প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ঢাকা ছাড়ছেন বহু মানুষ। চোখে বহুদিন পর আপনজনকে দেখার আকাঙ্ক্ষা। নতুন জামা, নতুন জুতো পড়ে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে প্রতিদিনই তিদিনই বাস-ট্রেন ও লঞ্চ সব জায়গায় ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় থাকছে। ফলে ফাঁকা হতে শুরু করেছে ঢাকা। এদিকে আগের মতো ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি নেই। ঈদে টানা ৯ দিনের ছুটি পাওয়ার কারণে অনেকে ছুটি শুরুর আগেই পরিবারের সদস্যদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। ফলে এবারের ঈদ যাত্রায় রাস্তায় ভোগান্তির সম্ভাবনা অনেক কম। বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সব স্থানেই যাত্রীর চাপ থাকলেও ভোগান্তি নেই। নির্ধারিত সময়েই ট্রেন ছেড়ে গন্তব্যে যাচ্ছে ফলে ঈদে ট্রেনে ভ্রমণে কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে না।
কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীর চাপ রয়েছে তবে ট্রেনের সূচি ঠিক থাকায় সবাই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন। স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। সময়মতো ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেনগুলো। যাত্রী ভোগান্তি নেই। এবারের ঈদযাত্রায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি। তিনি বলেন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছুটিতে নেই, ফলে ঈদে টানা ছুটি থাকলেও নিরাপত্তায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না।
গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় ঘাটে অবস্থান করে এ চিত্র দেখা যায়। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতে বাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলের সঙ্গে বহুসংখ্যক ভেঙে ভেঙে আসা যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। একই চিত্র দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটেও। প্রতিটি লঞ্চেই ছিল ভিড়। এ অবস্থায় ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নিয়ে পার হচ্ছে লঞ্চগুলো। পথে কোনও ভোগান্তি না থাকায় স্বস্তির কথা জানিয়েছেন অধিকাংশ যাত্রী। যাত্রীর চাপ থাকলেও দৌলতদিয়া ঘাটে নেই কোনও যানজট বা ভোগান্তি। ফেরি ও লঞ্চ থেকে যাত্রীরা নেমে চলে যাচ্ছেন গন্তব্যে। ঢাকা থেকে আসা হামিদা আক্তারের সঙ্গে কথা হয় দৌলতদিয়া ৭ নম্বর ফেরি ঘাটে।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েকটি ঈদের মতো এবারও কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই বাড়িতে ফিরছি। পথে যানজট নেই, এমনকি ফেরিঘাটেও ভোগান্তি নেই। জে আর পরিবহনের যাত্রী বকুল খান বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর আগে ফেরিঘাটে ভোগান্তির শেষ ছিল না। এখন সেই ভোগান্তি নেই। সেতু চালুর পর থেকে ঈদে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছি। এবারও একই পরিস্থিতি। প্রাইভেটকারচালক বাচ্চু সরদার বলেন, ‘দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া দুই পাড়ের কোথাও তেমন কোনও ভোগান্তি নেই। ঘাটে আসামাত্রই ২০ মিনিটের মধ্যে ফেরিতে উঠতে পেরেছি। অথচ এক সময় দুই ঘাটে কত ভোগান্তি ছিল। আল্লাহ বাঁচাইছে।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় ১৭টি ফেরি চলাচল করছে জানিয়ে বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক সালাহউদ্দিন বলেন, ‘ভোগান্তি ছাড়াই ফেরিতে উঠে যানবাহন গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। আশা করছি, এবার ভোগান্তি ছাড়াই যাত্রীরা বাড়ি ফিরবেন এবং ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরবেন। গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান জানান, ঘাটের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সকল ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চুরি, ছিনতাই, দালাল ও যানজট কমাতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্বস্তির ঈদযাত্রা উপহার দিতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ সমন্বয় করে কাজ করছে। আশা করছি, সকলে ভালোভাবে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফিরতে পারবেন।
ঈদ যাত্রায় সেই চিরচেনা রূপে ফিরল সদরঘাট : পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে রাজধানী ঢাকা ছেড়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন অনেকেই। ঈদযাত্রার শুরুর দিনগুলোতে জৌলুসহীন সদরঘাটের চিত্র দৃশ্যমান হলেও পঞ্চম দিনের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই বাস ও ট্রেনের পাশাপাশি রাজধানীর সদঘরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে সারা বছরই লঞ্চে যাত্রী খরা চললেও ঈদ এলে একটু আশায় বুক বাঁধেন লঞ্চ মালিকরা। এবারও খরা কাটিয়ে প্রাণ ফেরার অপেক্ষায় লঞ্চযাত্রায়। ঈদুল ফিতরে নৌপথে যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে নেয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি।
ঈদযাত্রা নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট নির্দেশনা, অতিরিক্ত ভাড়া কিংবা বাড়তি যাত্রী নিলেই কেড়ে নেয়া হবে লঞ্চের লাইসেন্স। এদিকে রেলপথেও যাত্রীর চাপ রয়েছে। তবে সকাল থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের ছিল না কোন সিডিউল বিপর্যয়। সঙ্গে রয়েছে ঢোকার পথে চেকিংয়ের ব্যবস্থা। ঈদযাত্রায় ট্রেনের ছাদে যাত্রী ওঠা রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। অনেকে ছাদে ওঠার চেষ্টা করলেও তাদের নামিয়ে দেয়া হচ্ছে।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে : যানবাহনের চাপ বাড়লেও বিড়ম্বনামুক্ত ঈদ যাত্রা: ঈদের ছুটি শুরু হয়ে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকা থেকে নিজ গন্তব্যে ছুটতে শুরু করেছে মানুষ। এ কারণে শুক্রবার ভোর থেকে দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশপথ হিসেবে খ্যাত ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দূর পাল্লার যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে ওই মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল নিয়েও ছুটছে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষ। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকলেও আধুনিক এই মহাসড়কের কোথাও কোনো যানজট বা বিড়ম্বনা নেই বলে জানিয়েছেন ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা। পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোলা প্লাজায় দক্ষিণ বঙ্গের অপেক্ষমাণ যানবাহনগুলো দ্রুত টোল দিয়ে নির্বিঘ্নে পদ্মা সেতু পাড়ি দিচ্ছে।
এদিকে, শুক্রবার ভোর থেকে দুই চাকার বাহন মোটরসাইকেলে করেও অসংখ্য মানুষকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে দেখা গেছে। কিছুটা ঝুঁকি থাকলেও মোটরসাইকেল নিয়েই বরাবরের মতো ছুটতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন অনেকে। পদ্মা সেতু সাইড অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ জানান, এবারে ঈদ যাত্রা এই মহাসড়কে একেবারেই নির্বিঘ্ন। এছাড়া পদ্মা সেতু টোল প্লাজায় দ্রুত টোল আদায়ের জন্য সাতটি নিরবচ্ছিন্ন সচল রাখা হয়েছে।
দূরপাল্লার ঈদযাত্রা সড়কে সিসি ক্যামেরা, থাকছে হাজারের বেশি চেকপোস্ট-টহল টিম: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৩ হাজার ৯৯১ কিলোমিটার দূরপাল্লার সড়ক রয়েছে। এসব পথে ঈদযাত্রা ভোগান্তিমুক্ত ও নিরাপদ করতে সড়কের বিশেষ স্থানগুলোতে সশরীরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহলের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এছাড়া হাজারের বেশি চেকপোস্ট এবং টহল টিম সার্বক্ষণিক মহাসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করবে। তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ঈদ ঘিরে এক হাজার ৪৪৩ জন ডাকাতের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে এবং তার ভিত্তিতে অভিযান চলছে বলেও জানা গেছে।
জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. দেলোয়ার হোসেন মিয়া বলেন, প্রতিবছরই ঈদে আমরা সড়কে নিরাপত্তা পরিকল্পনা করে থাকি। সেই আঙ্গিকে গত বছরও আমাদের যে দুর্বলতা ছিল সেগুলো আমরা চিহ্নিত করেছিলাম। এ বছর আমরা গত বছরের দুর্বলতাগুলো মাথায় রেখেছি। তাছাড়া গত বছর আমরা যেটা দেখেছিলাম তা হলো জেলা পুলিশের সঙ্গে আমাদের সমন্বয় কম ছিল। কিন্তু এবার কোনোরকম সমন্বয়হীনতা থাকবে না বলে আশা করছি। তিনি বলেন, আমাদের সারাদেশে এখন ৩,৯৯১ কিলোমিটার হাইওয়ে। প্রতি কিলোমিটারে ফোর্স দিয়ে আমরা পারি না। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স আমাদের ৭০০ ফোর্স দিয়েছে। তারপরও দেখলাম সংকুলান হয় না। তখন জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছি। এবার ঈদযাত্রায় জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন জায়গায় টহল ডিউটি শিডিউল করেছি। চেকপয়েন্টও সেভাবেই করা হয়েছে।