পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি কাটিয়ে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষ। তবে ঢাকায় নেই গাড়ির চাপ এবং চিরচেনা যানজট। নির্বিঘ্নে সড়কে চলাচল করছে গাড়ি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সরেজমিন সড়কে অল্প পরিসরে যানবাহন চলতে দেখা যায়। এরমধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তিগত পরিবহন। রাজধানীর অন্যতম যানজটের এলাকা শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব মোড়, নীলক্ষেত ও ফার্মগেট মোড় ঘুরে দেখা যায়, সড়কে গাড়ির সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় কম। গণপরিবহন কম, যাত্রীও কম। হেলপার ডেকেও যাত্রী মেলাতে পারছেন না। তাদের আশা, দিন দুয়েকের মধ্যে আগের রূপে ফিরবে তিলোত্তমা নগরী ঢাকা। দীর্ঘ সময় ধরে সাভার থেকে সদরঘাটের রুটে সাভার পরিবহনের গাড়ি চালান আকবর হোসেন। সড়কের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ (গতকাল শুক্রবার) ভোর থেকে রাজধানীমুখী মানুষের চাপ কিছুটা ছিল। কেননা ছুটি কাটিয়ে ফিরতে শুরু করেছেন ঈদ করতে গ্রামে যাওয়া নগরবাসী। আগামী কয়েক দিন আসা-যাওয়ার এই ধারা অব্যাহত থাকবে। গতকাল সকালে ঢাকায় ফিরেছেন হানিফ পরিবহনের চালক সবুজ মিয়া। তিনি বলেন, এবার ঈদযাত্রায় সড়কে যানজট ছিল না। যাত্রী পরিবহন করে খুবই ভালো লাগছে। যাত্রীরাও সন্তুষ্ট। এখন ফেরার পথেও সড়কে যানজট নেই। আজ যারা ঢাকা ফিরেছেন, তাদের অধিকাংশ চাকরিজীবী। আগামীকাল শনিবার বা পরদিন রোববার ঢাকা ফেরা যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে।
ঈদের ছুটি কাটিয়ে বরিশাল থেকে ঢাকায় এসেছেন বেসরকারি ব্যাংকের চাকরিজীবী শহিদুল ইসলাম। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালো সময় কাটিয়েছি। কর্মের তাগিদে সবাইকে ছেড়ে ঢাকায় আসায় মন খারাপ লাগছে। আরও কিছুদিন থাকতে পারলে আরও ভালো লাগত। এবার ঈদে টানা নয় দিনের ছুটি পেয়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। আবার বেসরকারি চাকরিজীবীদের অনেকে গড়ে চার দিন ছুটি পেয়েছেন। তারা আজ শুক্রবার (৪ এপ্রিল) থেকে ঢাকায় ফেরা শুরু করেছেন। এরমধ্যে যাদের ছুটি আরও কম, তাদের অনেকে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। এবার তাদের যাতায়াতে যানজটসহ অন্য কোনো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না।
উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকার প্রবেশ পথ গাবতলি বাস টার্মিনাল। এই টার্নিমাল ঘুরে দেখা যায়, বাস টার্মিনালে চিরচেনা সেই ভিড় নেই। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বাস থেকে যাত্রীরা স্বাভাবিকভাবে নামছে। কারো কোনো অভিযোগ নেই। বাসের ট্রিপ শেষে অলস সময় পার করছে পরিবহন শ্রমিকরা।
দিনাজপুর থেকে আসা উজ্জ্বল হোসেন নামের একজন যাত্রী বলেন, ঈদের আগেই ফিরতি টিকিট কাটা ছিল। কোনো ভোগান্তি ছাড়াই আজ ঢাকা আসলাম। আগামীকাল থেকে আমার অফিস। ভেবেছিলাম ঢাকা আসতে রাত হয়ে যাবে কিন্তু রাস্তাঘাটে কোনো যানজট ছিল না তাই আগেই পৌঁছালাম।
আলমগীর হোসেন পুরো পরিবারসহ রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসলেন। তিনি বলেন, এবারের ঈদযাত্রা গত ১০ বছরের চেয়ে ভালো। কোনো ভোগান্তি ও অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়নি। বাস সময়মতো ছেড়েছে। বাসের ভিতরেও সিটের অতিরিক্ত কোনো যাত্রী ছিল না। সব মিলিয়ে এমন ঈদযাত্রা আগে কখনওই ছিল না। দূরপাল্লার বাসে যাত্রী থাকলেও ঢাকার অভ্যন্তরীণ গণপরিবহনে সেভাবে যাত্রী নেই। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে না যাওয়া বিভিন্ন গণপরিবহন স্টাফদের মন বেজার। উত্তরা, এয়ারপোর্ট, মিরপুর, গাবতলি, নবীনগর ও চন্দ্রা রুটের বাসে সেভাবে যাত্রী নেই। এছাড়া সিএনজি ও রিকশা ফাঁকা ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। গাবতলি থেকে এয়ারপোর্ট রুটের বাসচালক আজিজুল হক বলেন, ঈদের দিন থেকে আজ পর্যন্ত গাড়ির জমা ঠিকমতো দিতে পারিনি। যেমনটা আশা করেছিলাম তার অর্ধেক ভাড়া হয়েছে। অনেক ট্রিপ হয়েছে; কোনো রকম তেলের টাকা উঠেছে। এভাবে গাড়ি চালালে নিজের পেটও চলবে না। মালিককে আর কি টাকা দিব। মিরপুর-১০ এ কথা হয় সিএনজি চালক রহমান আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদে বাড়ি যাওয়া হয়নি। তাই ঈদের দিন থেকে রাস্তায়ই আছি। তবে ভাড়া হচ্ছে না। ঢাকায় ঈদ করা ব্যাচেলর সাজিদ আহমেদ একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, এবার ঈদে বাড়ি যাইনি। তবে ফাঁকা ঢাকায় ঘুরতে ভালোই লাগছে। কোনো যানজট নেই। আরামে যেখানে ইচ্ছা যাওয়া যাচ্ছে। আগের এক ঘণ্টার পথ এখন ২০ মিনিটে যাওয়া যাচ্ছে।