ঢাকা রোববার, ০৯ মার্চ ২০২৫, ২৪ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সচিববিহীন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ

প্রশাসনের শীর্ষ অনেক পদ শূন্য

প্রশাসনের শীর্ষ অনেক পদ শূন্য

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর গত বছর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে দেশের পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। আর এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য বিচার বিভাগ, ব্যাংক খাত, প্রশাসনসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কার করা। সেই সংস্কার কাজ চলছে ধীরগতিতে।

জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়ার পর প্রায় ছয় মাসের শেষ হতে চললেও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব নিয়োগ দিতে পারেনি। সচিববিহীন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে। দায়িত্ব গ্রহণের পর যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল তা বাস্তবায়নে ধীর গতির কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার।

সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ। বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রকল্পসমূহের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত বিভাগটি। সারা দেশে মাঠ প্রকল্পসমূহের পর্যবেক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন প্রণয়ন করে। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয় করে প্রকল্পের বাস্তবায়ন সমস্যা দূরীকরণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইএমইডি। সরকারের এতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগটি সচিববিহীন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তবে কিছুটা ভালো অবস্থায় রয়েছে সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগ সারা দেশে দেড় কিলোমিটার বা ততোধিক দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে সংস্থাটি থাকায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন সেতু বিভাগের। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হলেন মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

দেশের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতোই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন শেখ বশিরউদ্দীন। তবে গত প্রায় ছয় মাসেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সচিব নিয়োগ দেয়া হয়নি। সরকারি কার্যপ্রণালী বিধিতে বাণিজ্য এবং বাণিজ্যর সাথে সম্পর্কিত ৩১ ধরনের কাজকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত করা হয়। এ কাজগুলো মূলত অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য চলমান রাখা এবং সম্প্রসারণে সহায়তা, আমদানি বাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করা, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও সহনীয় পর্যায়ে রাখা, পণ্য ও সেবা রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে যোগাযোগ ও রপ্তানির স্বার্থে দরকষাকষি করা, ব্যবসা সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন, পণ্যের ট্যারিফ নির্ধারণ, বাণিজ্য সংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম, তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ, বিসিএস (ট্রেড) ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়টি সচিববিহীন চলছে। একই অবস্থা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে ফরিদা আখতার দায়িত্ব পেলেও সচিব নিয়োগ দেয়া হয়নি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আটটি অধীনস্থ বিভাগ রয়েছে। সেগুলো হলো- প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ একাডেমি এবং বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল। মন্ত্রণালয়টি দেশের মৎস্য সম্পদ ও প্রাণিসম্পদ নিয়ে কাজ করে। দেশীয় অর্থনীতিতে এ মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সচিব বিহীন চলছে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য অবকাঠামোসহ অন্যান্য খাতসমূহে সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করে থাকে। এখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক অধিকার এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করাসহ বাংলাদেশের সব নাগরিকের স্ব স্ব অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যেও কাজ করে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন সুপ্রদীপ চাকমা। কিছুটা ভালো অবস্থায় আছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের সচিবের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন মো. মফিদুর রহমান। জাতীয় সংসদ সচিবালয় এবং পরিকল্পনা কমিশনসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব নেই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেছেন। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরেই প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। তবে আগস্টে নিয়োগের তিন দিনের মাথায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবকে বদলি করা হয়। অন্যদিকে অবসরে যাওয়া পাঁচ অতিরিক্ত সচিবকে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চুক্তি ভিত্তিতে সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

গত ১৪ আগস্ট জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মো. মোকাব্বির হোসেনকে জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব করা হয়। নিয়োগের দুই দিন পরেই তাকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে বদলি করা হয়। অন্যদিকে যে পাঁচজন অতিরিক্ত সচিবকে চুক্তিভিত্তিতে সচিব করা হয়েছে তার মধ্যে শেখ আবদুর রশিদকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব, মো. এহছানুল হককে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, নাসিমুল গনিকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগ এবং এমএ আকমল হোসেন আজাদকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়েছে। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত প্রশাসনে আলোচিত শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন অন্যতম। তাকে খুঁজে এনে জননিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব পালনের প্রায় পাঁচ মাসের মাথায় পদত্যাগ করেন মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের দুই বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

সাবেক সচিব একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দক্ষ ও সাহসী জনবল দিয়ে প্রশাসন সাজাতে পারেনি। প্রশাসনে অনেকে আছেন, যারা আগেও বঞ্চিত ছিলেন, এখনো কপালপোড়া। এসব কারণে সরকার ভালো সহযোগিতা পাচ্ছে না, সমন্বয় হচ্ছে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত