গাজা দখলের ছক থেকে সরে এলেন ট্রাম্প
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক

গাজা দখলের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বুধবার তিনি বলেছেন, ‘গাজা থেকে কাউকে উৎখাত করা হচ্ছে না।’ বুধবার হোয়াইট হাউসে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিশেল মার্টিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন। তার এই মন্তব্য আগের প্রস্তাবের সম্পূর্ণ বিপরীত, যেখানে তিনি গাজা দখলের কথা বলেছিলেন এবং ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে অঞ্চলটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ বানাবেন বলে জানিয়েছিলেন। গত মাসে ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রায় ২০ লাখ মানুষের গাজা উপত্যকার সবাইকে স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেয়া হবে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রাথমিক ধাপ চলাকালে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও প্রত্যাখ্যানের মুখে পড়ে। কারণ, এটি দীর্ঘদিনের ফিলিস্তিনি আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে তোলে যে, তাদের জোরপূর্বক স্থানান্তর করা হতে পারে। মিসর, জর্ডানসহ উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলো এবং ৫৭টি মুসলিম দেশের সংগঠন ওআইসি সতর্ক করে জানায়, এমন কোনো পরিকল্পনা পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। তারা গাজা পুনর্গঠনের জন্য ৫৩ বিলিয়ন ডলারের একটি মিসরীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, যেখানে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত না করেই গাজা পুনর্গঠনের নিশ্চয়তা দেয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে বুধবার ট্রাম্প বলেন, আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করছি; দেখছি কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। এসময় তিনি আবার সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমারকে ফিলিস্তিনি অভিহিত করে বলেন, সে একসময় ইহুদি ছিল, এখন আর ইহুদি নয়। এদিকে, গাজা পুনর্গঠন পরিকল্পনার নিয়ে কাতারের দোহায় আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আরব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ। বৈঠকে উইটকফের কাছে গাজার জন্য মিসরের দেয়া পুনর্গঠন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে পাঁচ আরব দেশ। স্বাগত জানাল হামাস : প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে গাজা থেকে জোরপূর্বক স্থানান্তর করার প্রস্তাব থেকে দৃশ্যত সরে আসায় ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়েছেন হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম। এক বিবৃতিতে কাসেম বলেন, ‘যদি মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য গাজা উপত্যকার জনগণকে বাস্তুচ্যুত করার ধারণা থেকে সরে আসাকে প্রতিনিধিত্ব করে, তাহলে তাকে স্বাগত।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতি চুক্তির সব শর্ত বাস্তবায়নে ইসরায়েলকে বাধ্য করার মাধ্যমে এই অবস্থানকে আরও জোরালে করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ গাজা নিয়ে ট্রাম্পের উদ্ভট পরিকল্পনা প্রকাশের পর থেকেই হামাস বলে আসছে, ফিলিস্তিনিরা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে দেবেন না। একে হাস্যকর আখ্যা দিয়ে হামাস নেতারা বলেছেন, বুড়ো ট্রাম্পকে গাজা দখলের স্বপ্ন নিয়েই মৃত্যুবরণ করতে হবে; এটি কখনও বাস্তবায়িত হবে না।
নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা : ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে ইয়ালোন এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহুর সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তার চেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। ফলে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে মাত্রাতিরিক্ত প্রাণহানি ঘটছে। ইয়ালোন ইসরায়েলি স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেন, ‘ইসরায়েলি জনগণকে বুঝতে হবে, সরকার রাষ্ট্রের স্বার্থের বিপরীতে কাজ করছে। তারা ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার নিজস্ব স্বার্থেই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের বিলম্ব পদক্ষেপ সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। আর, হামাস এই পরিস্থিতির সুবিধাকে কাজে লাগচ্ছে। ইয়ালোন বলেন, যুদ্ধ সমাপ্তির চেষ্টাকে ধারাবাহিকভাবে দুর্বল করছে সরকার। নেতানিয়াহু পেশাদার আলোচকের পরিবর্তে রন ডার্মারের মতো রাজনৈতিক লোককে নিয়োগ দিয়েছেন। ফলে আলোচনার পরিবেশ দিনদিন জটিল হচ্ছে। সাবেক এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে, বন্দিদের মুক্ত করার ব্যাপারে ইসরায়েলের আগ্রহ নেই, তাই তারা নিজেদের মতো করে হামাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে মার্কিন চাপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই যুদ্ধ যত লম্বা হবে, মানুষের জীবন এবং কৌশলগত দিক থেকে ইসরায়েল তত ক্ষতগ্রস্ত হবে। ইয়ালোন উল্লেখ করেন, যুদ্ধে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ১৫ হাজার সেনা হারিয়েছে। অনেকে এমনভাবে আহত হয়েছেন যে আর চাকরিতে ফিরতে পারবেন না। ফলে সেনাবাহিনীর অবস্থা বিপর্যস্ত। বর্তমান সেনাপ্রধান ইয়াল জামিরের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমি আশা করি, রাজনৈতিক নোংরামির উপরে উঠে তিনি পেশাদারিত্বের মেরুদণ্ড সোজা রাখবেন।
নেতানিয়াহু-ট্রাম্প হানিমুন শেষ! : ইসরায়েলি দৈনিক ইয়েদিয়োথ আহরোনোথ জানিয়েছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং ট্রাম্প প্রশাসনের তথাকথিত হানিমুন শেষ হতে চলেছে। এক সময়ের ঘনিষ্ঠতা কাটিয়ে এটি এমন এক সম্পর্কে পরিণ হয়েছে, যেখানে ওয়াশিংটনের দাবির কাছে নেতানিয়াহু নতি স্বীকার করছেন এবং ইসরায়েলকে এড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টই কৌশলগত সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের ওপর গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ অনেকটা চাপিয়ে দেন ট্রাম্পের দূত উইটকফ, যেখানে নেতানিয়াহুর সমর্থন ছিল না। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট বলেছে, এর মাধ্যমে মার্কিন এজেন্ডার প্রতি ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান আনুগত্য প্রকাশিত হচ্ছে। খবরে বলা হয়, লেবাননের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য এখন ইসরায়েলকে চাপ দিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদের স্বাক্ষর করা এই চুক্তিকে ‘প্রতারণা ও আত্মসমর্পণের চুক্তি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন নেতানিয়াহু। মনে হচ্ছে, নেতানিয়াহুকে এই চাপেও নতিস্বীকার করতে হবে। এই পরিবর্তন ইসরায়েলকে অনিশ্চিত অবস্থানে ফেলে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা ও লেবাননের যুদ্ধবিরতি নিয়ে বিভিন্নভাবে নিজেদের শর্ত বাস্তবায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি হামাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি আলোচনার কথা তুলে ধরে খবরে বলা হয়, বিচ্ছিন্নভাবে এই মার্কিন পদক্ষেপের সমালোচনা হলেও সরকার এ নিয়ে কিছু বলার সাহস পায়নি। আগের মতো ইসরায়েল মার্কিন নীতিতে প্রভাব বিস্তার করবে, এমনটা আশা করার সুযোগ নেই বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।