ঢাকা সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঈদ-আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফিরছে নগরবাসী

ঈদ-আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফিরছে নগরবাসী

চোখে বহুদিন পর আপনজনকে দেখার আকাঙ্ক্ষা, সঙ্গে কাপড় ও খাবারের ব্যাগ। এমন ভাবেই টার্মিনালে বসে অপেক্ষা করছেন বিভিন্ন বয়সের যাত্রীরা। নতুন জামা, নতুন জুতো পরে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফিরছেন লাখো মানুষ। প্রতিদিনই ঢাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে একের পর এক বাস, লঞ্চ ও ট্রেন। স্বজনদের সাথে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে টার্মিনালগুলোতে দেখা যায় নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা ঘরমুখো মানুষের ভিড়। গত কয়েক দিনের তুলোনায় আজ বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভিড় আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদকে সামনে রেখে টিকিটের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে ভোগান্তি বেড়ে যায়, অভিযোগ যাত্রীদের। তবে কাউন্টার কর্তৃপক্ষের সাফাই, বাসের টিকিটের দাম বাড়ানো হয়নি। নির্ধারিত সময়ে বাস নির্দিষ্ট গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে। গতকাল বুধবার বিভিন্ন বাস-লঞ্চ টার্মিনাল এবং ট্রেন স্টেশনগুলোতে দেখা যায় এমন চিত্র।

এরইমধ্যে আসন্ন ঈদুল ফিতরের ট্রেনযাত্রা শুরু হয়েছে। বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগ করে নিতে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে ঘরমুখো মানুষ। যদিও ঈদের ছুটির এখনও কয়েকদিন বাকি, তবে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি এড়াতে নিজে ঢাকায় থেকে পরিবারকে আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। আর তাই রেলস্টেশনে আজ বাড়তি চাপ। তবে, রাজধানীবাসীর ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাড়তি সতর্কতাসহ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত সোমবার ভোর ৬টায় ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে ধূমকেতু এক্সপ্রেস। এ ট্রেনের মাধ্যমেই শুরু হয়েছে এবারের ঈদযাত্রা। এছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করা ট্রেনগুলোও বিশেষ ব্যবস্থায় চলবে। কমলাপুর স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। আর ট্রেনও ছাড়ছে সময়মতো। সকাল ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ১১টি ট্রেন স্টেশন ছেড়ে গেছে। যাত্রী ভোগান্তির চিত্রও নেই। এদিকে রেলওয়ের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধে তিন স্তরে টিকিট যাচাই করা হচ্ছে। ঢাকা, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সব বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ এবং র‍্যাবের সহযোগিতায় সার্বক্ষণিক প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নাশকতা প্রতিরোধে চলন্ত ট্রেনে, স্টেশনে বা রেললাইনে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আরএনবি, জিআরপি ও রেলওয়ে কর্মচারীদের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া নাশকতাকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করবে র‍্যাব, বিজিবি, স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

দুই ছেলে ও স্বামী নিয়ে পাবনা ঈদ করতে যাচ্ছেন এমন একজনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বাড়িতে মা-বাবা আছেন তাদের সঙ্গে ঈদ করতে যাব। বাচ্চারা বছরের শুধু ঈদের সময়ই দাদাবাড়ি যেতে পারে। ওদের খুশির দিকে তাকিয়ে হলেও চেষ্টা করি সবার সাথে একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করার। এতোদিন স্বামী ছুটি পায়নি, তাই এখন যাচ্ছি। এখানে এসে শুনি ২৭-২৮ তারিখের সিট বুকিং হয়ে গেছে। আমরা আগে থেকে বুকিং করিনি বলে ৭০০ টাকার ভাড়া ১১০০ টাকা দিয়ে সিট নিয়েছি। যত ঈদ ঘনিয়ে আসবে ভিড় ততো বাড়বে তাই এবার একটু আগেভাগেই যাচ্ছি।’ বাড়িতে মা, দুই মেয়ের সাথে ঈদ করতে চাদপুর যাচ্ছেন একজন পোশাক শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘এখানে মেসে থেকে একটা ডাইংকে চাকরি করি। ঈদে ২ মেয়ের জন্য জামা কিনেছি, মায়ের আর বউয়ের জন্য শাড়ি কিনেছি। প্রতিবারের মতো এবারও তাদের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাওয়া, নাহলে সংসারের খরচের জন্য এখানেই থাকতে হয়। গতকাল ডিউটি করে ছুটি দিয়েছে তাই আজ রওনা হলাম। এখানে যাত্রী চাপ তেমন দেখছি না মনে হচ্ছে একটু আরামে যেতে পারব। বাসের থেকে লঞ্চে তুলনামূলক ভাড়া একটু কম আর শুয়ে বসে আরামে যাওয়া যায়। কিন্তু এবার লঞ্চে ডেকের ভাড়াই ৬০০ টাকা। এটা আমাদের মতো মানুষের জন্য অনেক বেশি। একটু কম হলে ভালো হতো। লঞ্চ আসার পর সময়মতো লঞ্চ ছাড়ে না। যাত্রী সম্পূর্ণ ভরলে তারপর ছাড়ে। যে গরম পড়েছে, লঞ্চের ভেতরে পুরুষ-মহিলারা গরমে অতিষ্ঠ।’ একটি পরিবহনের ম্যানেজার বলেন, আমাদের অগ্রিম ২৭, ২৮ ও ২৯ তারিখের সিট প্রায় সব বুকিং হয়ে গেছে। আমার সকাল থেকে ৭ ট্রিপে গাড়ি পাবনা কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছাড়ে। ভোরে আর সন্ধ্যায় ইফতারের পর ভিড় থাকে বেশি। মানুষের এখন বেতন ও ছুটি পাওয়া শুরু হয়েছে। কাল-পরশু ভিড় আরও বাড়বে বলে আশা করছি। ঈদের জন্য ভাড়া বাড়ানো হয়নি, গতবারের মতো এবারও একই আছে। বন্দর লঞ্চ ঘাটের সংশ্লিষ্টরা বলেন, আজ বৃহস্পতিবার থেকে অফিস ছুটির পর যাত্রীদের চাপ বাড়বে বলে আশা করা যায়। যাত্রীদের ঈদযাত্রার নিরাপত্তায় কাজ করছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সঙ্গে নৌপুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত