অবশেষে দায়িত্ব নেয়ার ৮ মাস পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত সৌহার্দ্যপূর্ণ এই বৈঠকে দুই দেশের সরকারপ্রধানই নিজ নিজ দেশের পক্ষে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করেন। দুই নেতাই প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদারের ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। এর মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাসহ কয়েকটি ইস্যু তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষার কথা জানান। এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ, ভারতে বসে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক কথাবার্তা, সীমান্ত হত্যা, দুই দেশের মধ্যে গঙ্গা ও তিস্তা পানি চুক্তি নিয়ে কথা বলেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে দুই প্রতিবেশী নেতার মধ্যে আধা ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। বৈঠকে দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে ব্রিফ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তিনি (মোদি) জোর দিয়ে বলেন, ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে জনকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বাস করে। নরেন্দ্র মোদি দীর্ঘ সময় ধরে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন, যা উভয় দেশের জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা দিয়েছে। এই চেতনায়, তিনি আবারও বাস্তবতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে ভারতের আকাঙ্ক্ষার ওপর জোর দেন।
বিক্রম মিশ্রি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আরও আহ্বান জানিয়েছেন, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে যে কোনো বক্তব্য এড়িয়ে চলাই ভালো। সীমান্তে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং অবৈধ সীমান্ত পারাপার প্রতিরোধ বিশেষ করে রাতে, সীমান্ত স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা প্রয়োজন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশে হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সম্পর্কে ভারতের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশ সরকার তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নৃশংসতার সব ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্যও জোর দিয়েছেন।
শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বিক্রম মিশ্রি বলেন, বাংলাদেশ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক পত্র দিয়েছে। তবে হাসিনার প্রত্যর্পণের ব্যাপারে এ মুহূর্তে এরচেয়ে বেশি বলা তার জন্য ঠিক হবে না বলে জানান ভারতীয় কূটনীতিক।
এদিকে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় তুলে ধরা হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল শুক্রবার দুপুরে ওই বৈঠকের পর এ তথ্য জানিয়েছেন। শফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি অত্যন্ত গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ হয়েছে। আমাদের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।’ প্রেস সচিব বলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ এবং ভারতে বসে তিনি উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, এসব বিষয় বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া সীমান্তে হত্যা, তিস্তা নদীর পানি বণ্টনসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই সময় থেকেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতনের অভিযোগ তুলে আসছে নয়াদিল্লি। যেটির সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। অপরদিকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে তাকে ফেরত চেয়ে আসছে বাংলাদেশ। যা গতকালের বৈঠকে আবারও তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা।