ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চার লেন সড়কের কাজ আগামী বছর শুরু

চার লেন সড়কের কাজ আগামী বছর শুরু

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। গেল তিন দিনে চট্টগ্রাম মহাসড়কের লোহাগাড়া জাঙ্গালিয়া ঢালা নামক স্থানে দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ ১৫ জন নিহত হয়েছে। পৃথক ঘটনায় অন্তত আহত হয়েছেন আরও ৩০ জন। টানা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনায় কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নতিকরণের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছে সর্বমহলের মানুষ।

গতকাল বৃহস্পতিবার চার লেনের সড়কের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামি এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) নেতৃবৃন্দ।

অন্যদিকে কক্সবাজার সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার তথ্য বলছে, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকা অর্থায়নে ১৪৮ কিলোমিটার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরে এ কাজ শেষ হলে প্রকল্প প্রস্তুত করে দরপত্র আহ্বান করা হবে। তার মতে, আগামী ২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে চার লেন সড়ক উন্নতির কাজ শুরু হতে পারে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার দেশের ব্যস্ততম মহাসড়কের একটি। এর বেশিরভাগ অংশের প্রশস্থতা মাত্র ১৮-৩৪ ফুট। ফলে দূরপাল্লার গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। ১৪৮ কিলোমিটার পথ বাসে যেতে সময় লাগে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টা। অতিরিক্ত বাঁক, সাইড রোড থেকে যখন-তখন গাড়ি মহাসড়কে উঠে আসার কারণে সড়কটি হয়ে উঠেছে দুর্ঘটনাপ্রবণ। পলিথিন ছাড়া লবণ পরিবহনের কারণে সড়ক পিচ্ছিল হওয়ায় এটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেন করার দাবিতে ১৬ ফেব্রুয়ারি লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি দেন ছাত্র-জনতা। আবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে মহাসড়কের হাশমতের দোকান, ঠাকুরদিঘি, উপজেলার পদুয়া, লোহাগাড়া শহর, আধুনগর, হাজী রাস্তা, চুনতি, জাঙ্গালিয়া এলাকায় অনেক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। গাড়ির আকারের তুলনায় সড়কটি খুবই সরু, দুটি স্লিপার কোচ পাস হতে গেলে একটি রিকশা যাওয়ারও জায়গা থাকে না। শুষ্ক মৌসুমে দক্ষিণ অঞ্চল থেকে ট্রাকে কিংবা কাভার্ড ভ্যানে লবণ পরিবহন হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ট্রাক থেকে নির্গত পানিতে পিচ্ছিল হয়ে যায় সড়ক। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বাইকার এবং পিকনিকের বাস এ সড়কের চরিত্র বুঝতে পারে না। অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ হারান চালক। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনায় ঝরে যায় তাজা প্রাণ। অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানি থেকে বাঁচতে এবং বাঁচাতে নিরাপদ সড়ক কিংবা চার লেনের সড়কের দাবি জানান ছাত্র-জনতা।

বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেল-২ এর মোটরযান পরিদর্শক মো. রেজোয়ান শাহ বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরু এ সড়কে আছে বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক বাঁক। সড়কটি চার লেন করা হলে দুর্ঘটনা কমে আসত। গত বুধবার সড়ক দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ওই সময় ৬টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মতে, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক, দুই পাশে ঘন বনাঞ্চল, লবণবাহী ট্রাক থেকে নিঃসৃত পানি, অপ্রশস্ত সড়ক, জাঙ্গালিয়ার সড়ক ঢালু এবং দূরপাল্লার গাড়িচালকদের অভিজ্ঞতা নেই এ সড়কে চলাচল।

লোহাগাড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের টিম লিডার রাখাল চন্দ্র রুদ্র জানান, ঈদের ছুটিতে তিন দিনে মহাসড়কের এ অংশে তিনটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার জন্য আমরা বেশকিছু কারণ চিহ্নিত করেছি। লবণপানি সড়কে পড়ে পিচ্ছিল হওয়া, বিপজ্জনক বাঁক, অন্য জেলার চালকদের এ সড়কে গাড়ি চালনোর অভিজ্ঞতা না থাকা অন্যতম কারণ। কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, ১৪৮ কিলোমিটার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরে এ কাজ শেষ হলে প্রকল্প প্রস্তুত করে দরপত্র আহ্বান করা হবে। এদিকে চট্টগ্রাম কক্সবাজার ৬ লেনের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে লোহাগাড়া বিএনপির নেতৃবৃন্দ। এসময় তারা পর্যটনের শহর কক্সবাজার ৬ লেনের পাশাপাশি মাঝখানে ডিভাইড এবং ওয়ান ভাই রাস্তার দাবি জানান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত