ঢাকা রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উত্তাল মার্চ

কালো পতাকা উঁচিয়ে ইয়াহিয়ার বৈঠক

কালো পতাকা উঁচিয়ে ইয়াহিয়ার বৈঠক

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস ছিল উত্তাল ঘটনাবহুল মাস। উত্তাল এবং সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এক একটা দিন পার হচ্ছিল। ফুঁসে উঠছিল গোটা দেশ। ১৯৭১ সালের ১৬ মার্চে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ভবনে যান বঙ্গবন্ধু। এদিন সকাল থেকেই উৎসুক জনতা অপেক্ষা করছিল বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া খানের বৈঠকের ফল কী হয় তা জানতে। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া বৈঠকটি শেষ হয় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের জানান, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আরও আলোচনা হবে। তবে ইয়াহিয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে নিজ বাসভবনে ফিরে বঙ্গবন্ধু দলের শীর্ষস্থানীয় সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। ১৬ মার্চ সারাদেশে আন্দোলন বাঁধভাঙা রূপ নেয়। চলতে থাকে শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের আলোচনা। রাজপথ মিছিলে মিছিলে উত্তপ্ত করে দেশের উদ্ভূত সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানে বঙ্গবন্ধুর সর্বশেষ মন্তব্যের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। এরই মধ্যে ৩ মার্চ থেকে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ে। মাঠে-ময়দানে সর্বত্রই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষণা নিয়ে তোলপাড়। অসহযোগ আন্দোলনের ১৬তম দিনে বঙ্গবন্ধুর নতুন নির্দেশ এলো- এখন থেকে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক কেন্দ্রের শুল্ক, কর, আবগারি কর ও বিক্রয় কর গ্রহণ করবে। কিন্তু এসব কর স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানে জমা দেয়া হবে না। এভাবেই অসহযোগ আন্দোলন তার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায়। এ সময় মওলানা ভাসানী ময়মনসিংহের জনসভায় দাবি করেন- বাংলাদেশের পাওনা বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দিন।

জামালপুরে হাজার হাজার মানুষের লাঠি ও নানা দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিল হয়। পত্রিকার খবরে বলা হয়, ঘটনাবহুল মার্চের ১৬ তারিখ, ১৯৭১ সালের এই দিনে ভারত তার ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে সমস্ত বিদেশি বিমানের পূর্ব পাকিস্তানে যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিমানযোগে পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য পরিবহন বন্ধ করতেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়। ঢাকায় আর্ট কলেজের ছাত্র-শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সভা করেন।

সভাশেষে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে মিছিল হয়। অন্যদিকে হানাদাররা সাতক্ষীরার মিছিলে গুলি চালায়। দেশের মানুষকে অনাহারে মারার চক্রান্ত করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা চার জাহাজ বোঝাই গম চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস না করে করাচি পাঠিয়ে দেয়।

দেশের সর্বত্র উড়ছিল কালো পতাকা। গড়ে উঠতে থাকে সংগ্রাম কমিটি। সব বয়স সব পেশা ও শ্রেণির মানুষ বেরিয়ে আসতে থাকে রাজপথে। পথে-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে তখন গণসংগীত, নাটক, পথনাটক ও পথসভা করে চলছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বেতার-টেলিভিশন শিল্পী সংসদ, মহিলা পরিষদ প্রভৃতি সংগঠন। হাইকোর্টের আইনজীবী, বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করতে থাকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত