গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করতে বাংলাদেশ যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে বলছে, ভারত তখন তার ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে খবর এসেছে দেশটির সংবাদমাধ্যমে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানেন, এমন ব্যক্তিদের বরাতে হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছে, হাসিনার ভারতবাস দীর্ঘায়িত করার সুযোগ দিতে সম্প্রতি তার ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে হাসিনাকে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ার যে গুঞ্জন রয়েছে, তা উড়িয়ে দিয়েছে ওই সূত্রগুলো, কারণ শরণার্থী এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ের মতো বিষয়গুলো নিয়ে ভারতে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই।
ভারত ঠিক কবে শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে এবং কতদিনের জন্য তা বাড়ানো হয়েছে, সেসব তথ্য মেলেনি হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে।
পত্রিকাটি লিখেছে, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও) শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে চলে যান। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, ৫ আগস্ট দিল্লির হিন্দান বিমানঘাঁটিতে পৌঁছানোর পর থেকে শেখ হাসিনার সঙ্গে বাইরের কারো যোগাযোগ করার সুযোগ নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়েছে। তাকে এখন দিল্লির একটি সেইফ হাউজে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
আন্দোলন দমন করতে গিয়ে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। গণহত্যা ও গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বিচারের মুখোমুখি করার জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারতকে একটি কূটনৈতিক পত্র (নোট ভার্বাল) পাঠায় বাংলাদেশ সরকার। ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, দিল্লি সম্ভবত ওই পত্রের কোনো জবাব দেবে না, কারণ, তাদের ভাষায়, প্রত্যর্পণের জন্য যে ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, এক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ‘গুম’ এবং জুলাই অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে, যার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাসপোর্টও আছে। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, পাসপোর্ট অফিস থেকে জানানো হয়েছে, যারা ‘গুম এবং হত্যার’ সঙ্গে জড়িত, তেমন ২২ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। এবং জুলাই কিলিংয়ের সাথে জড়িত বা জুলাই কিলিংয়ের জন্য অভিযুক্ত এরকম ৭৫ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রয়েছেন।’
শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিলের বিষয় ভারতকে জানানো হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে আজাদ মজুমদার বলেন, ‘ওনার যে পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে, এটা কিন্তু ভারত সরকারও জানে এবং ভারত সরকার থেকে এরইমধ্যে বলা হয়েছে যে, ওনাকে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করা হয়েছে।’