ঢাকা শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উত্তাল মার্চ

নীতির প্রশ্নে আপস নেই

নীতির প্রশ্নে আপস নেই

অসহযোগ আন্দোলনের ২০তম দিনে বিকালে ধানমন্ডির বাসভবনে সমবেত জনতার উদ্দেশে শেখ মুজিব বলেন, বুলেট-বেয়োনেট দ্বারা কখনও সাড়ে সাত কোটি বাঙালির দাবিকে স্তব্ধ করা যাবে না। গুজব ও বিভেদ সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এর আগে সকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খানের পঞ্চম দফা বৈঠক হয়। সেটি ছিল অনির্ধারিত বৈঠক। ৭০ মিনিটের ওই বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমেদ। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিস্তারিত কিছু জানাননি বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, আগের বৈঠকের আলোচনায় উদ্ভূত কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যার জন্য এই বৈঠক। এর আগে ধানমণ্ডির বাসভবনে পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম কৌঁসুলি একে ব্রোহির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বসেন বঙ্গবন্ধু। এদিকে সন্ধ্যায় পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো কড়া সেনা পাহারায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। সেখানে দুই ঘণ্টার বেশি সময় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। তবে ওই বৈঠক সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা যায়নি। ভুট্টোকে বিমানবন্দর থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়ে আসার সময় রাস্তার দুপাশে পথচারীরা ভুট্টো-বিরোধী স্লোগান দেয়। ওইদিন সেনাবাহিনীর লোকেরা হোটেল কর্মচারীদের জামায় কালোব্যাজ ও বাংলার পতাকা খুলে ফেলার জন্য চাপ দেয়। তবে বাঙালি হোটেল কর্মীরা পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেন, তারা ‘ভাত-পানি’ বন্ধ করে দেবেন। পরে সামরিক কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামলাতে কয়েকজন সামরিক সদস্যকে সরিয়ে নেয়। হোটেল লাউঞ্জে অপেক্ষমান সাংবাদিকরা সেদিন ভুট্টোর দেখা পাননি। হোটেলে পৌঁছে ভুট্টো সরাসরি লিফটে চড়েন। সাংবাদিকরা লিফটে উঠতে চাইলে ভুট্টোর প্রহরীরা অস্ত্র উঁচিয়ে বাধা দেয়। পরদিন দৈনিক ইত্তেফাক ভুট্টোর ঢাকা সফরের বর্ণনা দিয়ে খবর প্রকাশ করে। শিরোনাম ছিল, ‘হঠ যাও- সব কুছ ঠিক হো যায়ে গা। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসকে ‘প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালনের আহ্বান জানায় এবং কর্মসূচি ঘোষণা করে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ২৩ মার্চের ‘প্রতিরোধ দিবসে’এর কর্মসূচির প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করে। মগবাজারে মহিলা সংগ্রাম পরিষদের এক সমাবেশে সেনাবাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে একটি প্যারা-মিলিটারি বাহিনী গঠনের আহ্বান জানানো হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ ২৩ মার্চ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি পণ্য বর্জনের সপ্তাহ পালনের ঘোষণা দেয়। এদিকে ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বিকালে চট্টগ্রামের পলো গ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসভায় বলেন, আলোচনায় ফল হবে না। এ দেশের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থেকে চাপরাশি পর্যন্ত যখন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে মানে না, তখন শাসন ক্ষমতা শেখ মুজিবের হাতে দেয়া উচিত। ১৯ মার্চ জয়দেবপুরে সেনাবাহিনীর গুলিতে অন্তত ২০ জন নিহত হওয়ার পর কারফিউ জারি করা হয়েছিল। ২১ মার্চ দুপুর ১২টায় তা ছয় ঘণ্টার জন্য প্রত্যাহার করা হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আবার কারফিউ জারি করা হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত