ঢাকা ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শৃঙ্খলা ফেরাতে টানা রদবদল

পরিস্থিতি সামলে এগোচ্ছে পুলিশ

পরিস্থিতি সামলে এগোচ্ছে পুলিশ

বিগত ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশ সদস্যদের ন্যক্কারজনকভাবে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। কেউ আওয়ামী লীগের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেই তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে হামলা, মামলা ও নির্যাতন করা হয়েছে। তবে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতির পর পুলিশের সেই পুরোনো চিরচেনা রূপ বদলে গেছে। আইনের পোশাক গায়ে জড়িয়ে যারা বেআইনি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এখন পরিস্থিতি সামলে নিয়ে ভেঙেপড়া পুলিশিব্যবস্থা সক্রিয় হচ্ছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত থানাগুলোয় মামলা ও ডিজির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পুলিশকে গতিশীল করতে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে রদবদল এবং পদায়ন করা হচ্ছে।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাপক রদবদল হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশে। মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পদসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের চুক্তি বাতিল, অবসরে পাঠানো ও বদলি করা হয়। সরকার পতনের পর সর্বপ্রথম ৬ আগস্ট রাতে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। তার জায়গায় নতুন আইজিপি হিসেবে নিয়োগ করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলামকে। পরদিন ৭ আগস্ট র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ডিজি, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারসহ চার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। গত ১৩ আগস্ট ডিএমপি এলাকায় দায়িত্বরত বেশিরভাগ উপ-কমিশনারকেও সরিয়ে দেয়া হয়। ১৫ আগস্ট পুলিশ সদর দফতর ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদর দফতর থেকে পৃথক ৬টি প্রজ্ঞাপন ও কার্যালয় আদেশের মাধ্যমে আরো ৩২ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। ১৭ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) পদমর্যাদার ১২ জন ও সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) পদমর্যাদা এক কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। সর্বশেষ গতকাল পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৫০ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ২৪ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি করা হয়েছে। বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের ডিএমপি, পুলিশ হেডকোয়ার্টার, সিআইডি, এসবি, র‍্যাব, সিএমপি, পিবিআই, এপিবিএন, আরএমপি এবং বিএমপিসহ বিভিন্ন ইউনিটে বদলি করা হয়েছে। গত পাঁচ মাসে সারা দেশে পোশাকধারী দুই লাখ দুই হাজার পুলিশের বিপরীতে রদবদল করা হয়েছে কমবেশি ৪৭ হাজার সদস্য। অল্প সময়ে এত সংখ্যক পুলিশ সদস্যের কর্মস্থল বদলের ঘটনা নজিরবিহীন।

গত দুই দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লা ও বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশ তৎপর রয়েছেন। নিরাপত্তা কাজে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্য কাজ করছেন। গত রোববার রাতে শিক্ষা ভবনের গেটের সামনে পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সদস্যরা চেকপোস্ট স্থাপন করেন। সড়কে চলাচলকারী যানবাহনকে তল্লাশি ও জবাবদিহির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। গাড়ির কাগজ ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন যানবাহনগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা (মামলা) নেয় ট্রাফিক পুলিশ।

রাজধানীর রমনা, কলাবাগান, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, কোতোয়ালি, চকবাজার, সূত্রাপুর, ডেমরা, গেন্ডারিয়া, মতিঝিল, তেজগাঁও, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর, শেরেবাংলা নগর, হাতিরঝিল, শাহ আলী, কাফরুল, ভাষানটেক, দারুসসালাম, রূপনগর, ক্যান্টনমেন্ট, বনানী, উত্তরা পশ্চিম, উত্তরখান ও বিমানবন্দর থানার কার্যক্রমে গতি ফিরেছে। আগস্টের পর রাজধানীর ব্যস্ততম থানা তেজগাঁওয়ে প্রতি মাসে কমবেশি ২৫টি মামলা নথিভুক্ত হচ্ছে। সেই হিসেবে গত পাঁচ মাসে তেজগাঁও থানায় প্রায় শতাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলার বেশিরভাগই মারামারি ও চাঁদাবাজিকেন্দ্রিক। আর তেজগাঁও থানায় প্রতি মাসে সাধারণ ডায়রি (জিডি) প্রায় তিন শতাধিক। শুধু তেজগাঁও থানায় নয়, রাজধানীর বেশিভাগ থানায় প্রতিদিন মামলা ও জিডি বাড়ছে। রাজধানীতে থানার কার্যক্রমের পাশাপাশি গতি ফিরেছে ট্রাফিক পুলিশে। রাজধানীর সড়কে ট্রাফিকের কাজে পুলিশের সঙ্গে কিছু কিছু পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব পালন করছেন।

তেজগাঁও থানায় কর্মরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, গত ৫ আগস্টের পর আমরা স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরেছি। তেজগাঁও এলাকায় শৃঙ্খলা ফেরাতে নিয়মিত কাজ করছে পুলিশ। আমাদের সবার সমর্থন ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পেশাদার কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব পেলে মনোবল ফিরে পাওয়ার মাধ্যমে বাহিনী দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে। এ বিষয়ে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, পুলিশে বদলি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। সরকার পরিবর্তনে পুলিশেও বড় ধরনের রদবদল হয়েছে। যাদের কোনো অভিযোগ নেই, পারফরম্যান্স ও নথিপত্রের রেকর্ড ভালো, তাদেরই ভালো জায়গায় পদায়ন করা জরুরি।

সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট ঘিরে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একটু উন্নতি হলেও সন্তোষজনক নয়। আপনারা জানেন, ঢাকার প্রায় সব পুলিশকে আমরা চেঞ্জ করছি। তাদের অলিগলি চিনতেও সময় লাগবে। তাদের ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে সময় লাগবে। তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। সামনে আরো উন্নতি হবে। উল্লেখ, শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর ভেঙেপড়ে পুলিশের চেইন অব কমান্ড। ছাত্র-জনতার সবচেয়ে বেশি তোপের মুখে পড়ে পুলিশ। সারা দেশে বাহিনীটির থানা ও ট্রাফিক স্থাপনায় হামলা হয়। সেই সাথে পুলিশ সদস্যদের মারধর ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। একপর্যায়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের পুলিশ শূন্য ট্রাফিক সিগন্যাল ও সড়কে যান চলাচলের শৃঙ্খলার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় ছাত্র-জনতা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত