বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনলাইন আবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশের ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পাকিস্তানিরা যেসব বাধার সম্মুখীন হতেন, সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে আসতে ইচ্ছুক পাকিস্তানিরা এখন অনলাইনে আবেদন করলে সহজেই পাবেন দেশটির ভিসা। পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইকবাল খান গতকাল রোববার জানিয়েছেন এ তথ্য। এ দিন দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে লাহোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এলসিসিআই) একটি সভায় যোগ দেন তিনি। সেখানে ভিসার বাধা কেটে যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের জনগণের সঙ্গে ভালোবাসাপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী এবং বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যকার পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হওয়া এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন এবং এক্ষেত্রে এলসিসিআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসার পর ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শুরু করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এই বিচারকে কেন্দ্র করে তিক্ততা শুরু হয় ঢাকা এবং ইসলামাবাদের মধ্যে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শেষ হলেও তিক্ততার অবসান হয়নি ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে। এর জেরেই গত কয়েক বছর ধরে সর্বনিম্ন কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে। তবে পরিস্থিতি উল্টে যায় গত ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী জনতার অভুত্থানে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পলায়ন এবং তার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আবার সুবাতাস বইতে শুরু করে। গত মাসে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক জোট ডি-৮ সম্মেলন উপলক্ষে মিসরের রাজধানী কায়রো গিয়েছিলেনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস। সেখানে সম্মেলনের অবসরে বৈঠক করেন দুই দেশের সরকার প্রধান। সেই বৈঠকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধির ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছান ইউনূস এবং শেহাবাজ। দুই দেশের রাসায়নিক দ্রব্য, সিমেন্ট, চিকিৎসা ও সার্জিক্যাল উপকরণ, চামড়া শিল্প, তথ্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেন তারা। বৈঠকে বাংলাদেশের ভিসাপ্রাপ্তি বিষয়ক জটিলতার বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন শেহবাজ শরিফ এবং ড. মুহম্মদ ইউনূস আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, এ ব্যাপারটি তার নেতৃত্বাধীন সরকার দেখবে।