ঢাকা ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গণঅনশন-শাটডাউন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবিতে চলমান অনশনে এ পর্যন্ত ১৫ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গত রোববার থেকে এই কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এবার অনশনরত শিক্ষার্থীদের সমর্থনে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে অচল হয়ে পড়েছে শিক্ষাঙ্গনটি। গতকাল সোমবার সকালে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকসহ একাধিক ভবনে তালা লাগিয়ে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি শুরু করেন। তারা জানান, তাদের ভাই তাদের জন্য অনশন করে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। প্রশাসন কোনো উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়নি। এজন্য তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।

অনশনরত শিক্ষার্থীরা জানান, বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা না এলে তারা সচিবালয়ের অভিমুখে যাত্রা শুরু করবেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এরই মধ্যে অনশনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের চলমান এই গণঅনশনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও সর্বাত্মক একাত্মতা পোষণ করেছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, প্রশাসন এখনো চিকিৎসা ব্যয় ঠিকভাবে দিচ্ছে না। তাদের চিকিৎসাসহ বিভিন্ন খরচ শিক্ষার্থীদের টাকায় হচ্ছে। এই প্রশাসন সব দিক দিয়ে ব্যর্থ। তারা দাবি পূরণ হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস হতে দেবেন না।

অনশনরত শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা অনশন ভাঙব না। সবার কাছে অনুরোধ, আপনারা যারা অনশন করছেন না- আপনারা ক্লাস-পরীক্ষা বয়কট করুন। আমাদের দাবি পূরণ করেই আমরা বাড়ি যাব।’ এর আগে সকালে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মো. মাকছুদুল হক নামে এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে ভর্তি আছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে গতকাল বিকালে তিন দফা দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অনশনরত শিক্ষার্থীরা সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ছয় শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থীও অংশ নেন। গতকাল সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত তারা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নেবেন। সেখানে আমরণ অনশনে বসবেন।

দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর এবং শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী আবাসনসহ তিন দফা দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল সোমবার বিকেল ৫টার দিকে সচিবালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আশপাশের এলাকায় দেখা দিয়েছে যানজট।

এর আগে দুপুর ২টায় সেনাবাহিনীকে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তর নিয়ে সচিবালয় থেকে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। এ চিঠি আসার পর অনশনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিনটি দাবি করা হয়।

শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো- ১. সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরের চুক্তি অনতিবিলম্বে স্বাক্ষর করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষ বৈঠকের মাধ্যমে তা শেষ করতে হবে এবং ভিজ্যুয়ালি সবার সামনে তা উপস্থাপন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা অনশনে থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার নিয়ে তা প্রকাশ করতে হবে। কয়েক মাস সময় নেয়ার নাম করে কোনো প্রকার দীর্ঘসূত্রতার বন্দোবস্ত করা চলবে না। ২. পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের স্টিল বেইজড ভবনের কাজ দ্রুত শুরু এবং শেষ করতে হবে। ৩. যতদিন পর্যন্ত আবাসনব্যবস্থা না হয়, ততদিন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলেই আমাদের এই কার্যক্রম আরো সহজ ও ত্বরান্বিত হয়েছে। আমাদের কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে। বৈঠকে প্রকল্পের অবস্থাও বিশ্লেষণ করা হবে। এরপর একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সভায় আমাদের দাবির অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত