আগেও সিলেট এসেছেন হামজা চৌধুরী। তখন এতটা মাতামাতি হয়নি। এবার তার দেশে আসা নিয়ে শুরু হয়েছে উন্মাদনা। কারণ এখন তিনি বাংলাদেশের ফুটবলার। লাল-সবুজ জার্সি গায়ে অপেক্ষায় আছেন অভিষেকের। আর হামজার প্রতিক্ষায় ছিল বাংলাদেশ। ইতিপূর্বে জাতীয় দলের কোন ফুটবলারের জন্য হয়তো এমন প্রতীক্ষা ছিল না। হামজা চৌধুরী আসবেন বলে যেন সাজসাজ রব বাংলাদেশের ফুটবল অঙ্গনে। অবশেষে যুক্তরাজ্য থেকে সরাসরি ফ্লাইটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন শেফিল্ড ইউনাইটেডের এই তারকা। গতকাল সোমবার বেলা পৌনে ১২টায় বিমানবন্দরে অবতরণ করে হামজা চৌধুরীকে বহনকারী বিমান।
বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার পর হামজাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বাফুফের কর্মকর্তারা। তাকে বরণ করে নিতে সকাল থেকেই সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিড় করেন বিপুলসংখ্যক ফুটবলপ্রেমী, গণমাধ্যমকর্মী ও ইউটিউবার। তাকে দেখে স্লোগানে স্লোগানে মাতিয়ে তোলেন ভক্তরা। হামজার সঙ্গে এসেছেন স্ত্রী, সন্তান ও মা।
বিমান থেকে নামার প্রায় ১ ঘণ্টা পর গণমাধ্যমের সামনে আসেন হামজা। প্রচণ্ড ভিড়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নই সেভাবে বুঝছিলেন না তিনি। তবে হামজা যে সিলেটি ভাষা জানেন সেটা বোঝাতে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে বললেন, ‘ইনশা আল্লাহ আমরা উইন খরমু। বড় স্বপ্ন আছে, কাজ করব কোচ হাভিয়েরের সঙ্গে। ইনশাআল্লাহ আমরা উইন করিয়া প্রোগ্রেস করতে পারমু।’ দেশে ফেরা আর মানুষের ভিড় নিয়ে বললেন, ‘অনেক দিন পর ফিরলাম। আমি রোমাঞ্চিত। আমার হৃদয় পরিপূর্ণ।’
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে হামজা চৌধুরীকে নিয়ে গাড়িবহর হাবিগঞ্জের গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা দেয়। হামজার আগমনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরেই স্নানঘাটের বাড়ি ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বেলা পৌনে ৪টার দিকে হামজা চৌধুরীর গাড়িবহর বাহুবল উপজেলার স্নানঘাটের বাড়িতে পৌঁছানোর পর স্ত্রী ও সন্তানদের ফুল দিয়ে দেশীয় সংস্কৃতিতে বরণ করে নেন পরিবারের সদস্যরা।
হামজা বাড়িতে আসার আগ থেকেই শত শত মানুষ সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন। বাড়িভর্তি ছিল আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামের মানুষে। পুলিশের কঠোর নিরাপত্তাও ছিল। হামজা তার বাবার বাড়িতে আগেও এলেও তার স্ত্রী ও সন্তানরা এই প্রথমবারের মত বাড়িতে এসেছেন। বাড়িতে তিনি সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সেখানে আধা ঘণ্টার মত বিশ্রামের পর চলে যান বাড়ির পাশের মাদ্রাসার মাঠে। সেখানে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টা থেকেই হামজা চৌধুরীকে বরণ করতে সিলেটের ভক্তরা ফুল-ব্যানার-ঢাক ঢোল নিয়ে হাজির হন ওসমানী বিমানবন্দরে। তাদের হাতে হামজার আঁকা ছবি আর ব্যানার-ফ্যাস্টুন দেখা গেছে।
ভক্তদের এই ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তাবাহিনীকে। সাংবাদকর্মীদের ভিড়ও ছিল উপচেপড়া। হামজা ও তার পরিবারকে বরণ করে নিতে সিলেট বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন বাফুফের নির্বাহী সদস্য সাখাওয়াত হোসেন ভুইয়া শাহীন, কামরুল ইসলাম হিল্টন, গোলাম গাউস, ইকবাল হোসেন, সত্যজিৎ দাশ রুপু, ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ ও মন্জুরুল করিম। তাদের সঙ্গে ছিলেন হামজার বাবা মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী ও সিলেটের ফুটবলপ্রেমীরা। আগামী ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে বর্তমানে শেফিল্ড ইউনাইটেডের এই মিডফিল্ডারের অভিষেক হওয়ার কথা রয়েছে।
হামজা চৌধুরী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। তবে এখন তিনি বাংলাদেশেরও নাগরিক। তাকে নাগরিকত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এই উৎসব, আমেজের আবহের মধ্যে নিরাপত্তা শঙ্কাও আছে। হামজা তার স্ত্রী, তিন সন্তান এবং মাকে সঙ্গে নিয়ে আসছেন। বাবা দেওয়ান মুর্শেদ চৌধুরী চলে এসেছেন আগেই। ছোট বেলা থেকেই বাংলাদেশের প্রতি অন্যরকম টান ছিল হামজার। ছেলেকে দেশের জার্সিতে খেলতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন বাবা। তার স্বপ্নপূরণ এখন স্রেফ সময়ের ব্যাপার। অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু না ঘটলে আগামী ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে নামবেন হামজা। মা-বাবার সাথে গ্রামে এর আগেও হামজা এসেছেন কয়েকবার। এবার আসছেন প্রায় ১১ বছর পর। তার পরিবার জানিয়েছে, গ্রামের বাড়িতে একদিন থাকবেন হামজা।
সোমবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার কথা রয়েছে তার। আর ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচ খেলতে ২০ মার্চ দলের সাথে শিলংয়ের উদ্দেশ্যে উড়াল দেবেন তিনি।