ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সিয়াম সাধনার অর্জন

সিয়াম সাধনার অর্জন

শারীরিক অসুখ, রোগ-শোকের কারণ উদ্ঘাটনের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার উন্নত যন্ত্র আবিস্কার হয়েছে। শরীরের অভ্যন্তরের ছবি তুলে এনে বলে দিচ্ছে, কোথায় কোন রোগ লুকিয়ে আছে। কোন ধরনের জীবণু আক্রমণ করেছে। মন ও মস্তিষ্কের রোগ নির্ণয়ের জন্য মনোবিজ্ঞানের নানা ফর্মুলাও আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু মানুষের রূহের তথা আত্মার কী ধরনের রোগ হয়েছে তা উদ্ঘাটনের যন্ত্র এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। আরো সাফ কথায়, মানুষের পাপ-পুণ্য নির্ণয় করার যন্ত্র এখনো বাজারে পাওয়া যায় না।

হাদিস শরিফে আছে, মানুষ যখন কোনো পাপ করে সাথে সাথে তার ক্বলবের আয়নায় একটি ছোট দাগ পড়ে যায়। এই দাগ মুছতে হলে এক প্রকার মেডিসিন লাগে, ধোয়ার জন্য পানির ধরনও অন্যরকম। পাপ মোচনের মেডিসিন হল, মানুষ যে পাপকর্মটি করেছে, তার কথা স্মরণ করে মনে মনে অনুতপ্ত হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেবে যে, এই পাপটি জীবনে দ্বিতীয়বার করব না, মুখে বলতে হবে এবং আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে। এর নাম তাওবা।

তাওবা নামক মেডিসিন লাগানোর সাথে সাথে আত্মার আয়নার পাপের দাগটি মুছে যাবে। যদি ধূয়ে বাইরে ফেলে দিতে চান, তাহলে একপ্রকার পানি লাগবে। সে পানি বাইরের কোনো পানি নয়, সেটা আল্লাহর ভয়ে অন্তর-নিসৃত চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রু।

লোকটি জ্ঞানী, শিক্ষিত, ভদ্র কিংবা মূর্খ, মন্দ ও দুষ্ট লোক, তা তার চরিত্র দিয়ে বুঝা যায়। এসব বৈশিষ্ট্য মানুষের মন বা মস্তিষ্কের সাথে জড়িত। কিন্তু লোকটি পাপী বা পুণ্যবান তা নির্ণয়ের মানদ- যুক্ত আছে তার আত্মার সাথে। আত্মার গুণ বা রোগ নির্ণয়ের জন্য ইদানিং একটি যন্ত্র বের হয়েছে, যত্রতত্র পাওয়া যায়। আপনি, আমি নিজে ভালো মানুষ কিনা, কিংবা কতখানি নেককার বা বদকার তা পরিমাপ করতে পারব অনায়াসে।

আমার আপনার হাতের এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন সেট, নেট দুনিয়ায় ভালো-মন্দ সবকিছুর সাথে এর যোগাযোগ। চাইলে জ্ঞান ও তথ্য-ভান্ডারের বিশাল জগতে প্রবেশ করা যাবে। চাইলে অশ্লীলতার অন্ধকারে হাবুডুবু খেতে পারবে। এখন আপনি আমি নিজেকে পরীক্ষা করি।

নেট দুনিয়ায় প্রবেশ করার পর আমার মন কি অশ্লীল ছবি, নোংরামির দিকে ধাবিত হতে চায়, যেগুলো দেখে সাময়িক মজা পাওয়া যায়, নাকি তার প্রতি ঘৃণা জন্মায়। আমরা অনেকে ইউটিউবে ওয়াজ শুনি, ধর্মীয় আলোচনা শুনতে পছন্দ করি। আপনার মনের কাছে জিজ্ঞাসা করুন, ধর্মীয় বিতর্ক কাঁদা ছোড়াছুড়ি কি ভালো লাগছে, নাকি আল্লাহর ইবাদত ও ইসলামের সৌন্দর্যের কথাগুলো আপনার মনের খোরাক জোগাচ্ছে।

একটি গ্রামের এক দিকে কোনো বুজুর্গ আলেমের মজলিস হচ্ছে, আরেক দিকে নর্তকীর আসর। আপনি কোন দিকে যাবেন। মন কোন দিকে যেতে চায়। মোবাইলেও সেই পরীক্ষার মুখোমুখি করতে পারেন নিজেকে। পবিত্র মাহে রমজান আমাদের সেই পরীক্ষার সম্মুখীন করে। রমজান আমাদের মাঝে সেই বিচারবোধ জাগ্রত করে। হাদিস শরিফে আছে, ‘যে লোক রোজা রেখে মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কাজ ছাড়ল না, দিনের বেলা তার পানাহার ত্যাগ করা আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই’।

অর্থাৎ যারা রোজা রাখে অথচ মিথ্যা কাজ ও মিথ্যা কথা ছাড়ে না, তাদের উপবাস থাকাই সার। রোজার দ্বারা কোনো উপকার তারা পাবে না। বস্তুবাদি চিন্তা থেকে কেউ কেউ বলে থাকে, ‘গেল বছর রোজা রেখেছেন, তার খবর কী পেয়েছেন? হ্যাঁ, খবর তো আছে। রোজা রেখে আমার জীবন যদি শুদ্ধ হয়ে যায়। আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসার চেতনায় যদি আমার জীবন পরিচালিত হয়, তাহলে আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। আর যদি রমজানের আগের ও পরের জীবনে কোনো পার্থক্য না হয়, তাহলে আমার রোজা কবুল হয়নি বলেই ধরে নিতে হবে।

আমরা স্কুলে, মাদ্রাসায়, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। পরীক্ষা দিই, এরপর কতটুকু কী অর্জন করেছি, তার ফলাফল প্রকাশ পায় আমার জ্ঞান ও আচরণে। রমজান থেকে ফায়দা পেতে হলে আমাদেরও সে রকম মনোভাব নিয়ে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। নবীজি ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা যখন রোজা রাখ, তখন রূঢ় ভাষায় কথা বলবে না, গালমন্দ করবে না, পরনিন্দা করবে না। যদি তোমাকে কেউ গালিগালাজ করে, তখন কী হবে? আত্মমর্যাদা রক্ষার অধিকার তো প্রত্যেকের আছে। নবীজি বলেন, এ ক্ষেত্রেও তোমাকে সংযমের পরাকাষ্ঠা দেখাতে হবে। যে তোমার সাথে গায়ে পড়ে ঝগড়া বাঁধাতে চায় তাকে বলতে হবে, ভাই! আমি রোজাদার! রোজা রেখেছি, তাই তোমার রূঢ় ব্যবহারের জবাব দিতে পারব না, দেব না। আমরা যদি এভাবে রমজানের সিয়াম সাধনার সবক নিতে পারি তাহলে আন্দাজ করতে পারব যে, ইনশাআল্লাহ আমাদের রোজা ও ইবাদত কবুল হচ্ছে। আমরা সফলকাম? আমাদের ঈদ পালন সার্থক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত