সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টা

চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে ফেরত দেয়া উচিত ভারতের

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যদি ভারত ফেরত না দেয়, তাহলে সেটা হবে ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। চুক্তি অনুযায়ী তাকে ফেরত দেয়া উচিত ভারতের।

গতকাল মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত দেয়ার জন্য ভারতের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী তাকে ফেরত দেয়া উচিত ভারতের। কারণ বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আসিফ নজরুল আরো বলেন, এরইমধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

মামলা প্রত্যাহার নিয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হবে। উপদেষ্টা বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের চেতনায় সংস্কার করতে আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে উদাহরণ তৈরি করে যাচ্ছি। পরবর্তী সরকার এসব পদদলিত করবে কি না সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা আশা করি বিগত আওয়ামী লীগের মতো গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার সংস্কারগুলোকে অস্বীকার করবে না?

তিনি আরো বলেন, সাইবার আইনের স্পিচ অফেন্স সংক্রান্ত ১১৩টি মামলা পাবলিক প্রসিকিউটরদের মাধ্যমে প্রত্যাহার করেছে আইন মন্ত্রণালয়। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট মামলা প্রত্যাহার করা হবে। ড. আসিফ নজরুল বলেন, উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে চরম অস্বচ্ছতার জন্য ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে স্বৈরাচার আমলে? উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে একটি কাউন্সিল করার প্রস্তাব আছে নতুন অধ্যাদেশে। প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের কয়েকজন বিচারপতিসহ ৬ সদস্যের সমন্বয়ে এ কাউন্সিল গঠিত হবে। যার নাম হবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল। কোনো বিচারক উচ্চ আদালতে বিচারক হতে এখানে আবেদন করতে পারবেন? সত্যায়ন করা নিয়ে তিনি বলেন, ৩৬ ধরনের ডকুমেন্ট আইন মন্ত্রণালয় সত্যায়ন করে। এটা ম্যানুয়াল থাকায় দিনের পর দিন মানুষের ভোগান্তি হতো। এখন এটা অনলাইন করা হয়েছে। ফলে এখন দুয়েকদিনের মধ্যেই হবে। সাইবার সিকিউরিটি আইন নিয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে সাইবার সিকিউরিটি আইনের অধীনে সারা দেশে সব মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন।

আসিফ নজরুল বলেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে এসব মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়া হবে। একইসঙ্গে সাইবার সিকিউরিটি আইন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ করছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, দেশের ২৫টি জেলায় আড়াই হাজার রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বা গায়েবি মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব মামলায় লাখ লাখ মানুষ আসামি। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব মামলা প্রত্যাহার করা হবে। তিনি আরো বলেন, গায়েবি মামলা চিহ্নিত করতে আমরা চারটি ভাগে ভাগ করেছি। মামলাগুলো পুলিশ করেছে কি না, সেটা আমলে নেয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এসব মামলার বেশিরভাগের প্রবণতা ছিল বিস্ফোরক আইনে মামলা, অস্ত্র আইনে মামলা, পুলিশের ওপর হামলার মামলা। তৃতীয় প্রবণতা হলো এসব মামলায় অনেক আসামি থাকে অর্থাৎ অজ্ঞাতনামা আসামি থাকে। সবশেষ যে প্রবণতাকে আমলে নেয়া হয়েছে, বিরোধীদলীয়দের কোনো বড় সমাবেশের আগে-পরে এবং গত তিন ভুয়া নির্বাচনের আগে-পরে করা মামলা। এসব প্রবণতাকে আমলে নিয়ে আমরা ২৫০০ মামলা চিহ্নিত করেছি। আশা করছি ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব মামলা প্রত্যাহার হয়ে যাবে। উচ্চ আদালতে এর আগে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, এখন থেকে বিচারক নিয়োগ হবে দক্ষতার ভিত্তিতে এবং দল নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে। বিচারক নিয়োগের জন্য সুপ্রিমকোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ-২০২৫ গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে।

এদিকে বিয়ে সম্পাদনে আরোপিত কর (ট্যাক্স) বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আইন উপদেষ্টা বলেন, বিয়ে সম্পাদনে আরোপিত একটি কর ছিল, আইন মন্ত্রণালয় এ অযৌক্তিক কর বাতিল করেছে। তিনি বলেন, ‘বিয়ের ফরমে লেখা থাকতো বিবাহিতা নাকি কুমারী। এটা একটা মেয়ের জন্য অমার্যাদাকর শব্দ। সেটা আমরা অবিবাহিতা করে ফেলেছি। এমন ছোটো ছোটো অনেক কাজ করেছি। আরো অনেক কাজ করার চিন্তা আছে।’ এসময় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘বিয়ের ট্যাক্সে আজকে সাইন করলাম। আপনি ট্যাক্স ছাড়া বিয়ে করতে পারবেন।’

উল্লেখ্য, সিটি করপোরেশন মডেল ট্যাক্স তফসিল ২০১৬ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বিয়ের ওপর বিভিন্ন করের হারের বিধান করে। এক্ষেত্রে করের টাকা পরিশোধ করতে হবে পাত্র পক্ষকে। তপশিলের ১৫২ ধারায় বলা হয়েছে, প্রথম বিবাহ বা প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পরে বিবাহের জন্য একজন পুরুষকে বিয়ের পিড়িতে বসার আগে ১০০ টাকা ফি দিতে হবে। প্রথম স্ত্রীর জীবদ্দশায় দ্বিতীয় বিয়ে করতে হলে ৫ হাজার টাকা, প্রথম দুই স্ত্রীর জীবদ্দশায় তৃতীয় বিয়ের জন্য ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। তপশিল অনুযায়ী, চতুর্থ বিয়ের জন্য ৫০ হাজার টাকা কর দিতে হবে। স্ত্রী মানসিকভাবে অসুস্থ বা নিঃসন্তান হলে এই নিয়ম কার্যকর হবে না। তবে, সেক্ষেত্রে ২০০ টাকা দিতে হবে।