বইয়ের জন্য অপেক্ষা বাড়বে শিক্ষার্থীদের
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আমিরুল ইসলাম অমর
বছর শুরু হওয়ার পর এরইমধ্যে ২০ দিন অতিক্রম হয়েছে কিন্তু এখনো অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা সব পাঠ্যবই হাতে পায়নি। এ কারণে স্কুলগুলোতে এখনো ক্লাস শুরু হয়নি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা বিকল্প হিসেবে গাইড বই কিনে পড়াশোনা শুরু করতে চাচ্ছে কিন্তু সেটিও লাইব্রেরিতে নেই। এর ফলে বই না পেয়ে বছরের শুরুতেই পড়াশোনায় হযবরল অবস্থা দেখা দিয়েছে। বইয়ের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গুনছে শিক্ষার্থীরা। শুরুতেই শিক্ষার্থীরা পাঠে এমন হোঁচট খাওয়ায় অভিভাবকরাও চিন্তিত। তবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আশা করছে, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ছাপাখানার মালিকরা প্রতি বছরই বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর পাশাপাশি জানুয়ারির শুরুর দিকেই অনুশীলনমূলক বইয়ের নাম করে নোট-গাইড বই ছেপে বাজারজাত করেন। চলতি বছর বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ দেরি হওয়ায় এনসিটিবি প্রত্যেক ছাপাখানাকে লিখিত আদেশ দিয়ে বলেছে, বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নোট-গাইড বই ছাপা যাবে না।
জানা গেছে, এপ্রিলের আগে সব বইয়ের কাজ শেষ হওয়ার সুযোগ কম। আগেও বছরের প্রথম দিন বই উৎসব করা হলেও সব বইয়ের কাজ শেষ করতে ফেব্রুয়ারি মাস লেগে যেত। তবে নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অন্তত ৮০ শতাংশ বইয়ের কাজ শেষ হয়ে যেত। এতে কোনো কোনো স্কুলে সামান্য বই দেয়া বাদ থাকলেও তা নিয়ে তেমন কথা উঠত না। কিন্তু এ বছরের ঘটনা উল্টো। এ পর্যন্ত প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বই পেলেও চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির মাত্র তিনটি পর্যন্ত বই পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। কিছু ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থী সেটাও পায়নি।
সম্প্রতি শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীরা সব পাঠ্যবই হাতে পাবে। আমরা (বই ছাপা) কার্যক্রম শুরু করেছি দেরিতে। আমাদের বই পরিমার্জন করতে হয়েছে। বইয়ের সিলেবাস, কারিকুলাম নতুন করে করতে হয়েছে। বইয়ের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এতে তো দেরি হবেই। আগের সরকারের আমলে মার্চের আগে পুরোপুরি বই দেয়া হয়নি।’ শিক্ষা উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘প্রথম দিকে আমরা আর্ট পেপার পাচ্ছিলাম না। কাগজের সংকটও ছিল। পরবর্তী সময়ে ছাত্র প্রতিনিধি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যদের সহায়তায় আর্ট পেপারের সমস্যা সমাধান হয়েছে। (আর্ট পেপার নিয়ে) বিদেশ থেকে জাহাজ রওনা হয়ে গেছে। আশা করছি, জানুয়ারির শেষ দিকে জাহাজ এসে পৌঁছাবে।’
বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রক ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি থেকে আমাদের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বইয়ের কাজ শেষ করতে বলেছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। এখন আমরা গতি বাড়িয়েও প্রতিদিন ৩০ লাখ বই দিতে পারছি। সেটা হয়তো সামনে ৪০ লাখ পর্যন্ত হতে পারে। তার পরও মন্ত্রণালয়ের সময় অনুযায়ী বইয়ের কাজ শেষ করা কষ্টকর হয়ে পড়বে।’
সূত্র জানায়, পাঠ্যবই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ কমেছে। ফলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমেছে। শিক্ষকদের বই ডাউনলোড করে পড়াতে বলা হলেও শিক্ষার্থীদের হাতে কপি না থাকায় তাতে কারো আগ্রহ তৈরি হচ্ছে না। এতে স্কুলগুলোতে হচ্ছে মাত্র দু-একটি ক্লাস। শিক্ষকরা গল্পগুজব করে চলে যাচ্ছেন। আবার বেশিরভাগ স্কুলে এত দিন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চললেও সেটাও শেষের পথে। আবার যেসব শিক্ষার্থী খেলাধুলায় অংশ নিচ্ছে না তারা স্কুলে আসছে না।
রাজধানীর একটি বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্কুলে দুয়েকটি শ্রেণি বাদে প্রায় সব শ্রেণিরই কিছু বই এসেছে। আমরা সেগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করেছি। বর্তমানে ক্লাসের পাশাপাশি আমরা খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সময় বাড়িয়েছি। ক্লাসের জন্যও পূর্ণ সময় রেখেছি। কিন্তু সব বই না পাওয়ায় ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। অনেকে নতুন শ্রেণিতে ভর্তিও হচ্ছে না।’
এর আগে কভিডের কারণে শিক্ষার্থীরা দুই বছর ঠিকমতো ক্লাস করতে পারেনি। এরপর ২০২৩ ও ২০২৪ সাল ছিল নতুন শিক্ষাক্রম, যেখানে তেমনভাবে পড়ালেখা ছিল না। এখন আবার শিক্ষার্থীরা বছরের শুরুতে বই না পেয়ে হতাশায় পড়েছে। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে ছুটছে প্রাইভেট-কোচিংয়ের পেছনে। আর অনেক স্কুল যারা ‘সিটি’ পরীক্ষা বা মাসিক পরীক্ষা নেয়, তারা বই দিতে না পারলেও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার তারিখ জানিয়ে দিচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা অন্য কোনো উপায় না পেয়ে দৌড়াচ্ছে প্রাইভেট শিক্ষকদের পেছনে।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, প্রায় এক মাস চলে যাচ্ছে, আমার বাচ্চা এখনো একটি বইও পায়নি। আগে কোনো পড়ালেখাই ছিল না। এখন বইয়ের অভাবে পড়ালেখা করানো যাচ্ছে না। যেহেতু বই নেই, ক্লাস ঠিকমতো হয় না, বাচ্চাও স্কুলে যেতে চায় না। আমরাও চাপ দিতে পারি না। বলতে পারেন পড়ালেখা বন্ধ।
অভিভাবকরা বলছেন, পাঠ্যবই না পেলেও যদি সহায়ক বই পাওয়া যেত তাহলেও অন্তত পড়ালেখা চালিয়ে নেয়া যেত। রাজধানীতে একজন শিক্ষকের কাছে ব্যাচে পড়লেও দিতে হয় এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা। সেই হিসাবে কমপক্ষে তিনজন শিক্ষকের কাছে পড়লে অনেক টাকার ব্যাপার। অথচ সহায়ক বই থাকলে চার-পাঁচ শ টাকায় একটি বই কিনে পড়ালেখাটা চালিয়ে নেয়া যেত। যাদের পক্ষে প্রাইভেট পড়ানো সম্ভব নয়, তারা পড়েছেন বিপদে।
সূত্র জানায়, পাঠ্যবই ছাপতে দেরি হওয়ায় সহায়ক বই ছাপার অনুমতি দিচ্ছে না জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। যেসব প্রকাশনী পাঠ্যবইয়ের কাজ করছে না তাদেরও সহায়ক বই ছাপার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি থেকে এনসিটিবি বরাবর সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দিয়ে সহায়ক বই ছাপার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তারা পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে সংযুক্ত সব ধরনের প্রেস ও বাইন্ডারদের বাদ দিয়ে সহায়ক বই ছাপতে চায়। সহায়ক বই ও পাঠ্যবই ছাপানোর মেশিন ও কাগজ ভিন্ন হওয়ায় বই ছাপানোর ক্ষেত্রে কোনো বাধা হবে না বলে জানালেও কর্ণপাত করছে না এনসিটিবি। ফলে পাঠ্যবইয়ের সংকটের পাশাপাশি সহায়ক বইও না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বন্ধ রয়েছে।