ডিবিতে ‘আয়নাঘর-ভাতের হোটেল’ থাকবে না

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বহুল আলোচিত বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ কিংবা ডিবির ‘ভাতের হোটেলের’ অস্তিত্ব বর্তমানে নেই বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, এখন আয়নাঘর বলতে কোনো কিছু নাই। এখানে আয়নাঘর বলতে কোনো কিছু থাকবে না; এখানে কোনো ভাতের হোটেল থাকবে না।

গতকাল সোমবার দুপুরে মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয় পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিরোধী মতের বহু মানুষকে তুলে নিয়ে বিচারবহির্ভূতভাবে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখার অভিযোগ ওঠে, সেইসব বন্দিশালার প্রতীকী নাম রাখা হয়েছে ‘আয়নাঘর’।

তুলে নেয়া সেই সব মানুষদের কেউ কেউ বহু দিন পর পরিবারের কাছে ফিরে বীভৎস নির্যাতনের বিবরণ দিলেও অনেকের খোঁজ এখনও মেলেনি। বিভিন্ন বাহিনীর আওতাধীন এমন আয়নাঘরের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ‘গুম তদন্ত কমিশন’।

আওয়ামী লীগ আমলেই ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ তার কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে আসা মানুষদের ভাত খাইয়ে হয়েছিলেন তুমুল আলোচিত ও বিতর্কিত। ডিবি কার্যালয়কে ‘ভাতের হোটেল’ হিসেবে আলোচিত করা এই কর্মকর্তা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে পলাতক রয়েছেন।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ৫ মাসের মাথায় সেই ডিবি কার্যালয় পরিদর্শনে এসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘আয়নাঘর ও ভাতের হোটেল’ প্রসঙ্গ টেনে বললেন, ডিবি সিভিল ড্রেসে কাউকে অ্যারেস্ট করবে না, তাদের জ্যাকেট পরতে হবে এবং আইডি কার্ড শো করতে হবে।

তারা আইনের বাইরে কোনো কাজ করবে না। আইনের বাইরে যদি আমিও কোনো আদেশ করি, তারা যেন না করে।

ডিবি কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেশে যেভাবে আছে, এটা থেকে কীভাবে আরো উন্নতি করা যায়- আলোচনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক, কিন্তু এটা আরো উন্নতি করার অবকাশ রয়েছে। এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রচুর ছিনতাইকারী ধরা পড়ছে। ছিনতাইয়ের সংখ্যা বেড়ে গেছে, অস্বীকার করব না। কিন্তু ধরা হচ্ছে প্রচুর।

লিবিয়াতে বন্দি রেখে মুক্তিপণ আদায় প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যদি ভুক্তভোগী আমাদের কাছে আসে, তাদের আইনের আওতায় অবশ্যই আনা হবে, যারা এটা করতেছে। আর আপনার কাছে যদি ২-১ জন থাকে, আমাদের কাছে পাঠান- অবশ্যই অ্যাকশান নেব।

যারা লিবিয়ায় গিয়ে আটকে আছে, এরা কিন্তু আমাদের বড় সোর্স অব ইনকাম। তারা কিন্তু বহু কষ্ট করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। তারা লিবিয়া আটকে আছে, হয়তো যেতে চাইছিল অন্য একটা দেশে। এরা আমাদের বড় সম্পদ। এদের ক্ষেত্রে যতোটা আমাদের পক্ষে করা সম্ভব, অবশ্যই আমরা করব।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ‘মিথ্যা সংবাদের’ পাল্টায় দেশের সাংবাদিকরা সত্য প্রকাশ করায় এখন তাদের ‘মিথ্যা প্রচার’ কমেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আপনারা সত্যি সংবাদ প্রকাশ করলে অ্যাকশন নিতে সুবিধা হয়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এবারের এসআই নিয়োগের ক্ষেত্রে আপনারা বলতে পারবেন কি না- কারো জন্য সুপারিশ করছি? আমি যদি কোনো দুর্নীতি করি, আপনারা প্রকাশ করে দেন। বাট সত্যি ঘটনা প্রকাশ করেন। আপনারা বলেন, এ জায়গায় টাকা খাইছেন’, আমার কোনো আপত্তি নাই যে এই জায়গায় অপকর্ম করছেন। কিন্তু যেটা করি নাই- ওইটা যেন না বলেন।

মিয়ানমার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে

টেকনাফের সাম্প্রতিক অপহরণের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, টেকনাফে যেটা অপহরণ হইছে, আবার সবাই উদ্ধার হয়ে গেছে। মিয়ানমার বর্ডার সম্পর্কে তো সবাই অবগত আছেন।

আমাদের বর্ডার বেল্টের অপজিটে মিয়ানমার অংশ পুরাটা আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে। মিয়ানমার সরকারের কোনো আইনশৃঙ্খলা- কিছুই সেখানে নাই।

তিনি বলেন, আমাদের কিন্তু দুই দিকেই যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে। আরাকান আর্মির সাথেও, মিয়ানমার সরকারের সাথেও যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে। আরাকান আর্মি কিন্তু অথোরাইজড না। মিয়ানমার সরকারকেই বৈধ সরকার বলতেছি। এখানে বড় ধরনের একটা সমস্যা আছে। কিন্তু আমরা দুইপক্ষের সাথেই যোগাযোগ রাখছি।

জাহাঙ্গীর বলেন, বর্ডার যেন শান্ত থাকে, আমাদের যেন কোনো অসুবিধা না হয়, আমরা সজাগ আছি। আমাদের বর্ডার কিন্তু পুরোটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।

রাস্তায় দেখেই বোঝা যাইতেছে, তারা উশৃঙ্খল ছিল

বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় ৪০তম ক্যাডেট এসআই ব্যাচের ৩২১ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে। চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে দুদিন ধরে তারা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রত্যেকটা একাডেমিতে শৃঙ্খলাজনিত কারণে যদি কেউ আউট হয়, তাকে তো নেয়া হয় না। এটা শুধু পুলিশ একাডেমিতে না, সব একাডেমিতেই হয়।

আপনারা জানেন পুলিশ একাডেমি সবচেয়ে পুরাতন এবং নামকরা। এই উপমহাদেশের সবচেয়ে নামকরা প্রতিষ্ঠান।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তাদের শৃঙ্খলাজনিত কারণে বের করছে, এখন এরা বিশৃঙ্খল কাজ করতেছে। এরা যদি শৃঙ্খল হইতো, তারা তো প্রোপারভাবে অ্যাপ্লিকেশন করতে পারত।

পুলিশ একাডেমি যদি ঠিকমতো কাজ না করে থাকে, আইজি সাহেবের কাছে বলতে পারত। কিন্তু তারা এটা না কইরা গেছে রাস্তায়। এতেই তো বোঝা যাইতেছে, তারা উশৃঙ্খল ছিল।