স্বজনদের সাথে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে টার্মিনালগুলোতে দেখা যায় নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা ঘরমুখো মানুষের ভিড়। যে কারণে সড়ক, নৌ ও রেলপথে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। তবে ঈদ উপলক্ষে যতটা ভিড় হওয়ার কথা ছিল তেমনটা চোখে পড়েনি। সংশ্লিষ্টরা বলছে, সরকারি লম্বা ছুটি থাকায় এবারের ঈদযাত্রা অনেকটাই স্বস্তিদায়ক। অনেকেই তাদের পরিবার পরিজনকে আগে আগে পাঠিয়ে দিয়েছে। আর যারা আছে তারাও অগ্রিম টিকিট কেটে রেখেছে। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভিড় কিছুটা বাড়তে দেখা যায়।
চোখে বহুদিন পর আপনজনকে দেখার আকাঙ্ক্ষা, সঙ্গে কাপড় ও খাবারের ব্যাগ। এমন ভাবেই টার্মিনালে বসে অপেক্ষা করছেন বিভিন্ন বয়সের যাত্রীরা। নতুন জামা, নতুন জুতো পড়ে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফিরছেন লাখো মানুষ। প্রতিদিনই ঢাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে একের পর এক বাস, লঞ্চ ও ট্রেন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলা থেকে প্রায় দেড় কোটি মানুষ নিজ নিজ গন্তব্যে যাত্রা করবে। দেশের এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও তিন থেকে সাড়ে ৩ কোটি মানুষের যাতায়াত হতে পারে। তাদের ৭৫ শতাংশ সড়কপথে, ১৭ শতাংশ নৌপথে এবং ৮ শতাংশ রেলপথে যাতায়াত করবে।
যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করা, সড়কে ডাকাতি-ছিনতাই ও দুর্ঘটনা রোধে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। একই সঙ্গে ঈদযাত্রায় বকশিশের নামে লুটপাট বন্ধে যাত্রীদের নিয়ে শক্তিশালী তদারকি টিম গঠনের দাবিও জানিয়েছে তারা।
সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঈদযাত্রায় বকশিশের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করছে গণপরিবহন ঘিরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট। শুধু রাজধানী ঢাকা ছাড়তেই দেড় কোটি যাত্রীকে বিশাল অঙ্কের এ টাকা গুনতে হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, এবারের ঈদযাত্রা গতবারের চেয়ে একটু স্বস্তিদায়ক হবে। এর কারণ হলো সরকারি লম্বা ছুটি। এছাড়া অন্য কোনো কারণ নেই। অনেকেই লম্বা ছুটি পেয়ে ভাগে ভাগে ঢাকা ছেড়েছে। তাই ভোগান্তিও তুলনামূলক কম হবে। তবে যানজট দুর্ঘটনার শঙ্কা তো আছেই, এর মধ্যেই তো আমাদের যেতে হয়। এ জন্যই আমরা পুরো রমজানব্যাপী সোচ্চার থাকি যাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সতর্ক হয়।
সড়ক পথ: রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের আমেজ থাকলেও টার্মিনালগুলোতে তেমন কোনো ভিড় নেই। কারণ হিসেবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অনলাইনে টিকিট কেনার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বাস কাউন্টারগুলোতে আগের মতো ভিড় নেই। অনেকেই আগেভাগে অনলাইনে ২৭ থেকে ৩০ তারিখের টিকিট বুকিং দিয়ে রেখেছে। তাই কাউন্টারে চাপ কম। তবে গার্মেন্টস ছুটি হলে যাত্রীদের ভিড় আরও বাড়বে বলে তারা মনে করছেন। শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এবার সরকারি লম্বা ছুটি থাকায় ধাপে ধাপে মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। সে কারণে কাউন্টারে তেমন ভিড় নেই। তবে কাল (আজ বৃহস্পতিবার) থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়বে। অনেকেই অফিস করে গাড়ি ধরবেন। ঈদের ঢল বলতে যা বুঝি তা আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) থেকে শুরু হবে।
গ্রামীণ ট্রাভেলস পরিবহনের অফিস এক্সিকিউটিভ বলেন, আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) থেকে ঈদযাত্রার চাপ বাড়বে। কারণ যারা অগ্রিম টিকিট কেটে রেখেছে তারা আসবে। এই মুহূর্তে কেউ কাউন্টারে এসে টিকিট পাবে না, সব টিকিট বুকিং হয়ে গেছে। তবে কেউ যদি ক্যান্সেল করে কিংবা ট্রিপ বাড়ে তা হলে হয়তো পেতে পারে। এদিকে বাস ভাড়া সরকার নির্ধারিত হারেই রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তবে কিছু লোকাল বাস কোম্পানি নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা ‘বকশিশ’ হিসেবে বেশি নিচ্ছে।
রেলপথ: ঈদ উপলক্ষে ট্রেন যাত্রায় গতকাল যাত্রীর চাপ কিছুটা বেশি ছিল। তবে যাত্রী চাপ বেশি হলেও কোনো ধরনের ভোগান্তি ছিল না স্টেশনে। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন বলেন, যাত্রীসেবায় প্রতিবারের মতো এবারও আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। স্টেশনের শুরু থেকে ট্রেনে পৌঁছানো পর্যন্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে টিকিট চেকিং করা হচ্ছে।
নৌপথ: সরেজমিন দেখা গেছে, লঞ্চের কাউন্টারে যাত্রীরা ভিড় জমাচ্ছেন। তবে এ ভিড় চোখে পড়ার মতো নয়। ২৫ রমজান পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত লঞ্চঘাটে লঞ্চ মালিকদের কাঙ্ক্ষিত সেই ভিড়ের দেখা মেলেনি। তবে গত বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়বে বলে জানান নৌসংশ্লিষ্টরা। টিকিটের মূল্য বেশি রাখা হচ্ছে কি না বিষয়টি জানার জন্য কয়েকটি লঞ্চের কাউন্টার ঘুরে সুপারভাইজারদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, একসময় ঈদ এলে টিকিটের ভাড়া অনেক লঞ্চে বাড়ত এ ঘটনা সত্য। তবে এখন মালিকদের স্পষ্ট নির্দেশনা টিকিটের মূল্য বেশি রাখা যাবে না। এমনিতেই মানুষ লঞ্চে যাতায়াতে আগ্রহ হারাচ্ছে তারপর যদি টিকিটের ভাড়া বেশি রাখা হয় তাহলে তো এদিকে মানুষ আসবেই না।
এবারের ঈদযাত্রা নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ঈদযাত্রা ভোগান্তিমুক্ত ও নিরাপদ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর। ঘাট এলাকায় যানজট নিরসনে নেয়া হয়েছে প্রস্তুতি। সার্বিক বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক (ঢাকা নদীবন্দর, সদরঘাট) মুহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, লঞ্চঘাটে যাত্রীদের তেমন ভিড় নেই। এখন বিশেষ লঞ্চ চলছে না। রেগুলার লঞ্চই চলছে। তিনি আরও বলেন, ঘাটে এখন পর্যন্ত অপ্রীতিকর বা অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা ঘটেনি। ঈদযাত্রা ভোগান্তিমুক্ত ও নিরাপদ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর আছে।
তবে যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদকে সামনে রেখে টিকিটের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে ভোগান্তি বেড়ে যায়।