ঢাকা বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাত পোহালেই খুশির ঈদ

চাঁদ দেখা গেছে সৌদিতে
রাত পোহালেই খুশির ঈদ

দীর্ঘ এক মাস ‘সিয়াম’ সাধনার পর সবার জন্য আনন্দের বারতা নিয়ে আসছে পবিত্র ঈদ। আগামীকাল উদযাপন করা হতে পারে মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। ছোট-বড়, ধনী-গরিব সব মুসলমানের মাঝে এখন বইছে ঈদের আগাম আনন্দের জোয়ার। অনাবিল উৎসবের এ মুহূর্তকে বরণ করে নিতে সর্বত্র চলছে সাজ সাজ রব।

দেশের আকাশে শাওয়াল মাস তথা ঈদের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হবে কাজী নজরুল ইসলামের সেই জনপ্রিয় গান-‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাগিদ।’ ঈদের দিন সকালে ভেদাভেদ ভুলে

সবাই এক কাতারে আদায় করবেন দুই রাকাত নামাজ। এর মধ্য দিয়েই মূলত শুরু হবে ঈদুল ফিতরের আনুষ্ঠানিকতা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা এবং পবিত্র ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণের লক্ষ্যে রোববার সন্ধ্যা ৭টায় (বাদ মাগরিব) ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। বাংলাদেশের আকাশে কোথাও পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা নি¤েœাক্ত টেলিফোন ও ফ্যাক্স নম্বরে অথবা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। টেলিফোন নম্বর : ০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২, ০২-৪১০৫০৯১৬ ও ০২-৪১০৫০৯১৭। ফ্যাক্স নম্বর : ০২-২২৩৩৮৩৩৯৭ ও ০২-৯৫৫৫৯৫১। তবে আজ চাঁদ দেখা যাক বা না যাক, সোমবার ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছেন সারা দেশের মানুষ। সাধ্যমতো সবার নতুন জামা-কাপড় কেনার পর্বও প্রায় শেষ। যাদের বাকি আছে, তারাও আজকের মধ্যে সারবেন কেনাকাটা। কাপড়-চোপড়ের পাশাপাশি অতিথি আপ্যায়নের জন্য সেমাই-চিনিসহ নানা পদের খাবারসামগ্রী কেনার কাজও সবাই সেরে নিচ্ছেন সুযোগমতো। গরিবদের ঈদ আনন্দ নিশ্চিত করতে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী সামর্থ্যবান মুসলমানরা ঈদের নামাজের আগেই ফিতরা আদায় করবেন। এছাড়া সুবিধাজনক সময়ে ধনবানরা আদায় করবেন জাকাত। ঈদ উপলক্ষে আজ থেকে তিন দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। তবে দুদিন আগে থেকেই শুক্র ও শনিবার সরকারি কর্মজীবীরা সাপ্তাহিক ছুটি পেয়েছেন। কর্মস্থল ছেড়ে তাই আপনজনদের সঙ্গে ঈদ করতে অনেকেই এরই মধ্যে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছেন আবার অনেকেই রওনা দেবেন। বাস, ট্রেন, লঞ্চ বা ভিন্ন কোনো বাহনে যাতায়াতে কম-বেশি দুর্ভোগের শিকার হলেও তা যেন মলিন হয়ে যাচ্ছে আনন্দের জোয়ারে। ঈদ মঙ্গলবার হলে সরকারি ছুটি এক দিন বাড়বে। সে হিসেবে ঈদের প্রস্তুতির জন্য বাড়তি একদিন সময় পাবেন সবাই। পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহসহ দেশের সব ঈদগাহ ও বড় বড় মসজিদে নেয়া হয়েছে বিশেষ প্রস্তুতি। নানা রঙ, পতাকা ও ব্যানার- ফেস্টুনে সাজানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকা। সাজসজ্জার কমতি নেই বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ভবন ও বাসাবাড়িতেও।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস বাণীতে দেশবাসী ও বিশ্বমুসলিমের প্রতি ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ঈদুল ফিতর মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা ও সংযম পালনের পর অপার খুশি আর আনন্দের বারতা নিয়ে আমাদের মাঝে আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে, গ্রামগঞ্জে, সারাবাংলায়, সারা বিশ্বে। এ দিন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এক কাতারে শামিল হন এবং ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেন। ঈদ সবার মধ্যে গড়ে তোলে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি আর ঐক্যের বন্ধন। ঈদুল ফিতরের শিক্ষা সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক, গড়ে উঠুক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ- এ প্রত্যাশা করি। প্রধান উপদেষ্টা বাণীতে বলেন, ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি ভুলে মানুষ সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জীবনে আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। ঈদের আনন্দ আমাদের সবার। তিনি বলেন, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন পরিব্যাপ্তি লাভ করুক এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা। হাসি-খুশি ও ঈদের অনাবিল আনন্দে প্রতিটি মানুষের জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠুক। বিশ্বের সব মানুষের সুখ-শান্তি, কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি হোক আজকের দিনে আমি মহান আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদের দিন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবনে এবং সশস্ত্র বাহিনীর সব স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক লেখা ব্যানার প্রদর্শন করা হবে। এছাড়া পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাতে নির্দিষ্ট সরকারি ভবনসমূহ ও সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে আলোকসজ্জা করা হবে।

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদিতে ঈদ আজ

ইসলামের পবিত্রতম স্থান সৌদি আরবে ১৪৪৬ হিজরি সনের শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে দেশটিতে আজ রোববার উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। দুই মসজিদভিত্তিক ওয়েবসাইট ইনসাইড দ্য হারামাইন গতকাল শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে। চাঁদ দেখা যাওয়ায় এবার দেশটির মানুষ ২৯টি রোজা রাখলেন। সৌদি আরবের বড় দুই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সুদাইর ও তুমাইরে সবচেয়ে বড় প্রস্তুতি নেয়া হয়। সেখানে সন্ধ্যা ৬টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদের চাঁদের অনুসন্ধান শুরু হয়। এর আগে সুদাইর পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে সৌদির প্রধান জ্যোতির্বিদ আব্দুল্লাহ আল-খুদাইরি বলেন, ‘সুদাইর পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে আজ ৬টা ১২ মিনিটে সূর্যাস্ত যাবে। এবং অর্ধচন্দ্র সূর্যাস্তের ৮ মিনিট পর অস্ত যাবে। দৃশ্যমানতার সময় দীর্ঘ অথবা ছোট হোক, যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে তাহলে চাঁদ দেখা সম্ভব।’ পরবর্তীতে আব্দুল্লাহ আল-আমার নামে অপর এক জ্যোতির্বিদ বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা করছি সুদাইরে আজ আমরা চাঁদ দেখতে পাব।’ এর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্র জানিয়েছিল, ২৯ মার্চ আরব ও ইসলামিক বিশ্বে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখতে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ ওইদিন সূর্যাস্তের আগে চাঁদ অস্ত যাবে এবং চাঁদ সূর্যের সংযোগ ঘটবে সূর্যাস্তের পর।

খালি চোখে, টেলিস্কোপে অথবা অন্য কোনো উপায়ে আগামী ২৯ মার্চ শাওয়াল বা ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা ‘সম্ভব নয়’ বলেও দাবি করেছিল সংস্থাটি। যেসব দেশ শুধুমাত্র চাঁদ দেখে ঈদ ও রমজানের তারিখ নির্ধারণ করে সেসব দেশে এবারের রমজান মাসটি ৩০ দিনের হতে যাচ্ছে। যার অর্থ মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি এবং ইসলামিক বিশ্বে ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর পালিত হবে। গত ২০ মার্চ এমনই তথ্য জানিয়েছিল আমিরাতের জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্র।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত