ঢাকা শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা ও গণহত্যা

প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ

প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনে মুসলিমদের ওপর ইসরায়েলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় পবিত্র রমজান মাসেও নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে ইসরায়েল যে বর্বরতা দেখাচ্ছে, এর প্রতিবাদে রাজধানীর বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে হেফাজতে ইসলাম ও খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ করে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ মুসল্লিরা। গতকাল শুক্রবার বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে জুমার নামাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভ শুরু হয়। এ সময় মুসল্লিরা ইসরায়েলবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন। মিছিলকারীরা ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ এবং নেতানিয়াহুর বিচার দাবি করেন। মুসল্লিরা ফিলিস্তিনের পতাকা উঁচিয়ে তারা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, জাতিসংঘ জবাব দাও’, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ এসব বলে স্লোগান দেন।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে খেলাফত মজলিসের নেতা অধ্যাপক আব্দুল জলিল বলেন, ‘ইসরায়েল যে হামলা শুরু করেছে এটা পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট। এই নির্যাতন দ্রুত বন্ধ না হলে পৃথিবীর সব মুসলমান ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধে হামলা শুরু করবে। এছাড়া ইসরায়েলকে দমাতে হলে মুসলিম বিশ্বের উচিত তাদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে তাদের সব পণ্য বয়কট করা। এটি করা গেলেই ইসরায়েল দমে যাবে।’

খেলাফত মজসিল নেতা বলেন, ‘এই ইসরায়েলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য মদদ রয়েছে। তাদের সমর্থন ছাড়া ইসরায়েল এমন হামলা কখনো চালাত না। ফলে ইসরায়েলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকেও বয়কট করতে হবে। এছাড়া যেখানে মুসলমানরা নির্যাতনে শিকার হবে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে মুসলিম বিশ্বের।’

জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নেতা আব্দুল্লাহ হাসান বলেন, ‘আমরা কারো কাছে বিচার দিতে চাই না। এবার আমরা ইসরায়েলের দিকে আঘাত করতে চাই। মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া।’

এদিকে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের গেটে ও পল্টন মোড়ে পর্যাপ্ত পুলিশ, সেনা সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন অবস্থান করছিলেন।

ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ এবং আজাদ ফিলিস্তিনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা মুসলিম বিশ্বের নেতাদের ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। গতকাল শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টায় আজাদ ফিলিস্তিন ও ইনকিলাব মঞ্চের আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে মিছিল শুরু হয়ে হলপাড়া, প্রশাসনিক ভবন এলাকা, ভিসি চত্বর রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

এ সময় তারা- ফ্রি ফ্রি, প্যালেস্টাইন; ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সী, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রী; ইন্তিফাদা ইন্তিফাদা, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ; জায়োনবাদ নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্তিপাক; ওয়ান টু থ্রি ফোর, অকোপেশন-জায়োনিজম নো মোর- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ঢাবি শিক্ষার্থী এ বি জোবায়ের বলেন, আজকে সারা বিশ্বের মুসলিমরা যেখানে রমজান, ইফতার, সাহরি করছে সেখানে ফিলিস্তিনের শিশু-নারীরা লাশের মিছিলে শরিক হচ্ছে। বিনা নোটিশে সন্ত্রাসী ইসরায়েল আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের উপর হামলা করছে। তাদের নির্বিচারে হত্যা করে যাচ্ছে।

আজাদ ফিলিস্তিনের আহ্বায়ক ইমরান বলেন, আমাদের লড়াই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, উগ্রবাদী হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে একই সঙ্গে জায়োনিজমের বিরুদ্ধে। আমরা বলতে চাই যারা যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিনে আমেরিকার মদদে হাজারো মুসলিমকে হত্যা করছেন তাদের বিরুদ্ধে আমাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত প্রতিবাদ করে যাব। আমরা মুসলিম বিশ্বের কাছে আহ্বান জানাই, আপনারা সোচ্চার হোন। ফিলিস্তিনকে রক্ষা করুন।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ উসমান বিন হাদী বলেন, আওয়ামী লীগ ইসরায়েল থেকে স্পাইওয়্যার কিনেছিল আমাদের ভাই-বোনদের ওপর নজরদারির জন্য। আমরা এর হিসাব চাই। যে স্পাইওয়্যার কিনে আমার ভাইকে আয়নাঘরে রাখা হয়েছে তার বিচার করতে হবে। আমাদের পাসপোর্ট থেকে এক্সেপ্ট ইসরায়েল লেখা পুনর্বহাল করতে হবে।

এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তারা গাজার মুসলিমদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

অপরদিকে ইসলামী দলগুলোর ডাকা বিক্ষোভ মিছিলকে ঘিরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পল্টন মোড়ে রাখা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জলকামান, এপিসি কার ও দুইটি প্রিজন ভ্যান। এ ছাড়া বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রবেশমুখে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। আর নাইটিঙ্গেল মোড়ে বিজিবি সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। এদিকে মসজিদে প্রবেশের সময় মুসল্লিদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের। এ ছাড়া সাদা পোশাক ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য জ্যাকেট পরে অবস্থান নিয়েছে।

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনে মুসলিমদের ওপর ইসরায়েলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।

মৌলভীবাজার : ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি নৃশংস গণহত্যা ও বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির মৌলভীবাজার শহর শাখা। জুমার নামাজ শেষে শহরের চৌমুহনার দেওয়ানি জামে মসজিদ থেকে মিছিলটি বের হয়ে এম সাইফুর রহমান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কুসুমবাগে গিয়ে সমাবেশে করে। শহর সেক্রেটারি কাজী দাইয়ান আহমদের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শহর সভাপতি তারেক আজিজ ও সাবেক শহর সভাপতি মুর্শেদ আহমদ চৌধুরী। সমাবেশে বক্তারা শান্তি চুক্তির পরও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ জানান ও বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়কে এই সংকটে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সাতক্ষীরা : ইসরায়েল কর্তৃক বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাতক্ষীরা শহর শাখা। গতকাল সাতক্ষীরা জেলা শহরের খুলনা রোডস্থ মোড় শহীদ আসিফ চত্বরে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। সাতক্ষীরা শহর শিবিরের সেক্রেটারি মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ইসলাম ছাত্রশিবিরের সাতক্ষীরা শহর শিবিরের সভাপতি আল মামুন।

নওগাঁ : ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি নৃশংস গণহত্যা ও বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে নওগাঁয় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল শহরের কাচারী মসজিদ চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মুক্তির মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ছাত্রশিবির নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি সারওয়ার হোসেন, সেক্রেটারি আব্দুর রাকিব অফিস সম্পাদক আজফারুল হকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

মুন্সীগঞ্জ : জুমার নামাজের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভবেরচর বাস স্ট্যান্ড এলাকায় তাওহীদি জনতার ব্যানারে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। এর আগে প্রতিবাদী মুসল্লিরা বিভিন্ন মসজিদ থেকে জুম্মার নামাজ শেষে ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একত্রিত হয়।বক্তারা বলেন, যুদ্ধবাজ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মদদপুষ্ট ইসরায়েলি বাহিনী যুদ্ধবিরতিকে অমান্য করে গাজায় বোমা হামলা এবং নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে বিশ্ব মানবতাকে ধ্বংসের এক মহাপরিকল্পনা করেছে। ফিলিস্তিনের মানুষ এই হত্যাযজ্ঞ থেকে মুক্তি পাক। অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বের সব মানবতাবাদী মানুষদের সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান তারা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিক্ষোভণ্ডসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামাবেশে ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা। গতকাল জুমার নামাজের পর শহরের শান্তিমোড়ে সর্বস্তরের মুসল্লিদের অংশগ্রহণে এই কর্মসূচি পালিত হয়। পরে সেখান থেকে একটি মিছিল বের করে বিশ্বরোডে গিয়ে গাজাবাসী শান্তির পাশাপাশি ইসরাইলের ধ্বংস কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ইসরায়েলের ইহুদিরা শান্তিচুক্তি লঙ্ঘন করে গাজার মুসলিমদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে করে সেখানকার নারী-শিশুসহ অসংখ্য মানুষ নিহত হয়েছে। আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। অনাহারে দিন কাটছে তাদের। সেখানকার মানুষরা মৌলিক চাহিদা থেকেও বঞ্চিত। তারা আরো বলেন, হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে যে শান্তিচুক্তি হয়েছে, সেই শান্তি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমাদের যে ঘৃণা রয়েছে, সেই ঘৃণা অব্যাহত থাকবে। আমরা ইসরায়েলের সবধরণের পণ্য বয়কট করবো। অন্যকেও এই কাজে উৎসাহ দিবো। যাতে ইসরাইল আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়।সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাহিন খান, মুত্তাসিন বিশ্বাস, শিক্ষার্থী তানভির আহমেদ ও মাহফুজ, রামকৃষ্টপুর মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, কোর্ট মসজিদের ইমাম মাওলানা মো.সুলতান আলী, আরামবাগ মসজিদের ইমাম মাওলানা মো.জাহিদ।

প্রসঙ্গত, গাজায় কথিত যুদ্ধ বিরতির মধ্যেও ইসরায়েল অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রতিদিনই শত শত মানুষকে হত্যা করছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ নারী ও শিশু। তাদের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে খোদ ইসরায়েলেই বিক্ষোভ করছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়া সারা বিশ্বেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত