অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে পৌঁছেছেন। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে চায়না সাউদার্নের বিশেষ ফ্লাইটে চীনের হাইনান প্রদেশে পৌঁছেন তিনি। এ সময় চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজমুল ইসলাম ও হাইনান প্রদেশের ভাইস গভর্নর তাকে কিয়োংহাই বো’আও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানানো হয়। প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানিয়েছেন।
জানা গেছে, চীন সফরে ব্যস্ত সময় কাটাবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজকে চীনের হাইনান প্রদেশে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেবেন এবং চীনের নির্বাহী ভাইস প্রিমিয়ার ডিং জুয়েশিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। তিনি হুয়াওয়ের একটি উচ্চ প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে পারেন এবং চীনের একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে পারেন। ২৯ মার্চ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় ড. ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবে। প্রধান উপদেষ্টা ওইদিনই দেশে ফিরবেন। তার সফরকালীন সময়ে বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
চীন থেকে বাংলাদেশ এক থেকে দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার ঘোষণার পাশাপাশি মোংলা বন্দরের আধুনিকায়নে অর্থায়নের বিষয়টিও এই সফরে আলোচনায় আসতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি হচ্ছে অধ্যাপক ইউনূসের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। চীন সফর শেষে ৩ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ড. ইউনূস। ২ থেকে ৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশ প্রতিনিধিত্ব করবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে। তবে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এক নতুন মাত্রা তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা নতুন একটি ফাউন্ডেশন গড়ে যেতে চাই। আর এর ওপর ভিত্তি করেই আগামীদিনে পথ চলবে দুই দেশ।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি সামনে রেখে সামগ্রিক রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হলেও অর্থনৈতিক খাতে সহযোগিতায় অগ্রাধিকার থাকবে। আর চীনের দিক থেকে জোর থাকবে সামগ্রিক রাজনৈতিক সহযোগিতায়। রাজনৈতিক সহযোগিতার কেন্দ্রে থাকবে এক চীন নীতি এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগে (জিডিআই) বাংলাদেশের যুক্ততা।
বাংলাদেশ আর্থিক ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অর্থায়নের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিলেও চীন অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে দুই দেশের সম্পর্কের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে প্রাধান্য দিতে চায় না।
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার দুপুর ১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চায়না সাউদার্নের বিশেষ ফ্লাইটে চীনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।