ঢাকা সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নির্বাচনি ঐক্যে জোর ইসলামি দলগুলোর

নির্বাচনি ঐক্যে জোর ইসলামি দলগুলোর

স্বচ্ছ ভোটার তালিকা করে ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই নির্বাচনে অংশ নিতে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো নানারকম হিসাব-নিকাশে বসেছে। কারণ, আগামীতে সব ইসলামী দল ঐক্যের ভিত্তিতে এক প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াতে চায়।

জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ও গুছানো দল জামায়াতে ইসলামী। দলটির সঙ্গে অন্যান্য ইসলামী দল যোগ দেবে, নাকি এককভাবে প্রার্থী দেবে তা কিছুদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে। ফলে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও হেফাজতে ইসলামসহ প্রায় পঞ্চশের কাছাকাছি ইসলামী দল নিজেদের মধ্যে ঐক্যের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ঐক্যের ভিত্তিতে আগামীতে নির্বাচনি মাঠে থাকতে আলোচনা চলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত নির্বাচনগুলোয় ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। তবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর ইসলামী দলগুলোর মধ্যে কিছুটা দূরত্ব কমেছে। তাদের ঐকমত্যের আশাবাদ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

জামায়াতে ইসলামী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আন্দোলনের আগেই জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দূরত্বও তৈরি হয়। এমন অবস্থায় জামায়াতে ইসলামী অন্যান্য ইসলামী দলের সঙ্গে ঐক্যের কথা ভাবছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অতীতের ভেদাভেদ ভুলে ইসলামী দলগুলো এক প্ল্যাটফর্মে আসার চেষ্টা করছে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। তাদের লক্ষ্য, সারা দেশের ভোটকেন্দ্রে ইসলামী দলগুলোর একটি বাক্স থাকবে। এমন অবস্থায় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান জানুয়ারিতে বরিশালে চরমোনাই পীরের দরবারে গিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে রাজনীতির পটপরিবর্তনের নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। সেই থেকে ইসলামী দলগুলোর ঐক্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ইসলামী দলগুলো ভোটকেন্দ্রে একটি বাক্স পাঠানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থাকলেও এই ঘটনা নতুন পরিস্থিতিতে দল দুটির মধ্যে দূরত্ব ঘোচার আভাস বলে মনে করছেন অনেকে।

রাজনীতিতে জামায়াতসহ কয়েকটি ইসলামী দলের দৃঢ় একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে; তারা পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্বাচনি মাঠে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, তারা চাইছেন, আগামী নির্বাচনে ইসলামভিত্তিক দলগুলোর যেন একটি বাক্স থাকে। তার ভাষ্য, ‘নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য ভুলে আমরা চাইছি আমাদের ভোট যেন সামনে আর ভাগাভাগি না হয়।’

তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলামসহ অনেকগুলো ইসলামী দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা চাই, দলগুলোর ভোট এক বাক্সেই থাকুক। আমাদের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে দূরত্ব বা মতপার্থক্য আছে এটি সত্যি। কিন্তু আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে একটি নির্বাচনি জোট বা সমঝোতায় আমরা উপনীত হতে পারব।’

সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি বলেই তারা এখন আশা করছেন, সামনের নির্বাচনে মানুষ ইসলামভিত্তিক দলগুলোর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। এ কারণেই আমরা এক জায়গায় আসতে চাইছি। ইস্যুভিত্তিক পার্থক্য আছে ও থাকবে। কিন্তু নির্বাচন বড় জায়গা; সেখানে যাতে আমাদের একটিই বাক্স থাকে সেজন্যই এখন কাজ চলছে। আশা করি, আমরা সফল হতে পারব।’

এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ইসলামী দলগুলোর মধ্যে আলোচনার প্রক্রিয়া চলছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেই এর একটি রূপ দেখা যাবে। ঐক্য ও নির্বাচনি জোটবিষয়ক আলোচনায় আছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামভুক্ত নেতাদের কয়েকটি রাজনৈতিক দল। হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নেজামে ইসলাম পার্টির যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদীও জানিয়েছেন, ইসলামি দলগুলোর ঐক্য প্রক্রিয়া অনেকটাই অগ্রসর হয়েছে। তবে, বরিশালে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের আমিরের সাক্ষাৎ নিতান্তই সৌজন্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলছেন, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ এই আভাসই দিয়েছে যে, তাদের মধ্যে দূরত্ব কমেছে। মনে হচ্ছে, তারা একটি নির্বাচনি ঐক্যের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত তারা সেটি পারেন কি না।

বাংলাদেশে ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রকাশ্যে চলে এসেছে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমদ আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামী দলগুলো একত্রে কাজ করার জন্য আলোচনা চলছে। আমরা সবাই যদি এক জায়গায় পৌঁছাতে পারি সেটি আমাদের সংগঠন ও দেশের জন্য ভালো হবে। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, এতে সাড়াও ভালো দেখছি। সমঝোতার ভিত্তিতে একত্রে থাকার চেষ্টা করছি।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দ আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, নতুন বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইসলামিক ঘরনার রাজনৈতিক দলগুলো একীভূত হোক। একসঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক এবং একক প্রার্থী রেখে ইসলামী দলগুলোর ভোটের বাক্স এক হোক। ঐক্যের ব্যাপারে ইসলামী দলগুলোর আগ্রহ রয়েছে, এটি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা সেই আগ্রহকে সাধুবাদ জানাই। এই আবেদনে সাড়া দিতে আমরাও প্রস্তুত আছি। সেই লক্ষ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আলোচনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি আরও বলেন, সব ইসলামী দল বলতে- এখানে কারা কারা ইসলামী দল, কার কার সঙ্গে ঐক্য হচ্ছে, এটি এখনও বলার সময় আসেনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত