক ৭; খুলনায় আজকে দুই ডিগ্রি কমে ১২ দশমিক ৩, যা গতকাল ছিল ১৪ দশমিক ৫; বরিশালে ছিল ১৪ দশমিক ৩, আজকে প্রায় একই ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এর বাইরে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকা জেলাগুলো হচ্ছে- ঈশ্বরদীতে ১০, দিনাজপুরে ১০ দশমিক ২, বাঘাবাড়ি ও বদলগাছিতে ১০ দশমিক ৪ এবং যশোরে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

প্রসঙ্গত, তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়, ৬ দশমিক ১ থেকে ৮ ডিগ্রি হলে মাঝারি আর ৪ দশমিক ১ থেকে ৬ ডিগ্রি হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।

দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস : দেশে চলতি মাসে তিন থেকে পাঁচটি শৈত্যপ্রবাহের শঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কম থাকার কারণে শীতের অনুভূতি বাড়বে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টির আশঙ্কাও রয়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কম থাকায় চলতি মাসে শীতের অনুভূতি বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, চলতি মাসে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে দুয়েকটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। দেশের পশ্চিম, উত্তর ও উত্তরপূর্বাঞ্চলে দুটি মাঝারি থেকে তীব্র এবং দেশের অন্যত্র তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ সময় দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি থাকতে পারে। তবে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কম থাকার কারণে শীতের অনুভূতি বাড়বে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত