ঢাকা বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিবেকের কাঠগড়ায় মুসলিম উম্মাহ

বিবেকের কাঠগড়ায় মুসলিম উম্মাহ

ফিলিস্তিন। অসংখ্য নবী রাসুলের স্মৃতিধন্য পবিত্রভূমি। ইসলামের দ্বিতীয় কেবলা মসজিদুল আকসা ফিলিস্তিনে, বায়তুল মুকাদ্দাসে। নবীজি আল্লাহর সান্নিধ্যে মেরাজে যাওয়ার সময় যাত্রাবিরতি করেছিলেন মসজিদুল আকসায়। আল কোরআনে সূরা বনি ইসরাঈলে এ কথা উল্লেখ আছে। সেই পবিত্রভূমিতে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে ইসরাঈল নামক দানব শক্তি। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা ইহুদিরা, আল্লাহর অভিশপ্তরা জড়ো হয়েছে ফিলিস্তিনে। নানা চক্রান্ত ষড়যন্ত্র হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সেখান থেকে উৎখাত করেছে আদিবাসী ফিলিস্তিনি আরবদের। অন্যায় জুলুমণ্ডনির্যাতনের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অভিশপ্ত ইসরাঈল রাষ্ট্র। ফিলিস্তিনীরা তাদের পৈত্রিক ভিটেমাটি থেকে বিতাড়িত হয়ে বিভিন্ন দেশে শরণার্থী।

ফিলিস্তিন বলতে দুটি জায়গা এখনো আছে। একটি জর্দান নদীর পশ্চিম তীর, আরেকটি এক চিলতে ভূখণ্ড গাজা। পশ্চিম তীরে মাহমুদ আব্বাসের ফিলিস্তিনি প্রশাসন থাকলেও তা নামকাওয়াস্তে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েলি জল্লাদরা। গাজায় গত দেড় বছরের বেশিকাল তাণ্ডব চালিয়েছে ইসরাঈল। হত্যা, নির্যাতন, বুলডোজার দিয়ে পিষে ফেলেছে গাজার সবকিছু। এমন অপকর্ম নেই, যা ইসরাঈল করেনি। এসব কাজে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা।

এখন ইন্টারনেটের যুগ। ফলে গাজার উপর ইসরাইলি নির্যাতনের লোমহর্ষক দৃশ্যগুলো সারা দুনিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু মৌখিক নিন্দা ছাড়া কার্যকর কিছু কেউ করছে না। এমনকি সৌদি আরবের মতো বড় ইসলামী দেশ ইসরায়েলকে ধমক দিয়ে একটি কড়া বিবৃতিও দিচ্ছে না। বিগত দেড় বছরের মাথায় অনেক টানাপড়েনের পর যুদ্ধ বিরতি হল। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মাঝে বন্দি বিনিময় হলো। কিন্তু পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে ফিলিস্তিনিদের উপর আবার আক্রমণ শুরু করেছে ইসরায়েল।

প্রথম রমজানে নাকি কাবাঘরে রেকর্ড সংখ্যক একদিনে ৫ লাখ লোক ওমরা পালন করেছে। কিন্তু পাশে ফিলিস্তিনি ভাইদের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে সে ব্যাপারে কোনো বলিষ্ঠ প্রতিক্রিয়া দেখায়নি বড় আরব রাষ্ট্রটি। এই দুঃখ রাখার জায়গা আমাদের নেই। অন্তত বাংলাদেশ যে ভাষায় গাজার সর্বশেষ পরিস্থিতির উপর বক্তব্য দিয়েছে সৌদি সরকার সেরূপ একটি বক্তব্য দিলেও মনকে প্রবোধ দিতে পারতাম। বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে মিডিয়ার বক্তব্য-

‘গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসন পুনরায় শুরু হওয়ার তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে বাংলাদেশ সরকার। এই হামলার ফলে শিশু ও নারীসহ নিরীহ বেসামরিক মানুষের ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে এবং এ অঞ্চলে এরই মধ্যে মানবিক পরিস্থিতির আরও ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। সহিংসতার এই মাত্রা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং সাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি চরম অবজ্ঞা।’

ঘনবসতিপূর্ণ বেসামরিক এলাকায় অব্যাহত নির্বিচার বিমান হামলার নিন্দা জানিয়ে ইসলায়েলকে অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ করা, সংযম প্রদর্শন করা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের নীতিগুলোকে সম্মান করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে, বিশেষ করে জাতিসংঘকে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে, বেসামরিক জীবন রক্ষা করতে এবং গাজার অবরুদ্ধ জনগণের কাছে নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য জরুরি ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও আহ্বান জানাচ্ছে।’

সাম্প্রতিক গাজা ইস্যুতে বাংলাদেশের এই বিবৃতির জন্য আমরা সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানাই। একই সাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলোকে বিশেষ করে আরব বিশ্বের শেখ ও আমীরদের ফিলিস্তিনি ভাইদের প্রতি দায়িত্ব পালনের আকুতি জানাচ্ছি।

সত্যিই মুসলিম উম্মাহ আজ দিশাহারা। গাজায় এতো আগ্রাসন, হত্যাযজ্ঞের তাণ্ডব, মানবতার করুণ দুর্দশায় মুসলিম হিসেবে নিজেদের অসহায়ত্বে আমরা নির্বাক ভাষাহারা।

আল্লাহর শাশ্বত বিধান, তিনি মুসলমানরা দায়িত্ব পালন করে কি না দেখবেন। তারপরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন, যা কল্পনার বাইরে। কোরআনের ঘোষণায় ইহুদিরা অভিশপ্ত। তার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি, পৃথিবীতে ইহুদি ছাড়া এমন কোনো মানুষ নেই যে ফিলিস্তিনে মানবতার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন করে। দুনিয়ার প্রতিটি মানুষ ইসরায়েলকে ঘৃণা করে, এটিই আল্লাহর কাছে ইহুদিরা অভিশপ্ত হওয়ার প্রমাণ।

প্রশ্ন হলো, গাজার ভাইবোনদের প্রতি আমার আপনার দায়িত্ব কী। অবশ্যই। গাজায় ইসরাঈলি তাণ্ডবের বিরুদ্ধে ঘৃণা বর্ষণ করা, মানুষকে সচেতন করা, বক্তৃতা বিবৃতি, লেখালেখির মাধ্যমে এহেন অমানবিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রতিটি সচেতন মানুষের উপর কর্তব্য। দেশের সর্বস্তরের জনগণ যদি ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ও ইসরায়েলের নিন্দায় সোচ্চার হয়, তবেই সরকারি মহল জাগ্রত হবে। এই রমজানে প্রতিটি দোয়ায় ফিলিস্তিনি ভাইদের জন্য কাঁদতে হবে। কাঁদতে হবে পবিত্র ভূমির বাসিন্দা আরবদের ঘুম ভাঙানোর জন্য। কাঁদতে হবে এ জন্য যে, আল্লাহর নবী বলেছেন, ‘মুসলমানরা পারস্পরিক ভালোবাসা, মায়ামমতা ও সহানুভূতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে এক দেহের ন্যায়। দেহের একটি অঙ্গ যদি ব্যথায় কাতর হয়, তাহলে সারা শরীর জ্বর ও বিনিদ্রায় তার প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করে।’ (মুসলিম) সত্যিই গাজা ইস্যুতে আমরা বিবেকের আদালতে বিচারের কাঠগড়ায়।

গাজা!

আরবদের ঘুম ভাঙাতে, জাগাতে তোমার আর কত রক্ত দিতে হবে,

পশ্চিমা দাসত্বের শৃঙ্খলমুক্ত করতে তাদের কত পরীক্ষা দিতে হবে।

নপুংশক শাসকদের গদি টলাতে ইহুদিদের কত তাণ্ডব লাগবে,

মুসলমানের রক্তে আগুন ধরাতে কেউ কী উঠবে না জেগে।

সালাহ উদ্দিন তুমি আর কতকাল ঘুমাবে কবরে আবার জাগো

ইহুদি শাপদের থাবায় বিক্ষত গাজা তোমার অপেক্ষায়, দেখ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত