ফের যাত্রা শুরু ডোনাল্ড ট্রাম্পের

ড. ইউনূসের শুভ কামনা

প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশ সময় গতকাল সোমবার রাত ১১টায় (মার্কিন সময় দুপুর ১২টা) যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই রিপাবলিকান এই নেতা শতাধিক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। আইনিভাবে বাধ্যতামূলক নির্বাহী আদেশ ছাড়াও প্রোক্লেমেশন এবং অন্য প্রেসিডেন্টীয় নির্দেশাবলি অন্তর্ভুক্ত করেন। ওয়াশিংটন ডিসির জনাকীর্ণ এক ময়দানে ২০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে দুই লাখের মতো ট্রাম্প সমর্থক হাজির হোন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ করায় গতকাল এক ক্ষুদে বার্তায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মেয়াদ শুরুতে শুভ কামনা জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা তাকে শুভেচ্ছা বার্তা প্রেরণ করেছিলেন। সেই বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা দৃঢ় বিশ্বাস ব্যক্ত করেছিলেন যে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচনের জন্য দুই দেশ কাজ করবে। আমরা সেই বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করছি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মেয়াদ শুরুতে তাকে শুভ কামনা জানাই।

ট্রাম্প তার সমর্থকদের জানিয়েছেন, তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কর্মসূচি বাড়ানোর জন্য নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এছাড়া তিনি ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি নামে একটি নতুন দপ্তর গঠন করেন। সেই সঙ্গে ১৯৬৩ সালে ৩৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত রেকর্ড প্রকাশ ও সামরিক বাহিনীকে আয়রন ডোম মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির নির্দেশ দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান ট্রাম্প। এছাড়াও ট্রাম্প সামরিক বাহিনী থেকে বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি নীতিমালা অপসারণ করেন। সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, নারীদের খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডারদের অংশগ্রহণ বন্ধ করবেন ও শিক্ষার নিয়ন্ত্রণ আবারো রাজ্যগুলোর হাতে ফিরিয়ে দেবেন।

অভিবাসন বিষয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও তিনি লক্ষাধিক অবৈধ অভিবাসীকে বহিষ্কার করার প্রতিশ্রুতি দেন। তার এই প্রধান নির্বাচনি অঙ্গীকার বাস্তবায়ন হলে কয়েক কোটি মানুষকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়া হতে পারে। তবে এই ধরনের কার্যক্রমের ব্যাপ্তি এতই বেশি, তা সম্পাদনে বেশ কয়েক বছর সময় আর অঢেল পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন হবে। ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাগুলো নিয়ে তার সমর্থকরা উৎসাহিত হলেও সমালোচকরা এগুলোকে চ্যালেঞ্জিং ও বিতর্কিত বলে উল্লেখ করেন। তবে এটা স্পষ্টভাবেই বলা যায়, প্রথম দিন থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও শপথ নেন। এর মাধ্যমে ট্রাম্প-ভ্যান্সের নেতৃত্বাধীন নতুন মার্কিন প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ ২০ জানুয়ারি দুপুর ১২টায় (গ্রিনেচ মান সময় ১৭.০০ বা বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত ১১টা) শুরু হয়। গত কয়েক বছরে ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম লনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হলেও এবার সেটি ক্যাপিটল রোটুন্ডায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শপথের দিন দুপুরে তাপমাত্রা মাইনাস ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকতে পারে। তবে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যারেড ও সংগীতানুষ্ঠান ইনডোর ভ্যানু ক্যাপিটল ওয়ান এরিনায়ে হয়। ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ট্রাম্প বলেন, ‘খুব ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে আমি প্রার্থনা, অন্যদের বক্তৃতা এবং আমার শপথ ও অভিষেক ভাষণটি ইউএস ক্যাপিটল হিলের হলরুমে আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছি, যেমনটি ১৯৮৫ সালে রোনাল্ড রিগান করেছিলেন।’ ‘ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানটি সরাসরি উপভোগ এবং প্রেসিডেন্সিয়াল প্যারেড আয়োজনে ক্যাপিটাল ওয়ান এরিনা (ইনডোর ভ্যানু) খুলে দেয়া হয়।

সাধারণত মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি নতুন প্রেসিডেন্টের শপথবাক্য পাঠ করান। এবার জন রবার্টস দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্পের শপথবাক্য পাঠ করান। মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের প্রথম ধারায় নেয়া শপথে তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে শপথ করছি, বিশ্বস্ততার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের দায়িত্ব সম্পাদন করব এবং আমার সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রক্ষা, সংরক্ষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করব।’

ট্রাম্প, তার স্ত্রী মেলানিয়া এবং ট্রাম্প পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে ইউএস এয়ার ফোর্সের একটি উড়োজাহাজ স্থানীয় সময় গত শনিবার ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। সেখান থেকে ট্রাম্প পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ওয়াশিংটন উপকণ্ঠে অবস্থিত ভার্জিনিয়ায় তার গলফ ক্লাবে যান। গলফ ক্লাবে আতশবাজি পোড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় ট্রাম্পের শপথগ্রহণ উৎসব। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনই তিনি রেকর্ডসংখ্যক নির্বাহী আদেশে সই করেন।

২০০ মিলিয়ন ডলারের অভিষেক অনুষ্ঠান : অ্যাপলের টিম কুক এর আগে ক্যাপিটল হিলে ৬ জানুয়ারির তাণ্ডবকে ‘লজ্জাজনক দিন’ বলে উল্লেখ করলেও তিনি ট্রাম্পের অভিযোগের জন্য ১ মিলিয়ন অনুদান দিয়েছেন বলে জানা গেছে। কেবল কুক একা নন। আগামী ট্রাম্প প্রশাসনের অনুগ্রহ পেতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টায় ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত রেকর্ড ১৭০ মিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করা হয়। এ অর্থের পরিমাণ ২০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। গুগল, অ্যামাজন, মাইক্রোসফ্ট এবং মেটা ১ মিলিয়ন ডলার করে তহবিল সরবরাহ করে। সেইসঙ্গে ওপেন আইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যানও ১ মিলিয়ন ডলার দেয়। অন্যান্য বড় অর্থদাতার মধ্যে রয়েছে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার, আর্থিক পরিষেবা কোম্পানি ইনটুইট, স্টক-ট্রেডিং অ্যাপ রবিনহুড এবং ফোর্ড ও জেনারেল মোটরসের মতো অটোমোবাইল কোম্পানি। ট্রাম্পের আগের অভিষেকেও রেকর্ড পরিমাণ ১০৬.৭ মিলিয়ন ডলার অনুদান সংগ্রহ হয়েছিল। অন্যদিকে বাইডেন ২০২১ সালের অনুষ্ঠানের জন্য অনুদান হিসাবে মাত্র ৬১.৮ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন ।

অতিথি কারা : ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রযুক্তি জগতের বেশ কয়েকজন শীর্ষ ব্যক্তিত্ব; যেমন-ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, মার্ক জাকারবার্গ এবং বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যদিও ২০২০ সালে বাইডেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ছিলেন না ট্রাম্প। অতিথিদের মধ্যে আরো রয়েছেন বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামাসহ জীবিত সব সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে শপথ অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আমন্ত্রণ পেলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম নেই আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায়। পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে সৌজন্যমূলকভাবে বিদেশি কূটনীতিকদের অংশগ্রহণ থাকে। সাধারণত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয় না।

ট্রাম্প অবশ্য প্রচলিত রীতিনীতির ধার ধারেন না। তিনি শপথ অনুষ্ঠানে অনেক বিদেশি নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অতিথিদের তালিকায় ইউরোপের মধ্যমপন্থিদের বাদ দিয়ে অনেক কট্টর ডানপন্থি ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদদের আমন্ত্রণ জানান। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ক্যারি আন্ডারউড এবং লি গ্রিনউডের মতো জনপ্রিয় শিল্পীরা। এছাড়া ‘ওয়াইএমসিএ’ গানে পারফর্ম করেন ভিলেজ পিপল। গান গেয়েছেন কিড রক এবং বিলি রে সাইরাসও।

প্রায় এক ডজন শীর্ষ পর্যায়ের নিয়োগপ্রাপ্তদের ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ফেডারেল কর্মক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার দায়িত্ব দিয়েছেন। ট্রাম্পের আগের প্রশাসনে অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেটের পরিচালক রাশেল ভাউট শিডিউল এফ আদেশ পুনরায় চালু করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। এছাড়া সার্জিও গোর এবং জেমস শার্ক তার সহযোগী হিসাবে কাজ করবেন। শার্ক ২০২১ সালে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন। যেখানে তিনি দাবি করেন, প্রথম মেয়াদে ফেডারেল কর্মচারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাম্পের নীতিগুলো বাধাগ্রস্ত করেছিলেন।