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার কোটি ৩৪ লাখ তিন হাজার ২৮৩। তাদের জন্য ছাপা হচ্ছে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই। প্রাথমিকের দুই কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫ কপি বই। মাধ্যমিক পর্যায়ের দুই কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ কপি বই। এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে আট হাজারের বেশি ব্রেইল বই ছাপা হচ্ছে। শিক্ষকদের জন্য প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা বই ছাপা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এনসিটিবি সবচেয়ে বেশি অনভিজ্ঞতা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে ছাপার কাগজ নিয়ে। চাহিদামতো ৪০ কোটি বই ছাপাতে কত হাজার টন কাগজ প্রয়োজন এবং দেশে কাগজের এই সক্ষমতা আছে কি না সেটা তারা বিবেচনায় নেয়নি। ডিসেম্বর শেষে ছাপাখানাগুলো একসঙ্গে কাজ শুরু করতে গেলে কাগজের সংকট দেখা দেয়। ফলে কাজ থেমে যায়। এ ক্ষেত্রেও এনসিটিবি দায় চাপায় অন্যদের ওপর। ৪০ কোটি বই ছাপানোর জন্য যে পরিমাণ কাগজ প্রয়োজন, তা দেশের মিলগুলোর উৎপাদনে তিন মাসের মতো সময় লাগবে। আর যদি আমদানি করতে হয় তবে তা তিন মাস আগেই করা উচিত ছিল। এ ক্ষেত্রেও এনসিটিবি সিদ্ধান্ত নিতে সময়ক্ষেপণ করেছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানকে সক্ষমতা থেকে বেশি কাজ দেওয়া হয়েছে। ফলে পাঠ্যবই ছাপা শেষ হতে দেরি হচ্ছে। এ অবস্থায় সব বইয়ের কাজ শেষ হতে এপ্রিল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান বলেছেন, ‘প্রাথমিকের ১০ কোটি বইয়ের মধ্যে আট কোটির কাজ শেষ হয়েছে। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্রাথমিকের বইয়ের সব কাজ শেষ হবে। আমরা দশম শ্রেণির সব বইয়ের কাজও ৩১ জানুয়ারির মধ্যে শেষ করব। অন্যান্য শ্রেণির কিছু কিছু বই এরই মধ্যে দেয়া হয়েছে। বাকি বইয়ের কাজ ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। কিছু প্রেস সক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত কাজ নিয়েছে। এখন যেসব প্রেসের কাজ শেষ হয়েছে, সেখানে আমরা নতুন করে কিছু কাজ দিয়ে দিচ্ছি।’ এনসিটিবির চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘বই ছাপা হলেও আমাদের সমস্যা বাইন্ডারের। এখন যদি সহায়ক বই ছাপার অনুমতি দেয়া হয় তাহলে বাইন্ডারের অভাবে পাঠ্যইয়ের কাজের গতি কমবে। তাই পাঠ্যবই ছাপা শেষে সহায়ক বই ছাপার অনুমতি দেয়া হবে। আশা করছি, ১৫ ফেব্রুয়ারির পর থেকে প্রকাশনীগুলো সহায়ক বই ছাপার কাজ শুরু করতে পারবে।’
এরকম পরিস্থিতিতে সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান বরাবর এক আবেদনে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) নেতারা বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শেষ করাসহ প্রকাশকদের বই (গাইড বই) প্রকাশের জন্য এনসিটিবির কাছে সম্মতি চেয়েছেন। আবেদনের বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আর পাঠ্যবইয়ের বিষয়ে বলেছেন, ছাপার কাজ চলমান। দ্রুতই সব উপজেলায় শিক্ষার্থীরা সব বই পেয়ে যাবে। তার মতে, দেশের সব উপজেলায় অন্তত তিনটি করে বই সব শিক্ষার্থী পেয়েছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বছরের শুরু থেকে বই না পাওয়ায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বেশি ভুক্তভোগী। কারণ তারা যখন নবম শ্রেণিতে পড়া শুরু করেছিল; তখন পরীক্ষা পদ্ধতি উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে নবম শ্রেণির পড়াশোনায়ও পরিবর্তন ঘটে। বছরের শুরুতে তারা যে পদ্ধতিতে পড়াশোনা করছিল- সেটি পরিবর্তন করে ২০১২ সালের সৃজনশীল পদ্ধতি ফিরিয়ে আনা হয়।
একই সঙ্গে বলা হয়, দশম শ্রেণিতে সৃজনশীল পদ্ধতিতে তারা নতুন বই পাবে। সেই বই এক বছর পড়ে ২০২৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেবে। কিন্তু বছরের শুরুতে বই না পাওয়ায় ২০২৬ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কী লিখবে সে নিয়ে তারা উৎকণ্ঠায় আছে। যদিও এনসিটিবি দশম শ্রেণির বই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছাপানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এখনো এই শ্রেণির সাড়ে ৬ কোটি বই ছাপার কাজ শেষ করতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, বই দিতে দেরি হওয়ায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সিলেবাস সংকুচিত করা হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ছাপাখানার মালিক বলেন, প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে প্রায় ৩০ লাখ পরিবার জড়িত। কিন্তু সহায়ক বইয়ের কাজ করতে না পেরে তারা অনেকটা বেকার জীবন পার করছেন। এজন্য তারা এনসিটিবিকে একটি আবেদন দিয়ে কতগুলো প্রস্তাবনা দিয়েছেন। এতে এনসিটিবি এবং ছাপাখানা জগতের ৩০ লাখ পরিবারই ভালোভাবে থাকতে পারবে।
আবেদনে বলা হয়েছে, পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংগঠন। এই সংগঠনের সঙ্গে প্রায় ৩০ লাখ পরিবার যুক্ত। আমরা প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত এনসিটিবিকে সব রকম সহযোগিতা করে আসছি। এ বছরও এনসিটিবি যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর ক্ষেত্রে বাপুস সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে আসছে। গত দশ বছরে পাঠ্যবই ছাপানোর আগে অনুশীলনমূলক বই বাজারজাতকরণের কোনো নজির নেই। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরও পাঠ্যবই ছাপা শেষ না হওয়ার আগে অনুশীলনমূলক বই ছাপানো ও প্রকাশের ক্ষেত্রে নিষেধ করে চিঠি দেয়া হয়েছে।
আবেদনে এও বলা হয়েছে, এ বছর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে বই সম্পাদনা ও ছাপা ক্ষেত্রে এনসিটিবি পিছনে পড়ে গেছে। সবার সহযোগিতা নিয়ে এই সংকট উত্তরণ সম্ভব এবং বাপুসের পক্ষ থেকে এই সহযোগিতা করাও হচ্ছে। কিন্তু অ্যাকাডেমিক পাবলিশার্সদের নোট-গাইড ব্যবসায়ী আখ্যায়িত করে সমিতি সদস্যদের ঢালাওভাবে দায়ী করা হচ্ছে। এর মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বিভিন্ন সংস্থাকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাপুস এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও বাস্তবতা বিবর্জিত ও তথ্যবিহীনভাবে প্রকাশকদের দায়ী করা অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে বাপুসের সদস্যদের মধ্যে হতাশা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাপুস গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলেও বৈষম্যের চরম শিকার হয়েছে।
পাঠ্য বই ছাপা শেষ করার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিয়ে বলেছে, এর মধ্যে প্রাথমিকের ৮০ শতাংশ বই ছাপা হয়েছে। যে ২০ শতাংশ বই ছাপার বাকি আছে সেসব বই ছাপাতে বাপুসের সদস্যদের সরাসরি কাজ দেয়া যেতে পারে। পাশাপাশি যেসব ছাপাখানা এখনো প্রাথমিকের বই ছাপা শেষ করতে পারেনি তাদের কাজ শেষ করতে বাপুস সহযোগিতা করবে। চলতি বছরের বই ছাপানোর দ্বিতীয় ধাপের লক্ষ্য হচ্ছে দ্রুত দশম শ্রেণির বই ছাপানো।
বাপুস বলেছে, প্রাথমিকের বই ছাপানো শেষ করে একইভাবে দশম শ্রেণির বই ছাপাতে সহযোগিতা করবে। বাপুস বলেছে, শিক্ষাক্ষেত্রকে তারা ব্যবসা মনে না করে সেবামূলক কাজ হিসেবে দেখে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সবার জন্য মানসম্মত বই প্রকাশ করে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের কাছে আস্থা অর্জন করেছে সংগঠনটি। এর ফলে ক্ষেত্রটি শিল্প হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় এখানে প্রায় ৩০ লাখ পরিবার উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি বহু লাইব্রেরি, বাইন্ডিং, প্রেস ও প্রকাশকদের লেখকসহ সবার বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। ফলে তারা অনিশ্চায়তার মধ্যে রয়েছে।
এনসিটিবি প্রাথমিক ও দশম শ্রেণির বইগুলো সফলতার সঙ্গে শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে তাই এই শ্রেণির অনুশীলনমূলক বইগুলো চলতি সপ্তাহ থেকে ছাপানো ও বাজারজাতকরণের সম্মতি চেয়েছে বাপুস। সংগঠনটি বলেছে, অনুশীলনমূলক বইয়ের সাইজ ২২ ইনটু ৩২ ইঞ্চি আর পাঠ্যবই ২০ ইনটু ৩০ ইঞ্চি। পাঠ্যবইয়ের কাগজ হোয়াইট আর অনুশীলনমূলক বইয়ের নিউজপ্রিন্ট। আর থাকল বাইন্ডিং। যাদের কম্পোজিট প্রেস রয়েছে সেখানে বাইন্ডিংয়ের লোকবল স্থায়ী নিয়োগকৃত। কাজেই অন্য বাইন্ডারের লোক কাজ করার বা নেবার প্রশ্নই ওঠে না।
সংগঠনটি বলেছে, আগামী বছর অ্যাকাডেমিক পাবলিশার্সরা কীভাবে পাঠ্যবই প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে তার ব্যাখা দিয়ে বলেছে, অ্যাকডেমিক পাবলিশার্সরা এনসিটিবির পাঠ্যবইয়ের পা-লিপি ঠিক সময়ে সম্পন্ন করে অনুমোদন নিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ছাপিয়ে বাজারজাত করে। এক্ষেত্রে এনসিটিবি ও পাবলিশার্স উভয় পক্ষই সফল। সম্পাদনার দক্ষতা এক্ষেত্রে প্রমাণিত। আগামী বছরে যদি এনসিটিবি সম্পাদনার কাজটি বেসরকারি খাতে অর্থাৎ বাপুসের মাধ্যমে করিয়ে নেন তাহলে সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে শতভাগ নির্ভুল বই সম্পাদনা করে এনসিটিবিকে জমা দেয়া যাবে।
এক্ষেত্রে এনসিটিবি আমাদের সম্পাদনার মান যাচাই করে নিতে পারে। চাইলে নতুন পা-লিপিও প্রস্তুত করে দেয়া যাবে। কারণ উচ্চ মাধ্যমিকের বইগুলো যথাসময়ে ছাপিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। এজন্য এনসিটিবির এই বিশাল কর্মযজ্ঞে বেসরকারি খাত হিসেবে আমাদের সহযোগী হিসেবে যুক্ত করলে পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে একটুও দেরি হবে না।