ঢাকা রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান

ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান

রমজানে সবচেয়ে বড় কাজ ঈমান ও বিশ্বাসের পরিচর্যা, অনুশীলন। এই বিশ্বাস অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কিত। রোজাদার জীবনে কখনো আল্লাহকে দেখেনি, দেখা সম্ভব নয়; এরপরও সে বিশ্বাস করে আল্লাহ একজন আছেন। তিনি আমাকে সৃষ্টি করছেন, আমার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। আমাকে দেখে আছেন। তিনি হুকুম করেছেন, তাই যত কষ্ট হোক আমি দিনের বেলা পানাহার ও যৌন সংসর্গ বর্জন করে চলছি। আল্লাহর প্রতি এতটুকুন বিশ্বাস ইসলামে যথেষ্ট নয়।

আল্লাহ একজন আছেন, তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা-এটুকু বিশ্বাস পৌত্তলিকরাও পোষণ করে। কোরআন মজিদের সর্বত্র যে ঈমান ও বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে, যার ভিত্তিতে আমরা মুসলমান হিসেবে পরিচিত এবং পরকালে বেহেশত লাভের দাবিদার তার সাতটি শাখা আছে। প্রথমটি আল্লাহর উপর অবিচল ঈমান।

ঈমানের দ্বিতীয় শাখা ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান। ফেরেশতা ফারসি শব্দ । আরবিতে বলা হয় মালাক, বহুবচনে মালায়িকা। ফারসি ফেরেশতা দ্বারা মালাক, মালায়িকা ছাড়া আর কিছু বুঝায় না। কাজেই আমাদের ধর্মীয় মহলে ফেরেশতা পরিভাষাটি বিপুলভাবে সমাদৃত, সম্মানীয়।

ঈমানের সঙ্ঘায় বলা হয়েছে ‘...ওয়া মালায়িকাতিহী’ আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতিও ঈমান আনে। আল্লাহর অশরীরি সৃষ্টি জ্বিনদের তৈরি করা হয়েছে আগুন থেকে; আর ফেরেশতার সৃষ্টি নূর বা আলো থেকে। ফেরেশতারা একান্তভাবে আল্লাহর অনুগত, আল্লাহর হুকুম পালনে সর্বক্ষণ নিয়েজিত, যে আদেশ দেয়া হয় তা কখনো লঙ্ঘন করে না। ফেরেশতা পানাহার করে না, তাদের বিয়ে শাদী নেই, বংশ বিস্তার হয় না। ফেরেশতা পুরুষ নয়, মেয়েও নয়। তারা আল্লাহর অতি সম্মানিত, গুনাহখাতা মুক্ত পবিত্র সৃষ্টি। বিশাল সৃষ্টিলোকের ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূূর্ণ দায়িত্ব তাদের উপর অর্পিত।

ফেরেশতাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস সন্দেহাতীত হতে হবে। ফেরেশতাদের অস্বীকার করলে ইসলামের সবকিছুকে অস্বীকার করা হবে। কারণ, নবীজির প্রতি কোরআন এসেছে ফেরেশতা জিব্রাঈলের মাধ্যমে। ফেরেশতাগণ জগৎ ও জীবনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত।

আমরা দেখি রাষ্ট্র পরিচালনা করে সরকারী কর্মকর্তারা, জনজীবনের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী। আর্মির লোকেরা দেশ রক্ষার কাজে নিয়োজিত। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিচালনা ও পলিসি নির্ধারণে আরো বাহিনী আছে, যেগুলো সাধারণ মানুষের চোখের অন্তরালে। ডিজিএফআই, এনএসআই এর মতো বাহিনীগুলো দেশ পরিচালনায় সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। সৃষ্টিলোকের ব্যবস্থাপনায় ফেরেশতাদের ভূমিকাকে সরকার পরিচালনায় গোয়েন্দা বাহিনীসমূহের ভূমিকার সাথে তুলনা করা যায়।

পৃথিবীর ঋতুচক্রে আমরা সূর্য ও চাঁদের প্রভাব দেখি। সূর্যের প্রভাবে দিন হয়, রাত আসে। উত্তাপ আছে বলে পৃথিবী হিম শীতল হয় না, বেঁচে আছে। চাঁদের আলোতে রাত উদ্ভাসিত হয়, সমুদ্রে জোয়ার-ভাটা হয়। সৃষ্টি বৈচিত্র্য, পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকে আছে এই জোয়ার-ভাটার উপর। উত্তরীয় হাওয়ায় শীতের প্রকোপ আসে, দক্ষিণা হাওয়ার সাথে বসন্তের আগমন হয়। বর্ষায় মৌসুমি বায়ু বৃষ্টি নিয়ে আসে। সৃষ্টিলোকের এসব উপাদান একেকভাবে আল্লাহর হুকুম মানে সৃষ্টিজগতের কল্যাণ সাধন করে। এসব উপাদান আমাদের সামনে দৃশ্যমান। কিন্তু বিশ্ব ব্যবস্থাপনায় আল্লাহর এমন একটি বাহিনী নিয়োজিত আছে, যাদের মানুষ চোখে দেখে না। ল্যাবরেটরিতে নিয়ে পরীক্ষা করা যায় না। তাদের নাম ফেরেশতা।

ফেরেশতা আল¬াহর বিস্ময়কর সৃষ্টি। তারা আল্লাহর অতি সম্মানিত ও পুণ্যবান সৃষ্টি। তাদের উপর নানা দায়িত্ব ন্যস্ত।

ফেরেশতাদের সম্মানের কথা উলে¬খ করে মহান আল¬াহ ইরশাদ করেন, ‘(এ কোরআন) মহান, পূত-পবিত্র লিপিকরের (ফেরেশতার) হাতে লিপিবদ্ধ।’ (সুরা আবাসা, আয়াত : ১৫-১৬)।

ফেরেশতাদের ডানা আছে। অনায়াসে তারা যেখানে-সেখানে বিচরণ করতে পারেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘সব প্রশংসা আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা আল¬াহর, যিনি ফেরেশতাদের বার্তাবাহক করেন, যারা দুই দুই, তিন তিন বা চার চার পক্ষবিশিষ্ট। তিনি সৃষ্টিতে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন। আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সুরা ফাতির, আয়াত : ০১)।

ফেরেশতারা অত্যন্ত সুন্দর আকৃতির, শক্তিশালী। কোরআন অবতরণে ফেরেশতার ভূমিকা সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তাকে (হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে শিখিয়েছে শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাবান এমন একজন (ফেরেশতা জিব্রাঈল), যে নিজে (সুন্দর আকৃতিতে) স্থির ছিল।’ (সুরা নাজম, আয়াত : ৫-৬)।

সৃষ্টিগতভাবে ফেরেশতাদের আল্লাহর অবাধ্যতার শক্তি দেয়া হয়নি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘...তারা (ফেরেশতারা) তা অমান্য করে না, যা আল্লাহ তাদের আদেশ করেন। তারা যা করতে আদিষ্ট হয়, তাই করে।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)

দায়িত্ব পালনে শ্রান্তি ক্লান্তি ফেরেশতাদের আসে না। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘...যারা তোমার প্রতিপালকের সামনে আছে, তারা তো দিন ও রাতে তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তারা ক্লান্তি বোধ করে না।’ (সুরা হামিম সিজদা, আয়াত : ৩৮)।

আল্লাহ পাক তাদের বিভিন্ন দায়িত্ব ও কাজে নিয়োজিত রেখেছেন। চারজন অতি সম্মানিত ফেরেশতা আছেন, বলতে গেলে বিশ্বব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তাদের উপর অর্পিত। তারা হলেন, হযরত জিব্রাঈল, ইসরাফিল, মিকাঈল ও মালিকুল মউত বা আজরাঈল আলাইহিমুস সালাম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত