মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক বলেছেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে কার কী ভূমিকা সে বিষয়টি বিবেচনা করে তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ‘রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা’ ও ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে ভাগ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সোজা কথা হচ্ছে, যারা যুদ্ধ করেছে তারা ‘রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা’। আর যারা প্রচার প্রচারণা, শিল্পী, খেলোয়াড়, বিদেশে জনমত তৈরিতে ছিল তারা ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’। মুক্তিযুদ্ধে যার যতটুকু অবদান ও প্রাপ্য তাকে ততটুকু সম্মান দিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, যুদ্ধ করে শহিদ হওয়া, পঙ্গুত্ব বরণ করা অথবা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয়ী হওয়া মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কখনোই সীমান্তের ওপারে গিয়ে আরাম আয়েশে দিনযাপন করা মুক্তিযোদ্ধার অবদান ও স্বীকৃতি এক হতে পারে না। এরকম হওয়া উচিতও নয়। যার যা প্রাপ্য তাকে ততটুকু সম্মান দেয়া আমাদের নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব। তিনি বলেন, অনেকেই জীবনবাজি রেখে রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। শহিদ হয়েছেন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে শত্রুর মোকাবিলা করেছেন। এরা কৃষক শ্রমিক বাংলার গ্রামীণ জনপদের অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত খেটে খাওয়া মানুষ। ওদের স্বদেশপ্রেম, ত্যাগ তিতিক্ষার কারণেই দেশ আজ স্বাধীন হয়েছে।
প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, যুদ্ধের সময় অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন, সেখানে শরণার্থী ক্যাম্পে থেকেছেন। দেশ স্বাধীন হবার পর দেশে ফিরে এসে অনেকেই রাজনৈতিক বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হয়েছেন। সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর এসে দেখা যাচ্ছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিস্তর অভিযোগ। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এ পর্যন্ত ৯০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেগুলো যাছাই বাছাই করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৪০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার তথ্য উপাত্ত এন্ট্রি করা হয়েছে। আরো ৫০ হাজার অভিযোগ এন্ট্রির প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
ফারুক ই আজম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেকেই স্বাধীনবাংলা বেতারে গান গেয়েছেন। অনেকেই বিদেশে ছিলেন। সেখানে অবস্থানকালে জনমত তৈরির প্রচারণা চালিয়েছেন। স্বাধীন বাংলা ফুটবল টিমে ফুটবল খেলেছেন। অনেক ডাক্তার, নার্স হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছেন। এরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হয়েছেন। এখানে সবার ত্যাগ কিন্তু একই রকম নয়। ফলে রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া অন্যদের ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ হিসাবে চিহ্নিত করার বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। এক্ষেত্রে ‘রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা’ ও ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’র শ্রেণি বিভাজন প্রক্রিয়া চলমান। সরকার বিষয়টি যাছাই বাছাই করার পর সবার সঙ্গে আলোচনা ও উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
উপদেষ্টা বলেন, যারা রণাঙ্গনে ২৬ শে মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করেছেন তারা ‘রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা’। অন্যদিকে যারা বিদেশে জনমত তৈরির প্রচারণা চালিয়েছেন, স্বাধীন বাংলা ফুটবল টিমের খেলোয়াড়, স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী, সাংবাদিক, ডাক্তার, নার্স, চিকিৎসা সহকারীসহ যারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রয়েছেন, তাদের ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ হিসাবে স্বীকৃতির বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। আমাদের অনেক বিদেশি বন্ধুও রয়েছে, যারা ওই সময় তাদের দেশে বিশ্বজনমত ও স্বীকৃতি আদায়ে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেছেন। তাদেরকেও আমরা ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচনায় নিতে পারি।