ঢাকা ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ট্যানারি গোডাউনে আগুন

নিমিষেই ২৫ কারখানা পুড়ে ছাই
ট্যানারি গোডাউনে আগুন

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিপল্লী সাভারে স্থানান্তর হলেও এখন কিছু ট্যানারির গোডাউন হাজারীবাগেই রয়ে গেছে। এসব গোডাউন স্থানীয়দের কাছে অস্বস্তিরকারণ হয়ে দাঁড়ানোর মধ্যেই গতকাল হাজারীবাগে ট্যানারির গোডাউনে আগুন লেগেছে, এতে নিমিষেই ২৫ কারখানা পুড়ে ছাই হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতিও ব্যাপক হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে গতকাল বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানা গেছে, আগুন লাগা ভবনটিতে ফিনিক্স ট্যানারি লিমিটেডের চামড়া ও চামড়াজাত কেমিক্যাল মজুদ রাখা ছিল। এছাড়াও চামড়া ও জুতার দোকান রয়েছে। ভবনটির পাঁচ ও ছয়তলায় আগুন লাগে। এ কারণে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া বলেন, এই ভবনে প্রায় ৬০টি ছোট ছোট কারখানা আছে। এসব কারখানায় চামড়ার জুতা, ব্যাগ, বেল্ট তৈরি করা হয়। গতকাল শুক্রবার হওয়ার সব কারখানা বন্ধ ছিল। দুপুরে জুমার নামাজের পরে হঠাৎ আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। প্রথমে ভবনটির পাঁচতলায় আগুন লাগে। পরে চারতলা ও ছয়তলাতেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে ভবনটিতে থাকা প্রায় ২৫টির বেশি কারখানা পুড়ে গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের এইদিনে একই ভবনে আগুন লাগে। সে সময় ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিটের প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে ২০১৪ সালেও ভবনটিতে আগুন লেগেছিল। ফিনিক্স লেদার নামে কারখানার ওই গুদামে বেলা ২টা ১৪ মিনিটের দিকে আগুন লাগে। বিকেলে পৌনে ৫টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরের এক বার্তায় জানানো হয়েছে। সাততলা ভবনের পঞ্চম তলায় গুদামটি অবস্থিত। সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করে বলে বাহিনীর সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার জানান। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি জানিয়ে হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ভবনে আটকে পড়া ব্যক্তিরা নিরাপদে বেরিয়ে আসেন। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি গুদামের আগুনের ঘটনায় আটকেপড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে সহায়তায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সদস্যরা কাজ করেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, গতকাল দুপুরের দিকে ভবনটিতে আগুন লাগে, ২টা ১৪ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। সংস্থাটির সদর দফতরের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার জানান, সাত তলা ভবনের পাঁচ তলায় এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পরে আগুন ছয় তলায় ছড়িয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে হাজারীবাগ থানা পুলিশ, র‌্যাব, স্কাউটসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়তায় করছে। তবে উৎসুক জনতার ভিড়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের বেগ পেতে হয়। পরে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরাও যোগ দেন।

শুক্রবার বিকেলে হাজারীবাগে আগুন লাগা ভবনটির সামনে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, রাজধানীর হাজারীবাগ বাজারের ফিনিক্স লেদারের গোডাউনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসকে। আগুন লাগা ভবনটিতে ছিল না কোনো সেফটি প্ল্যান।

তিনি বলেন, এটি একটি পুরাতন ভবন। ভবনটিতে মিশ্র পদার্থ ছিল, কাঁচামাল, প্লাস্টিক, গার্মেন্টস পণ্য এবং উপরে ছিল জুতার কারখানা। জুতার কারখানায় বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ রয়েছে। আমরা ভয় পাচ্ছিলাম এখানে ঘিঞ্জি এলাকা, আগুন বিস্তার লাভ করলে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটতো। সেটি আমরা রোধ করতে পেরেছি, এটি আমাদের বড় সফলতা।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মতোই। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে প্রায় ৩ ঘণ্টা। আমাদের সক্ষমতার পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি। কারণ পানির সংকট, ভেতরের দাহ্য বস্তু, উৎসুক জনতার ভিড় ও চাপা (সরু) রাস্তা। ভবনটিতে ছিল প্লাস্টিক, লেদারসহ দাহ্য বস্তুর কারখানা। ছিল না কোনো অগ্নিনিবারক যন্ত্র। ভবনে ফায়ার সেফটির কোনো প্ল্যান ছিল না। কয়েকবার নোটিশও দেয়া হয়েছিল ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে।

আগুন ভবনটির ৫, ৬ ও ৭ তলা পর্যন্ত ছড়িয়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, নিচের দিকে আগুন ছিল না। আগুনের সূত্রপাত এখনো বের করা যায়নি। তবে ইলেকট্রনিক শর্ট সার্কিট কিংবা সিগারেটের কারণে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তবে তদন্তের পর মূল কারণ জানা যাবে।

মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী আরো বলেন, সরকারের আইনে ফায়ার সেফটি অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু এই ভবনটিতে দাহ্য পদার্থ থাকার পরেও কোনো ফায়ার সেফটি ছিল না। আগুন ছড়িয়ে পড়লে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারত।

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সব ইকুইপমেন্ট এখানে আনা সত্ত্বেও আমরা কাজ করতে পারিনি। কারণ এখানকার রাস্তা অনেক ছোট এবং ভবন একটির সঙ্গে আরেকটি লাগানো। আমরা ১৩টি ইউনিট এনেছিলাম; কিন্তু সব ইউনিট কাজ করতে পারিনি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণ হলেও এখনো নির্বাপণ হয়নি। আগুন নির্বাপণের পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত