সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি

বিশেষ বিমানে ড. ইউনূসকে বেইজিংয়ে নিতে আগ্রহী চীন

প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সমর্থন দিয়ে আসছে চীন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ড. ইউনূসকে বেইজিং সফরে নিতে আগ্রহী দেশটি। চীনের চাওয়া আগামী মার্চে বেইজিংয়ে বাও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দিক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ মঙ্গলবার বেইজিংয়ে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে ড. ইউনূসের ভবিষ্যৎ চীন সফর নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে।

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, আগামী ২৭ ও ২৮ মার্চ বেইজিংয়ে অনুষ্ঠেয় বাও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দিতে এরইমধ্যে প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে চীন। দুই দেশের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে বহুপাক্ষিক ফোরামে ড. ইউনূস যোগ দেবেন ধারণা চীনের। ঢাকার সংশ্লিষ্টরা মনে করছে, যদি বহুপাক্ষিক ফোরামে যোগ দিতে মার্চে প্রধান উপদেষ্টা বেইজিং সফর করেন সেক্ষেত্রে একসঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সফর সেরে ফেলার সুযোগ রয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বিএফএ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি বেইজিং সফরের সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক আয়োজন করতে আগ্রহী চীন। শুধু তাই নয়, ড. ইউনূসকে নিতে ভাড়া করা উড়োজাহাজ পাঠাতেও আগ্রহী চীন। আগামী ২৫ থেকে ২৮ মার্চ বেইজিংয়ে ২৫ দেশের জোট বিএফএর সম্মেলনে যোগ দিতে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। চীন ওই ফোরামের বৈঠকে যোগ দেয়ার ফাঁকে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংসহ দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশের শীর্ষ নেতার আলোচনা আয়োজন করতে আগ্রহী।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, মার্চে প্রধান উপদেষ্টা চীন সফর করবেন কি না- সেটি এখনও নিশ্চিত নয়। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বেইজিং সফরে প্রধান উপদেষ্টার বেইজিং সফর নিয়ে আলোচনা হবে। তবে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কারণে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন কিংবা এতো কম সময়ে বহুপাক্ষিক ও দ্বিপক্ষীয় সফরের প্রস্তুতি সম্ভব হবে কি না- সেটা নিয়েও ঢাকা সন্দিহান। এক্ষেত্রে এখনই বলা যাবে না সফরটি হবে কি হবে না। বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে উভয় পক্ষ বিভিন্ন কর্মসূচি নিতে আগ্রহী। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনকে ২৪টি প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। উভয় পক্ষের সম্মতিতে এসব প্রস্তাব গৃহীত হতে পারে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন গতকাল সোমবার বেইজিং সফরে গেছেন। বেইজিং সফরকালে আজ মঙ্গলবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই’য়ের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনকে ২৪টি প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শীর্ষ পর্যায়ের সফর বিনিময়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী, ক্রীড়া অনুষ্ঠান ইত্যাদি আয়োজনের প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসকে আগামী মার্চ মাসে সফরের প্রস্তাব দিয়েছে চীন। আগামী ২৭-২৮ মার্চ বেইজিংয়ে বাও ফোরাম ফর এশিয়া সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য এরইমধ্যে চীন আমন্ত্রণ জানিয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরকালে বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের কাছে যে ২৪ প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে, সেগুলো হলো : ১. উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, উপদেষ্টা ও অন্যান্য মন্ত্রী পর্যায়ের সফর বিনিময়। ২. বাংলাদেশের তরুণ নেতাদের চীনে, চীনা তরুণ নেতাদের বাংলাদেশে সফর। ৩. বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী/নাগরিক সমাজের সদস্যদের চীন সফর বিনিময়। ৪. বাংলাদেশ ও চীনের মিডিয়া/থিঙ্কট্যাঙ্ক সদস্যদের সফর বিনিময়। ৫. বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ক্রীড়া দলের সফর বিনিময়। ৬. বাংলাদেশ ও চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি। ৭. চীনা হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই। ৮. পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে একে অপরের রাজধানীতে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। ৯. বাংলাদেশ এবং চীনা শহরগুলোর মধ্যে সিস্টার সিটি চুক্তি। ১০. বেইজিং, সাংহাই, কুনমিংয়ে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী। বাংলাদেশ থেকে চীনে সাংস্কৃতিক দলের সফর। ১১. চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অনুষ্ঠানের আয়োজন। ১২. আগামী ৪ অক্টোবর ঢাকা এবং বেইজিং উভয় স্থানে একযোগে স্মারক ডাকটিকিট এবং খামের যৌথ প্রকাশ। ১৩. বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ঢাকায় সিম্পোজিয়াম আয়োজন। ১৪. চীনের জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাথে প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জাতীয় নারী ক্রিকেট দলকে চীনে পাঠানো। ১৫. বেইজিং, কুনমিং, সাংহাই, হংকংয়ে খাদ্য উৎসব আয়োজন। ১৬. দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীতে আগামী ৪ অক্টোবর চায়না ডেইলি বা অন্য কোনো চীনা সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা। ১৭. চীনে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন। ১৮. মেঘনা/পদ্মা নদীতে নৌকা বাইচ আয়োজন। ১৯. ঢাকায় চীনা দূতাবাসের সাথে যৌথভাবে ঘুড়ি উৎসব আয়োজন। ২০. বেইজিং/হংকংয়ে বাংলাদেশ সঙ্গীত উৎসব আয়োজন। ২১. বেইজিং এবং সাংহাইয়ে একক দেশের বাণিজ্য মেলা আয়োজন। ২২. কুনমিং/সাংহাইয়ে বাণিজ্য প্রদর্শনীর আয়োজন। ২৩. চীনা বিনিয়োগকারী/তরুণ চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো। ২৪. চীনা বিনিয়োগ বাংলাদেশে আনতে সাংহাইয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সেমিনার আয়োজন।