ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দোয়ায় রহমতের পরশ পাওয়া যায়

দোয়ায় রহমতের পরশ পাওয়া যায়

রাতের আকাশে গ্রহ-নক্ষত্রদের দেখা যায়। জ্যোসনার সাগরে তারা সাঁতার কাটে। আমাদের কাছে সরল নাম তারকা বা তারা। এই তারার মতো করে মানুষ তৈরি করেছে বহু গোলক। উন্নত দেশগুলো বিশেষ কায়দায় এগুলো পৃথিবী থেকে পাঠিয়ে দিয়েছে আকাশ ভেদ করে মহাশূন্যে। এগুলোর নাম ভূ-উপগ্রহ। আজকের যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিশেষ করে নেট-দুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হয় ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে। আপনার আমার মোবাইল সেটে বাইরের দুনিয়ার সংযোগ আসে ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে। মোবাইল কোম্পানিগুলো এই সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করে। যদি ব্রডব্যান্ড অথবা ডাটা কানেকশন না থাকে তাহলে সংযোগ পাওয়া যায় না। বলা হয় নেটওয়ার্ক কানেকশন এরর বা বন্ধ।

পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাবিশ্বের সাথে সংযোগ স্থাপনের আরো নেটওয়ার্ক আছে। যার মধ্যে একটির নাম রহমত। মোবাইলে, টিভির পর্দায় কথা

আর ছবি আসে দূরের দেশ থেকে। কীভাবে আসে! বাতাসের সাথে ভাসমান ইথার এর মাধ্যমে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে চলে আসে মুহূর্তে। মহাবিশ্বে বিরাজমান ইথার এর নাম রহমত। এই রহমতের সংযোগ সবকিছুতে আছে। তার উৎসরণ হয় আল্লাহর আরশ হতে। ইথারে কথাও ছবি ভাসলেও শুধু সেখানেই বেজে ওঠে, দেখা যায়, যেখানে মোবাইল বা টিভি কিংবা রেডিও সেট আছে। আল্লাহর রহমতও সর্বত্র বিরাজমান। তবে জাগ্রত অন্তর তার পরশ লাভে ধন্য হয়। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ পাক বলেন, ‘আমার কারণে, আমার জন্য যার অন্তর ভেঙে গেছে, আমি তার কাছে হাজির আছি’।

কোরআন মজিদে আছে, হে নবী! আমার বান্দারা যখন আপনার কাছে, আমার কথা জানতে চায়, তাদের বলে দিন, আমি তোমাদের একান্ত নিকটেই আছি। তারা যখনই আমাকে ডাকে, তাদের ডাকে আমি সাড়া দেই। কাজেই তাদের উচিত, আমার ডাকে সাড়া দেয়া। আমার ওপর পূর্ণ ঈমান রাখা, তাহলেই তারা পথ হারাবে না। সঠিক পথ খুঁজে পাবে। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৬)।

এই আয়াত থেকে বুঝা গেল, রহমতের সংযোগ পাওয়ার, এমনকি মহান আল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যম আল্লাহকে ডাকা। এই ডাকার ধর্মীয় পরিভাষার নাম দোয়া। অর্থাৎ আল্লাহকে ডাকা বা আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া।

অনেক দানশীল লোক আছেন, তাদের কাছে বারবার চাইতে গেলে রাগ করেন। নানা কথা বলেন, ফিরিয়ে দেন, নিরাশ করেন। কিন্তু একজন মহান সত্তা আছেন, যার কাছে বান্দা যত চায় ততই দেন, বিরক্ত হন না, খুশি হন। এমনকি না চাইলে তিনি রাগ করেন। যারা তার প্রিয়জন তাদের এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন করেন, যাতে তার কাছে চায়, তার জন্য কাঁদে।

মওলানা রুমি একটি উপমা দিয়ে বুঝিয়েছেন এর হাকিকত। কোলের শিশু ঘুমিয়ে আছে দোলনায়। কর্মব্যস্ত মায়ের স্তনে দুধের স্ফুরণ হয়েছে। দু’একবার ঘুরে দেখে মা শিশুর ঘুম ভাঙছে কি না। একসময় মাতৃস্তনে দুধের চাপে যন্ত্রণা অনুভব করে। তখন মা এসে খোঁচা দেয় শিশুর নাকে মুখে। শিশু কেঁদে ওঠে। অমনি মা কোলে নিয়ে মুখে পুরে দেয় স্তন্যবোঁটা। আল্লাহও তার রহমতের আতিশয্যে অনেক সময় প্রিয় বান্দাকে খোঁজে। দেখে সে অন্যকিছু নিয়ে মশগুল। তখন নানা পরিস্থিতির সম্মুখীন করে। সমস্যায় ফেলে কাঁদায়। তখনই বান্দাকে রহমতের দুধের নহর দিয়ে ভরে দেন।

দুনিয়াতে এমন কোনো প্রতিষ্ঠিত মানুষ সহজে খোঁজে পাওয়া যাবে না, যে জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে একসময় কাঁদেনি। কিন্তু যখনই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে, আল্লাহর রহমত এসে হাতছানি দিয়েছে। কিন্তু অকৃতজ্ঞ বান্দা আল্লাহর সেই দয়ার কথা ভুলে যায়। ঈমানের পথ ছেড়ে মনে করে জীবনের প্রতিষ্ঠার পেছনে আল্লাহর দয়ার ভূমিকা নেই। এজন্য তিনি বলেছেন, সে যেন আমার ডাকে সাড়া দেয়, আমার প্রতি ঈমান রাখে তাহলে জীবনের সঠিক পথ খুঁজে পাবে। লা আল্লাহুম ইয়ারশুদুন।

এতো গেল আল্লাহর প্রিয়জনদের কথা। যারা আল্লাহর নাফরমানি করে, আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয় না, মনে করে, আল্লাহর নাফরমানি করেছি, আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে চলার সাহস নেই, যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছি। আমার জীবনে হতাশা, নিরাশা, ধ্বংস ছাড়া আর কিছু নাই। আল্লাহতায়ালা এমন বান্দাদের ডাক দিয়ে বলেন, ‘হে আমার ঐসব বান্দা, যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছ, (অন্যায় পাপাচারের পথে চলতে গিয়ে জীবনের ছন্দ হারিয়ে ফেলেছ) তোমরা আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে নিরাশ হইও না। তোমাদের সদিচ্ছার প্রমাণ দাও, দেখবে যে, আল্লাহ তোমাদের সকল গোনাহ মাফ করে দিয়েছেন’। (সূরা যুমার : আয়াত -৫৩)।

পবিত্র মাহে রমজানে বিশেষ করে রাতের শেষ ভাগে হতাশাগ্রস্ত বান্দাদের ডাক দিয়ে যাচ্ছেন মহান আল্লাহ। তাঁর রহমতের ছোঁয়া পেতে নিজের জীবনকে শুধরে নিতে, অতীতের ভুল ও অবহেলা ঝেড়ে ফেলতে কে কে প্রস্তুত? মন থেকে সাড়া দিয়ে বলুন; প্রভু হে! আমি হাজির, আমি তোমার রহমতের পরশ চাই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত