ইয়েমেনের হুথি আনসার-আল্লাহ আন্দোলনের ব্যালাস্টিক মিসাইল হামলায় আবারও কেঁপেছে ইসরায়েল। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে সাইরেনের ভয়ংকর শব্দে ঘুম ভেঙেছে তেলআবিব ও জেরুজালেমসহ মধ্য ইসরায়েলের বাসিন্দাদের। ইসরায়েলি চ্যানেল ফোরটিন জানিয়েছে, ভোর ৪টা ১ মিনিটের সাইরেনে যখন ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেট ভবনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, তখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নেসেটে বৈঠক করছিলেন। এরপর তাকে দ্রুত বোমা আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। খবরে বলা হয়, হামলার পর মধ্য ইসরায়েলের হাজার হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে থাকেন। এসময় পদদলিত হয়ে অন্তত ১৩ জন গুরুতর আহত হন। হামলার কারণে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের ফ্লাইটগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনী নতুন করে ভয়াবহ হামলা শুরুর পর ইসরায়েলে এটি ছিল ইয়েমেনের হুথি আনসার-আল্লাহর নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র বাহিনীর দ্বিতীয় হামলা। ইসরায়েলি বাহিনী যখন গাজায় হামলা চালাচ্ছে, তখন ইয়েমেনে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলের একনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবারও এই হামলা অব্যাহত ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুথি আনসার-আল্লাহকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি জানান, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি গণহত্যার জবাবে মার্কিন হুমকিকে উপেক্ষা করে ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে প্যালেস্টাইন-টু হাইপারসনিক মিসাইল নিক্ষেপ করেছে ইয়েমেনের রকেট ফোর্স। একইসঙ্গে লোহিত সাগরে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান এবং অন্য জাহাজগুলোতে সমন্বিত হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন শাখা।
মধ্যগাজায় আবার স্থলহামলা: হামাসের হুঁশিয়ারি: হামাস গত বুধবার বলেছে, মধ্যগাজায় চলমান স্থলহামলার পরিণতির জন্য দখলদার ইসরায়েল এবং এর নেতারা দায়ী থাকবেন। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার জন্য ইসরায়েলি সরকারের বারবার হুমকি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের মধ্যকার গভীর সংকটকে প্রতিফলিত করছে। হামাস জোর দিয়ে বলেছে, ফিলিস্তিনি জনগণ জোরপূর্বক কিংবা স্বেচ্ছায় বাস্তুচ্যুতির সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করবে। আল-কুদসে ছাড়া অন্য কোথাও অভিবাসন হবে না। বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি হামাসের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, তারা যেন ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনেন এবং জঘন্য কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে চাপ প্রয়োগ করেন। আল-মায়াদিনের খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনী বুধবার নেতজারিম করিডোরকে লক্ষ্য করে মধ্যগাজায় নতুন করে স্থলহামলা শুরু করেছে। এরইমধ্যে তারা করিডোরটি দখলেও নিয়েছে। এই এলাকায় একটি আংশিক বাফার তৈরির জন্য সীমিত পরিসরে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। গত মাসে যুদ্ধবিরতির চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েল ওই এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছিল।
ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি চাইল ভারত: যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নারী-শিশুসহ শত শত মানুষের মৃত্যুতে বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষ যখন শোকস্তব্ধ, তার মধ্যেই গাজায় থাকা ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে ভারত। বন্দিদের মুক্তির পাশাপাশি, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক্স-এ এক বিবৃতি পোস্ট করে গাজার জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা সরবরাহেরও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তবে, সব ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেয়া গুরুত্বপূর্ণ।
পবিত্র রমজান মাসে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় সর্বশেষ ৪৮ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৯৭০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েকশ’ মানুষ। গত বুধবার হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি যুদ্ধে প্রাণহানির সংখ্যা ৪৮ হাজার ৫৭৭ জনে পৌঁছেছিল। এরপর বুধবার দুপুরের দিকে এই সংখ্যা বেড়ে ৪৯ হাজার ৫৪৭ জনে দাঁড়িয়েছে। জানুয়ারিতে শুরু হওয়া নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা বলে জানায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে, গাজায় নিযুক্ত জাতিসংঘের একটি ভবনে বুধবার ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়। এতে সংস্থাটির অন্তত একজন বিদেশি কর্মী নিহত এবং পাঁচজন গুরুতর আহত হন। এর বাইরে, বৃহস্পতিবার ভোরে উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ৩৭ জন নিহত হন বলে জানিয়েছেন আলজাজিরার সংবাদদাতা।
নেতজারিম করিডোর আবার ইসরায়েলের দখলে: এদিকে, যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে উপেক্ষা করে উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণে যাতায়াতের জন্য নির্ধারিত প্রধান রুট সালাহ আল-দিন স্ট্রিট বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। বুধবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলো চুক্তির পর প্রথমবারের মতো গাজাসিটির দক্ষিণে নেতজারিমের কাছে সালাহ আল-দিন স্ট্রিটে পৌঁছেছে এবং চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। ইসরায়েলি দৈনিক ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানিয়েছে, সালাহ আল-দিন স্ট্রিটে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে, যা আগে বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীরা যানবাহনে উত্তরে ফিরে আসার জন্য ব্যবহার করতেন। তবে, গাজার পশ্চিমে উপকূলীয় আল-রশিদ স্ট্রিট এখনও খোলা রয়েছে, যেখানে মানুষ হেঁটে উত্তর দিকে যেতে পারছেন। হামাস জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিবিনিময় চুক্তির জন্য বিপর্যয়কর। এর মাধ্যমে গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ আরও শক্তিশালী এবং এখানকার জনগণের জীবন আরও সংকটাপন্ন হয়েছে।