ফেরেশতাদের কার কী দায়িত্ব

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

মুসলমান হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান। ফেরেশতারা নূর বা আলোর সৃষ্টি। তাদের ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে, দায়িত্বও অর্পিত আছে। তারা পূতপবিত্র, অতি সম্মানিত, আল্লাহর দূত। আল্লাহ যা আদেশ করেন তার অমান্যতা করেন না, হুবহু পালন করেন। কোরআন ও হাদিসে তাদের কিছু নাম এবং দায়িত্বের কথা উল্লেখ আছে। যেমন-

জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম : তিনি জিব্রাঈল আমিন নামে প্রসিদ্ধ। নবী রাসূলগণের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছানোর দায়িত্ব তিনি পালন করেন পূর্ণ আমানতদারীর সাথে, তাই তার উপাধি আমীন। রমজানে লাইলাতুল কদরে ইবাদতকারীদের জন্য রহমতের উপহার নিয়ে ফেরেশতারা দুনিয়াতে আসেন। তাদের নেতৃত্বে থাকেন রূহ। রূহ জিব্রাঈল আমীনের আরেকটি উপাধি। তার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।

মীকাঈল আলাইহিস সালাম : বৃষ্টির পশরা দিয়ে জমিনকে ভিজিয়ে দেয়া, মানুষের খাদ্যশস্যের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে তিনি নিয়োজিত।

ইসরাফিল আলাইহিস সালাম : পৃথিবীকে ধ্বংস ও গড়ার তিনি কাারিগর। আল্লাহর হুকুমে তিনি শিঙ্গায় ফুঁক দিবেন, সেই বজ্রনিনাদে প্রলয়কাণ্ড ঘটে যাবে। পাহাড় ধূনিত তুলার মতো উড়বে। আকাশ ভেঙে পড়বে, সবকিছু তছনছ হয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হবে। আবার যখন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন ইসরাফিল আলাইহিস সালাম দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁক দিবেন, সৃষ্টিজগতে প্রাণের পূণ সঞ্চার হবে। মানুষ মাটির টিবি থেকে উঁই পোকা বের হওয়ার মতো কবর থেকে বের হবে। হাশরের ময়দানে উপস্থিত হবে। শেষ বিচারের এজলাস বসবে।

আজরাঈল : চারজন সবচেয়ে মর্যাদাবান ফেরেশতার মধ্যে একজনের উপর দায়িত্ব হল, মানুষের জান কবজ করা। মৃত্যুর দূতও বলা হয় তাকে। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলেন, আজরাঈল নামটি হাদিস ও কোরআনের পরিভাষা নয়। ইসরাঈলী বর্ণনা থেকে অনুপ্রবেশ করেছে। তার নাম মালিকুল মউত, মৃত্যুর ফেরেশতা।

কিরামান কাতেবিন : ফেরেশতাদের আরেকটি শ্রেণি আছে তাদের কাজ বান্দাদের ভালো-মন্দ কাজগুলো রেকর্ড করা। তারা হলেন সম্মানিত লিপিকার। যিনি ডান দিকে আছেন তিনি নেকির কথা ও কাজগুলো লিখেন, যিনি বাম কাঁধে আছেন তিনি লিখেন গুনাহের কাজগুলো। মানুষের জীবনের সকল কিছু এই দুজন ফেরেশতা রেকর্ড করে রাখেন। ইদানিং সিসি ক্যামেরার গুরুত্ব ও ভূমিকা জনজীবনে অনস্বীকার্য। দুই কাঁধে বসানো কেরামান কাতেবীন এর দুটি ক্যামেরার ব্যাপারটি সেভাবে চিন্তা করতে পারি।

আরেকদল ফেরেশতা আছে, যারা আমাদের সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে। একদল আছে রাতের বেলা আমাদের পাহারা দেয়। আরেকদল আছে দিনের বেলা আমাদের উপর পর্যবেক্ষণ করে।

পরিব্রাজক একদল ফেরেশতা আছেন। তাদের কাজ সাংবাদিকের মতো। তারা আল্লাহর যিকির এর মজলিস সন্ধান করেন। আল্লাহর রহমতের শামিয়ানা টানান তেলাওয়াত ও যিকিররত বান্দাদের উপর।

একটি শ্রেণি আছে মানুষকে পাহারা দেয়া, সুরক্ষা দেয়া ঘুমে ও নিদ্রায় তথা সর্বাবস্থায়। তারা বান্দাদের বডি গার্ডের মতো। বিপদ আপদ থেকে সুরক্ষা দেন।

মুনকির ও নাকির : মৃত্যুর পর যখন কবরের জীবন শুরু হয়, তখন দুজন ফেরেশতা এসে মৃতব্যক্তিকে প্রশ্ন করবেন, এই ফেরেশতাদের নাম মুনকির ও নাকির। তাদের প্রতি আল্লাহ শান্তি বর্ষণ করুন।

রিদওয়ান : বেহেশতের বিশাল ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত আছেন অগণিত ফেরেশতা। তাদের নাম ‘খাজানাতুল জান্নাত’। তাদের দায়িত্বে যিনি আছেন, কিংবা জান্নাতের প্রধান পাহারাদার, তার নাম রিদওয়ান।

মালিক : সাতটি দোযখ আছে যেখানে জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন জ্বলছে। এর ব্যবস্থাপনায়ও আছে ফেরেশতারা। তাদের সর্দারের নাম মালিক।

হামালাতিল আরশ : আসমান জমিন যখন সৃষ্টি হয়নি তখন কী অবস্থা ছিল। হাদিসের ভাষ্য, তখন আল্লাহর আরশ ছিল পানির উপর স্থিত। এর পঞ্চাশ হাজার বছর পর তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেন। তারপরেই পর্যায়ক্রমে পৃথিবীতে সৃষ্টি বৈচিত্র্যের বিস্তার ঘটে। শুরু থেকে আল্লাহর আরশ বা আসন বহন করতেন একদল ফেরেশতা। তাদের নাম হামালাতিল আরশ।

কিছু ফেরেশতা আছেন যারা আল্লাহর পক্ষ হতে মানুষের সেবায় নিয়োজিত। হাদিসের ভাষ্য অনুসারে বান্দার কিছু কাজ ও দোয়া আছে, যেগুলো পালন করলে আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের নিয়োগ করেন বান্দার পাহারায়, সেবায়।

মানব শিশুর ভ্রুণ যখন মাতৃগর্ভে স্থিত হয়, সেখানেও মানব শিশুর জীবন গঠন করে দেয়ার জন্য একদল ফেরেশতা ডিউটি করেন।

মোটকথা আসমানে জমিনে, গ্রহ নক্ষত্রে, চন্দ্রে সূর্যে বাতাসে মেঘমালায় জীবন জগতে উদ্ভিদ জগতে যাকিছু হয়, ঘটে, তার পেছনে থাকে আল্লাহর পক্ষ হতে নিয়োজিত ফেরেশতারা। আসমান ও জমিনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত এসব ফেরেশতা কোরআনের ভাষায় ‘মুদাববিরাতে আমর’ কিংবা ‘মুকাসসিমাতে আমর’। ফেরেশতারা কত প্রকার এবং তাদের সংখ্যা কত তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। ফেরেশতাদের বিচিত্র কার্যাবলির বর্ণনা রয়েছে কোরআন মজিদে। যেমন- ‘শপথ তাদের যারা নির্মমভাবে উৎপাটন করে এবং যারা মৃদুভাবে বন্ধনমুক্ত করে দেয়। এবং যারা তীব্র গতিতে সন্তরণ করে, আর যারা দ্রুতবেগে অগ্রসর হয়। অতঃপর যারা সকল কাজ নির্বাহ করে।’ (সূরা নাজিআত, আয়াত-১-৫)।

‘শপথ তাদের যারা সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান ও যারা কঠোর পরিচালক এবং যারা জিকর ও আবৃত্তিতে রত।’ (সূরা সাফফাত, আয়াত-১-৩)।

‘তারা আগ বেড়ে কথা বলে না; তারা তো তার আদেশ অনুসারেই কাজ করে থাকে। তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যাকিছু আছে তা তিনি অবগত। তারা সুপারিশ করে শুধু ওই সব লোকের জন্য, যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট এবং তারা তার ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত।’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত-২৭-২৮)

‘হে মোমিনগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর আগুন হতে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমণ্ডহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করে না, আল্লাহ তাদের যা আদেশ করেন তা। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তা-ই করে। (সূরা তাহারিম, আয়াত-৬)।